সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

এ কি মনুষ্য জীবন?

প্রত্যেকটি দেশের মানুষ রাজধানী বা বড়-বড় শহরগুলোতে বসবাস করে বাড়তি নাগরিক সুবিধার জন্য। খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা কিংবা জীবনযাপনে একটু আরাম আয়েশের জন্যে। অথচ আমরা আমাদের রাজধানীতে বসবাস করছি একান্ত ঠেকায় পড়ে। রাজধানীতে বসবাস করতে গিয়ে আমাদের নাগরিকবোধ জাগ্রত হবার বধৌলতে দিনকে-দিন আরো থমকে যাচ্ছে। মানুষ পরকালের ভয় দেখায়- বলে ওখানে নাকি বড় যাতনা-যন্ত্রণা নির্মম জায়গা। অথচ রাজধানী জীবনে যে নির্মমতার মুখোমুখি হচ্ছি এরচেয়ে সে যন্ত্রণা আসলে কতটা বেশী এখনও তা বোধগম্য নয়। শুধু এইটুকু বলতে পারি- জীবনটা বড় বেশী দূর্সহ ঠেকছে। না খাওয়ায় শান্তি, না চলায় শান্তি, না বসতে শান্তি, না উঠতে শান্তি, না ঘুমাতে শান্তি, না জাগরণে শান্তি। সবস্থানে শান্তিদের কতটা অসহায় অবস্থান তা বলাই বাহুল্য।


আমার রাজধানী জীবনের ৯ বছরের মাঝে গতকালটাকেই যদি বলি তবে বোঝা যাবে আমাদের সর্বোচ্চ নাগরিক সুবিধা সমৃদ্ধ রাজধানীর অবস্থান। সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে অফিসের পথে রওয়ানা দিলাম। আমার বাসা থেকে ফার্মগেইট পৌঁছতে রিকসা‘তে ১৫ মিনিট, অটোতে ১০ মিনিট আর লেগুনা তে ৫-৭ মিনিট লাগার কথা। সে পথটুকু পাড়ি দিলাম ৩০ মিনিটে। এরপর ফার্মগেইট থেকে পুরোনো পল্টনে আমার অফিসে আসার পালা। অনেক চেষ্টায় ৮-১০ টা গাড়ী ঠেলে কোনরকমে একটায় উঠলাম। কাওরান বাজার এসে একটা সিটে বসার সুযোগ মিলল। সিটে বসার পর, গাড়িতে ধ্বাক্কা-ধ্বাক্কি রত মানুষের শরীরে গরমের ভ্যাবশা হাওয়ায় শরীর ঘামতে লাগল। ঘর্মাক্ত শরীরে কখন যে চোখ বুঁজে এল বুঝতে পারলাম না। কিন্তু যখন চোখ মেলে তাকালাম তখন দেখী আমি আমার নামার স্থান ছেড়ে গুলিস্থান এসে পৌঁছেছি। এর মাঝে ১ ঘন্টা সময় চলে গেছে।

এরপর অফিসে ঢুকলাম নিজের হাতকাজ শেষ করে দুপুরের লাঞ্চ করতে বসলাম। কিন্তু মন টানছিল না লাঞ্চ গ্রহণ করতে। কারণ খাবারের জন্য যে তরকারীর ব্যবস্থা আছে- তার উপরে তেল চকচক করছে। প্রতিদিন এ দেখেই মনে-মনে বিড়-বিড় করে বলে চলছি, বয়সকালে এর জানি কি মাশুল দিতে হয়। যা হোক- জীবন বাঁচানোর তাগিদে তাও সাবার করলাম। এরপর হাতের বাকী কাজকর্ম সেরে সায়ে ৫ টায় আবার বাসার পথে রওয়ানা দিলাম। অফিস থেকে বের হয়েই মনটা খারাপ হয়ে যায়, কারণ চেখে সামনে উপস্থিত হয় তীব্র যানজটের চিত্র। কিন্তু হেঁটে বাসায় যাবো সেটুকু মনোবল শরীরে অবশিষ্ট নেই। তাই আবারো ঠেলেঠুলে গাড়িতে উঠে একটা সিটে বসলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই গাড়ীতে আর তিল ধারনের ক্ষমতা নেই, মনে-মনে ভাবি এই গাড়ীর কতটুকু ভার বহনের ফিটনেস আছে জানি না, তবে এভাবে চলতে গিয়ে যেকোন দিন কোন দূঘর্টনা ঘটতে পারে এটা নির্সন্দেহে বলা সম্ভব। যা হোক গাড়ীতে যখন উঠি তখন জীবনের মায়া থাকে না, থাকে শুধু গন্তব্যে পৌঁছার উদ্দেশ্য। তাই গন্তব্যের পথে চললাম।

কিন্তু আবার একই হাল- মানুষের শরীরের গরমে ঘাম ঝরে শরীর ক্লান্তিতে অবসন্ন হয়ে পড়ল, ঢলে পড়লাম ঘুমের ঘোরে। এ ঘুম অবশ্য স্থায়ী ঘুম না, কিছুক্ষন পর-পর ঢলে পড়া ঘুম। যা হোক আড়াই ঘন্টা পর গন্তব্যে পৌঁছলাম ৫-৬ কিলো. পথ পাড়ী দিয়ে। এরপর আরও ১ কিলো. পথ মানে ফার্মগেইট হলিক্রস স্কুল থেকে নাখালপাড়া ১০ নং গলির মুখ পৌঁছতে অটোতে চলছি। মিনিট খানেক চলে এবার অটোস্থির মানে দাঁড়িয়ে গেছে। কিছুক্ষন পর ঝিমিয়ে-ঝিমিয়ে আবার চলছে। ২০ মিনিট চলার পর যখন অর্ধেক পথ পাড়ি দিলাম তখন বসে থাকা এক ভদ্রলোক ক্ষোভে বলে উঠল, বছর দুয়েক পর ঢাকায় যাযাবরের জীবনই বোধ হয় গ্রহন করতে হবে। শালার সরকার যতসব বাল-ছাল ফ্লাইওভার বানায় অথচ ঢাকার বাহিরে ওই টাকায় ৩-৪ টা কারখানা বানিয়ে মানুষকে ঢাকা মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বিষয়টা ভেবে দেখলাম। আসলেই তাই- যে শুরু হয়েছে তাতে বোধহয় রাস্তায় যাযাবর জীবন গ্রহণ করতে হবে না। বরং ঘন্টার পর ঘন্টা মানুষের শরীরের গরমে দম আটকেই মারা পড়ব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন