শুক্রবার, ৬ মে, ২০১৬

সেটাই হোক আমাদের কাম্য

পরলোকে যদি মানুষের ইহলোকের কৃতকর্ম অনুযায়ী স্বর্গ-নরক নির্ধারিত হয়ে থাকে, তবে একথাটি নিশ্চিত করে বলা চলে মানুষের পালিত ধর্ম কখনোই মানুষের জন্য স্বর্গ-নরক নিশ্চিত করে না বরং মানুষের ভিতরকার সৎ বোধশক্তি এবং সত্যকর্মই তার নির্ধারক। জীবন-জগতে মানবিকবোধ সম্পন্ন হওয়াটাই তার জন্য সবচেয়ে জরুরী। এই বিশ্বাসটি আমার মনে এতদিন কেবল স্থির করে রেখে ছিলাম। আমি কিছুটা ঘরকুনে নির্লিপ্ত, তাই জানার গন্ডি অতটা প্রসস্ত না হওয়ায় এবং নিজের জানার গন্ডিবদ্ধ দুনিয়া অনেক ছোট হওয়াই অনেককিছু বলার ইচ্ছে থাকলেও সাহস ছিল না। নিজের আত্মিক শক্তির উপর বিশ্বাস এখনও অতটা স্থাপন করতে সমর্থ হইনি বলেও কিছুটা নিজের সাথে নিজেকে আড়াল করছিলাম।

একটা বিষয় আজ আমার চোখ স্পষ্ট করে দিয়েছে, যে স্পষ্টতার জন্য আমি চিরকালের জন্য গান্ধিজীর কাছে চিরঋণী হয়ে গেলাম। ধর্মান্তরিত হবার বিষয়টিকে আমি কখনও স্বাভাবিক চোখে দেখিনি আজও দেখি না। আমার বাল্য বন্ধু মথি ফারনানডেজ যখন ধর্মান্তরিত হয়ে আব্দুল্লা হল- এবং সে যখন তার মাকে মায়ের অনিচ্ছার স্বত্ত্বেও তার মতাদর্শে আনতে বাধ্য করল, তখন বিষয়টি শুনে আমি খুবই হতবাক হলাম এবং অন্তরে ব্যথা অনুভব করলাম। কিন্তু সবচেয়ে বেশী কষ্ট পেলাম যখন কোন এক আড্ডার সময় সে আমার অন্য বন্ধুদের বলল, তারা আমাকে দাওয়াত করেছে কিনা? আমি জানি ওর ধর্মান্তরিতের পিছনে আমার কয়েকজন বন্ধু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত কিন্তু যখন মথি আমার অন্যবন্ধুদের এমন প্রশ্ন করল, তখন তারা তাকে ইঙ্গিত করল বিষয়টি এড়িয়ে যেতে। কারন আমার বন্ধুদের কয়েকজন আমাকে এ ব্যাপারে কিছুটা জানে। আসলে আমার ভেতরে তখন থেকে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল, সত্যিকারে ধর্মান্তরিত হবার ফলেই কি একজন মানুষের বেহেস্ত নিশ্চিত হয়ে গেল? তার মায়ের অনিচ্ছার স্বত্ত্বেও যখন একমাত্র সন্তানের ভরশায় নিজের মেয়ে-আত্মিয়-পরশিসহ সকলের সাথে সম্পর্ক ছেদ করে একা নিঃসঙ্গ জীবন বেচে নিলেন, সে তার ভিতরকার যন্ত্রণার চাপায় বন্ধুর কি বেহেস্ত নিশ্চিতের আধো সম্ভবনা আছে? আমার জ্ঞান পরিমীত তাই আমার পক্ষে সত্য-মিথ্যা যাচাই কিংবা নিরূপণ নিশ্চিত কঠিন। কিন্তু নিজের ভেতরকার প্রশ্ন যেটা আমাকে নিত্য দিন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সেটা?

ধর্মান্তর বিষয়ে এনড্রুজ গান্ধীজিকে বললেন- "আন্তরিকভাবে যদি কেউ একথা বলেন, তিনি ভালো খ্রিস্টান হতে চান, আমি তার জবাবে বলব, ‍‍"আপনি যেন তা-ই হন।" উত্তরে গান্ধীজি বলেন- "কিন্তু আপনি কি এই কথা উপলব্ধি করছেন না যে আপনি তাকে একটা সুযোগ পর্যন্ত দিচ্ছেন না? আপনি তাকে একবার জেরা করেও দেখছেন না। কোন খ্রিস্টান যদি আমার কাছে এসে বলেন যে তিনি ভগবদগীতা পাঠ করে মুগ্ধ হয়েছেন এবং তাই নিজেকে হিন্দু বলে ঘোষনা করতে চান, আমি তাকে বলব, "না, তার প্রয়োজন নেই। কারণ ভগবদগীতাতে যা পেয়েছেন, বাইবেলেও তাই পাবেন। আপনি এখনও বাইবেল থেকে এটা খুজে নেবার চেষ্টা করেননি। এই প্রচেষ্টায় লেগে পড়ৃন এবং আদর্শ খ্রিস্টান হোন।" গান্ধীজী আরও বলেন- "পারস্পরিক সহনশীলতা না সর্বধর্মে সমভাব, এ-দুয়ের কোনটা গ্রহন করবেন? তা বিবেচনা করে দেখুন।"

হ্যা; যদি সব ধর্মে্র্ সারবস্তু হয় স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ, তবে আমরা সহনশীল হয়ে নিজ-নিজ ধর্মপণ্থায় কেন এগিয়ে যাবার প্রয়াস করছি না। ধর্মান্তরিত হয়ে আমি মনপ্রাণ ফেলে ধর্মে অনুরক্ত হচ্ছি, যেখানে আমাকে আমার নিজ ধর্ম সঠিক লালন-পালনের মাধ্যমে আমার লক্ষ্যে পৌছানে সম্ভব।

বন্ধুদের কাউকে আহত করার উদ্দেশ্যে আমার এই পোষ্ট নয়, বরং আমরা যেন সম্প্রীতি বজায় রেখে নিজেদের অভিষ্ট লক্ষ্যে যেতে আগ্রহী হই, সেটাই হোক আমাদের কাম্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন