শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সুখী হতে গেলে

পরস্পরকে নিয়ে সুখী হতে গেলে জীবনের সঙ্গীটিকে নিয়ে সমগতিতে দৌড়ানোর মানষিকতা যোগাতে হয় অথবা যোগানোর আগ্রহ দেখাতে হয়। যদি পরস্পরের সমগতিতে দৌড়ানোর মানষিকতা না থাকে- তবে এগিয়ে চলা সঙ্গীকে বারবার পিছনে ফিরে ক্লান্ত-রুষ্ট চিত্তে একসময় থেমে পড়তে হয় আর পিছনের সঙ্গীটিকে অভিমান-ভীতি নিয়ে অন্যকারও সঙ্গ কামনা করতে হয়।

মুক্তো ছড়ানো শহরে

মুক্তো ছড়ানো শহরে
মুক্তোর আলোয় যত না আঁধার পুরোয়
তারচেয়ে বেশি ঝিনুকের স্বপ্ন পুরোয়!

অনুধাবন

মনুষ্য হৃদয় আহত ব্যাকুলের আত্মচিৎকার ততক্ষন অনুধাবনে ব্যর্থ, যতক্ষন সে আহত নয় অথবা আহত পরিবেশের মুখোমুখি নয়!

(গতকাল রাতে পাশের একটা বিল্ডিংয়ে দূর থেকে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড দেখলাম। ছোটবেলায় মা বলতেন- "সবকিছুতে তবু কিছু পাই, আগুনে পুড়লে শুধু ছাই।" ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে লোকমুখে শুনলাম, দু'জন নাকি দগ্ধ হয়েছেন। আজ সকালে অফিসে আসছিলাম ক্ষতিগ্রস্থ স্থানের পাশ দিয়ে। পথে একদল তরুনী গার্মেন্টস কর্মী যারা কারখানায় কাজে আসার পথে ক্ষতিগ্রস্থ স্থান দেখতে যাচ্ছে। পথে অন্য এক তরুনীকে পেয়ে তাকেও ওদের সাথে যেতে বললে, তরুনী কোথায় যাবে জানতে চাইল, তখন কয়েকজন সমসুরে গেয়ে উঠে- "জ্বালাইয়া গেলা মনের আগুন নিবাইয়া গেলা না।" ওখানে, মানে গতকাল আগুন লাগছিল যে ওখানে। এরপর হাসি ঠাট্টায় তাদের এগিয়ে চলা।)

বোধ

ভালো থাকতে চাইলে সমষ্টিক মতামতকে গুরুত্ব দিতে হয়। ব্যক্তিমতকে গুরুত্ববহ রাখতে চাইলে, হয় তাকে সমষ্টির প্রভাবক হতে হয়, নতুবা তার মতামত সঠিক বিশ্লেষন ও সুন্দর উপস্থাপনের ক্ষমতা রাখতে হয়। এর ব্যতীত ব্যক্তি যেমন সমষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, তেমনি সমষ্টির মধ্যও পারস্পরিক সমন্ধ বিনষ্ট হয়।

ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়

সুন্দর মনের চেয়ে চোখ ধাঁ-ধাঁ-নো সুন্দরের খোঁজ অধিকতর সহজ বলে সকলে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কম-বেশী প্রতারিত হয়।

বাসনার আক্ষেপ

বিহঙ্গ হবার সাধ মিটেছে
মুক্ত আকাশ জোটেনি
খাঁচায় বসে আকাশ দেখি
উড়বার বাসনা মেটেনি।

জীবনের নিশ্চয়তা

আরাম-আয়েশ আর নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তার আশায় সকলে কদম রাখতে চায়, অথচ পরবর্তী কদমের নিশ্চয়তা নিয়ে কেউ ভাবতে রাজী নয়।

নিয়মিত জীবনে অনভ্যস্ত

যারা নিয়মিত জীবনে অনভ্যস্ত, তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ কাঁটায় জড়ানো।

কাপুরুষ

যেকোন দেশের সেনারা সে দেশের গর্ব-অহংকার, কেননা তারা দেশের জন্য নিজের জীবনকে বাজি রেখে সেনা হিসেবে অংশগ্রহন করে আর প্রত্যয় ব্যক্ত করে নিজ জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অবধি দেশ ও মানুষের কল্যানে ব্যয় করার। তারা যেকোন অনাকাক্ষিত অনাগত ভয়-বাঁধার দেয়াল ভেঙ্গে দেশ মানুষের ভুলুন্ঠিত সম্মান ফিরিয়ে দেবার কিংবা ধরে রাখার অঙ্গিকারে সদা থাকে প্রস্তুত।

যুদ্ধ হয় সমানে-সমানে! যে যুদ্ধ শুরুর আগেই কারও পরাজয় শতভাগ নিশ্চিত করে রাখে, তাকে যুদ্ধ বলাটা অসম্মানের আর তাতে অংশগ্রহণ করা সেনাদের দেশপ্রেমিক না বলে কাপুরুষ ভুষণে আখ্যা দেয়াটা অধিকতর যুক্তিযুক্ত।

আমি রোহিঙ্গা জনগনের পক্ষে, যে যতভাবেই যুক্তি-তর্ক প্রদান করুক না কেন, কয়েকজন হিংস্র উন্মত্ত জানোয়ারের কর্মকান্ডকে কেন্দ্র করে একটা জাতিগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দেবার পয়তারা করা, ঘটনার সত্যতাকে সন্দিহান করে তোলে। যদি সত্যিকারেই ক্যাম্পে ঢুকে সেনা হত্যাযজ্ঞ হয়ে থাকে, তবে সে ঠেকাতে না পারার কিংবা নিজেদের কর্তব্যের ব্যাপারে সজাগ না হবার ব্যর্থতা তো রাষ্ট্রের। এটা রাষ্ট্রের দূরদর্শিতাকে প্রশ্নযুক্ত করে, প্রশ্নবিদ্ধ করে তাদের ন্যায় কর্তব্য সম্পর্কে, যারা দেশকে পাহারা দেবে বলে নিজেদেরই পাহারা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। আর এই সুযোগটাকে ব্যবহার করছে সুযোগ সন্ধানীদল, যা রাষ্ট্রকে বরাবার অযাচিত ভাবনায় ফেলে দিতে যথেষ্ঠ। অথচ রাষ্ট্র যে কিনা নিজের দূর্বলতা ঢাকতে না পেরে যুগ-যুগ ধরে বসবাসরত জাতিগোষ্ঠীকে অবাঞ্চিত ঘোষনা দিয়ে কাপুষোচিত হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে।

সহস্রাব্দের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখছি এই সহিংস নেক্কারজনক ঘটনাকে বিশ্ব কি করে সহে যাচ্ছে। আজ চোখ মেলে চারিদিকে তাকিয়ে বুঝতে অক্ষম আমি আর আমার বোধ। ভাবছি, এ মানুষের মানবিক আত্মার পচন নাকি অমানুষের যাতনা সইতে না পেরে পলায়ন!

না, কাপুরুষ সেনাদলের এভাবে সারিবদ্ধ দাঁড় করিয়ে মানুষ হত্যা আমি কোনভাবেই মানতে পারছি না, মানতে পারছি না একের অন্যায়ে অন্যকে দূর্বিসহ জীবনে ঠেলে দেয়া, নিষ্কোমল জীবনগুলোতে তীব্র ঘৃণা ছড়িয়ে দিয়ে আরও কতগুলো সহিংস জীবনের উত্থানকে।

বাঁচি কেমনে প্রেম বিহনে

আরাধ্য দেবতা আমার-
সেও ব্যাকুল প্রেমনুরণনে
পরিব্রাজক হয়ে তবে
বাঁচি কেমনে প্রেম বিহনে!

প্রয়োজনের গল্প

একদিন তোমার প্রয়োজনে তুমি জন্মালে,
আমার প্রয়োজনে আমি-
এরপর পরস্পরের প্রয়োজনে আমরা এক হলাম
আর প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ল প্রয়োজনের গল্প

প্রিয় প্রতীক্ষায়

বসন্ত তরু-
কলি ছড়িয়ে ফুল দিলে
পাপড়ি ছড়িয়ে সন্তরিত-সম্ভোগ;
কুঞ্জলয়ের ভ্রমর ফিরিতে কহিও
প্রিয় প্রতীক্ষায় প্রেমিক হৃদয়ে
জমে অনুযোগ।

বন্যার আর আমি?

জানতাম ঝড়গা ছাড়া প্রেম জমে না, কিন্তু তাই বলে এতটা? দিনে-দুপুরে ঘরে-বাহিরে এতটা নিলর্জ্জতায়? বন্যার উপর খুব রাগ হচ্ছিল, কষ্টও। উপরওয়ালাকে মনে-প্রানে ডাকছি, যেন এই লজ্জা হতে মুক্তি মেলে। কিন্তু বন্যার নিলর্জ্জ গা বেড়ে ঢলে পড়া, শরীরটাকে জড়িয়ে ধরে যেখানে-সেখানে টেনে নিয়ে যাওয়া, কিছুতেই রুখতে পারছিলাম না।

আজ সত্যি হতভম্ব আমি! আদি খোলস চুকিয়ে নিতে চায় সমস্ত সম্পর্কের বেড়ী বিন্যাস। অথচ কয়দিন আগেও কত আত্মদম্ভ সম্মান অহং সমুজ্জল ছিল। যৌবনের তেজদীপ্ত উচ্ছ্বাসে কত ছল্ - ছটাকে ছুটেছিলাম দিক-বিদিক। অথচ আজ অনন্তযৌবন ছৌঁয়া উদ্দীপনা মিটে দিচ্ছে প্রণয়বৃন্তের মন্ত্রণায়। আজ দন্ডায়মান পরিস্থিতি লোক সরোবরে নিস্তেজ করে দিচ্ছে উজ্জ্বল আলোকশিখার প্রেম পরিব্রাজক সূর্য্যটাকে।

বড় বিরহিত এই অনুলব্ধ বিন্যাস। সান-সৈকত আর আত্মগরিমার জমিয়ে রাখা অনুসঙ্গকে আজ বিদীর্ন করে তুলছে প্রতিটি খরস্রোতা ঢেঁউয়ের লয়। জীবনের সমস্ত লেনা-দেনা মিটে যাচ্ছে প্রাপ্তী-অপ্রাপ্তীর হিসেব-নিকেশে। পাবার সৌন্দর্য্যও আজ বিমুখ, বিভূষণে রঙ্গিন করে দেবার মতো সমস্ত চাকচিক্য আর অন্তরের গচ্ছিত সমস্ত স্বপ্নের আদিলেখা মুছে যাচ্ছে খাবি খাওয়া চুমুর রহস্যে। ভালোবাসার চিত্রপটে তাই এ এক দুর্বিসহ যন্ত্রণা।

প্রেম সমস্তই বিসর্জনের, প্রেম সমস্তই লেনদেনের। তাই সমস্ত হিসেব-নিকেশ চুকিয়ে বন্যার গ্রাসে সলিল একটি পরিযায়ী পাখির নীড়ের, একটি পরম যতনে আগলে রাখা মধুর স্বপ্নের।

[লেখা পড়ে কেউ না আবার খারাপ কিছু ভেবে বসে তাই নিচে বি. দ্রঃ দিয়ে দিলাম]
[বি. দ্রঃ- আজ বাহারাইনের এক কাষ্টমার কল দিয়ে বলল- বিপ্লব ভাই, আমাদের এখানে তো বন্যায় সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমাকেও মনে হয় ভাসতে হবে। তাকে মজা করে বললাম- ভাইয়া, বন্যার সাথে আপনার কাজ কারবার কি? তারই প্রেক্ষিত ধরে, বন্যা আর আমি।]

ভন্ড ও ভবিতব্য

মানুষকে মানুষ ভাবতে পারা, বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ হতে শেখা আর মানবতা জাগ্রতকল্পে সচেতনতাই কেবল বিশ্বব্যাপী খুন-ধর্ষণ-আহাজারি কিংবা জাতি বিদ্বেষের মাত্রা কমাতে পারে।

যারা নিজের দেশের সংখ্যালঘুদের নিধন উল্লাসের সহিত করে শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিবোধ আর জাতিসত্ত্বার দোহাইয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য কেঁদে-কেটে চৌচির হচ্ছে, এরাও ভন্ডশ্রেনীর।

আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি, যারা এদেশে সংখ্যালঘুদের মানুষ বলে মনে করে না, তাদের ক্ষয়ক্ষতিতে মনে-মনে খুশি হয় অথচ রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের বিবেকের দরবারে কুঠারাঘাত হচ্ছে, যদি সত্যিকারের বিবেকবান সমাজের ধরুন আমাদের দেশে রোহিঙ্গারা স্থায়ী আবাস পায় এবং এই দেশে সংখ্যলঘু‘রা নিছিহ্ন হয়। সেদিন এদেশের এই কপট ভন্ডধারী‘রাই অস্ত্র উছিয়ে রোহিঙ্গাদের কতল করতে ছুটবে বহিরাগত বলে।