রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

মা তোমাকে আমি খুব মিস করছি

ছোটবেলা থেকে দেখা স্বর্গালোকপ্রাপ্তীর আগ পর্যন্ত আমার মায়ের যে জীবনযুদ্ধ করে টিকে থাকা, এখনো জ্বলজ্যন্ত হয়ে জ্বলছে আমার দু‘চোখে। এখনকার সকলকে এমনকি আমার বোনদের দিকেও তাকিয়ে আমি নির্ধিদ্বায় বলে দিতে পারি, তার এক কিঞ্চিৎ গ্রহণ করার মতো শক্তিও তারা নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পারছেনা। হতে পারে সময় ব্যবধানই তার প্রধান কারণ।
আমার জীবনের যতটুকু শিক্ষা আজ বর্তমান তার ৭০শতাংশই আমার মায়ের কাছ থেকে আমি পেয়েছি।
আমার লেখালেখির যাবতীর ইচ্ছে বা আগ্রহ, তার সমস্তই আমার মায়ের কাছ থেকে নেয়া। মায়ের মুখ থেকে শোনা দু‘একটা লাইন যেগুলো আমার মনে ধরত, সেগুলো দিয়েই আমার প্রথম দিকের লেখার হাতে খড়ি। যেমনঃ
মা একদিন বললেন- ছোট‘রা কাঁচামাটির চুলোর মতো, এদেরকে ছোটবেলা থেকে যেভাবে গড়ে তোলা যাবে, এরা সে`মতই হবে।


সে কথা শুনে আমার লেখা-

“কাঁচামাটির তৈরী চূলো, কাঁচায় যা কর
কেটে-কুঁটে ভোতা-সূঁচালো সুন্দর উনুন গড়।”

কোন একদিন মা রেগে বললেন- মূর্খরা সবকিছু একই পাল্লায় মাপতে চায়, ঐযে বলে না;

“ছোটমাছ ধুলে বার-বার, বের হয় কাঁদাপানি
মূর্খ্যজনে করলে সেবা, মেলেনা মুখের বানী”

হ্যাঁ; মায়ের কাছ থেকে এই দু‘লাইন শুনেই লিখলাম। নিচের কবিতাটি-

ভাবনা পরিষ্কার

ছোটমাছ ধুলে বার-বার, বের হয় কাঁদাপানি
মূর্খ্যজনে করলে সেবা, মেলেনা মুখের বানী
অরণ্যে ফলালে ফল, যবে তথাকালে
নির্দয় ব্যাক্তির দয়া পাওয়া, কালক্ষয় বলে
হীনপদে আলোকসজ্জা, শুধুই স্বপ্নক্ষন
সরলমনে কালিক ছিটালে, পড়ে শুধু রণ
গন্ধবিনা ফুলের জন্ম, জীবন নিঠুর কাল
মাঝিছাড়া তরীর ঘর, দ্যক্ত উরুপাল
অভদ্রাকালে ভদ্রার বেশ, শুধুই দুঃখময়
মরনকালে বাঁচার যাঞ্চনা, হীনপদ চয়
অবুঝজনে বুঝাতে গিয়ে, যে পায়না জয়
কালমৃত্যু খায় তারে, তার সবক্ষয়।

প্রথম দু‘লাইন মায়ের মুখ থেকে শোনা, তাই প্রথম দু‘লাইন কোন কাব্যকারের হলেও হতে পারে, অথবা হতে পারে মায়ের মনের অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে আসা কোন অনুভব। কিন্তু এই আমার জীবনের শিক্ষা, আমার মায়ের অনুভবের বিশ্লেষনই আমাকে টুক-টাক লেখার ব্যপারে উৎসাহিত করে তোলে। তাই আজ যদি আমার লেখায় কারো নিকট এতটুকু অনুভবও তৈরী করে- তবে তার সমস্ত কৃতিত্ব আমার মায়ের, আমার পৃথিবীর। সত্যি! মা তোমাকে আমি খুব মিস করছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন