বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬

পুলিশ নিক পাকায়ে

আমাদের মতো গবীবের মেসে এসেও পুলিশ ধরনা দিয়ে যাচ্ছে কয়েকবার। বলি-

ওগো প্রিয়তমা-
তুমি থাক আড়ালে লুকিয়ে
আমায় পুলিশ নিক পাকায়ে...

ভালোবেসে দেখেছ কি...

ছুঁতে চাইলে অহংকারী হিংসুটে গোলাপ
পাপড়ি ছড়িয়ে সুবাস ঢেলে উঠলে বলে
আমার মত এত কোমলরূপ পাবে নাকো...
মিথ্যে শুনতে আমার সে রাগ হয় বড়
বললেম আমি-
শুধু কি আরশিতে আপনায় রাখ?
আড়াল চোখে আমার প্রিয়ার
রাঙ্গা মুখখানী একটু দেখ!

সে দেখলে!
লজ্জায় লুকিয়ে নিলে সুবাস
গুটিয়ে নিলে পাপড়ি..
বললে আমায়-
কোথায় পেলে ষোড়শী অপরূপ কেশী?
বললেম আমি-
ভালোবেসে দেখেছ কি রূপের আরশিতে চাঁদনির হাসি?

ভয় ও বোধ

তাদের কাছে অস্ত্র আছে, প্রশিক্ষন আছে, সর্বসাধারনের প্রতি ঘৃণা (কারন- তারা সাধারন মানুষকে মারছে) আছে, ধর্ম রক্ষার নৈতিক দায়িত্বের (যদিও কর্র্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ) তাগিদ (যদিও মুখোশধারী হিংস্র জানোয়ার) আছে, বেহেস্তের বাসনা আছে,৭২ হুরের লোভ আছে আর আত্মহত্যার প্রবণতা আছে- তবে এমন কাউকে যেকোন পরিস্থিতিতে মোকাবেলার সুযোগ কোথায়?

প্রার্থনার ধরন

গতকাল একজন বিখ্যাত কৌতুক অভিনেতার একটা কৌতুক পড়েছিলাম, যা অনেকটা এরকম-

“ছোটবেলায় আমার একটা সাইকেল পাবার তীব্র আকাঙ্খা ছিল, তাই আমি ঈশ্বরের নিকট প্রতিদিন একটা সাইকেল পাবার আশায় প্রার্থনা করতাম। দীর্ঘদিন প্রার্থনায় ঈশ্বরের সাড়া না পেয়ে, আমি একটা সাইকেল চুরি করে এনে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা শুরু করলাম।”

কৌতুকটি পড়ার পর আমি বেশ ভাবলাম এবং দেখলাম আমাদের জীবনবোধের সাথে এই কৌতুকটির প্রভাব বিস্তর। আমাদের দেশের আপামর মানুষের দিকে তাকালে আপনার সহজে চোখে পড়বে- এদেশের একশ্রেণী যারা স্রষ্টার অনুগ্রহ পাবার আশায় তাঁর দরবারে ক্লান্তিহীন ফরিয়াদ জানিয়ে- অভুক্ত পড়ে পড়ে মরছে। আর অপরশ্রেণী যারা বৈধ-অবৈধ দু‘হাতে নিজের চাহিদার অতিরিক্ত টাকা কামিয়ে ভালো মানুষির পোশাক পড়ে মানুষকে দান-সদকা করে নাম ফুটাচ্ছে আর গলা ফাটিয়ে স্রষ্টার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছে।

[মনে রাখুনঃ

১) যার নেই তার ফরিয়াদ পাবার। আর যার ক্ষমার ফরিয়াদ সে মুখোশধারী, ভন্ডরুপ আগলে সে সাধু হতে চায়।

২) পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো সাক্ষ্য দেয়- দুনিয়া ভোগ আর মোহবাসনায় আবদ্ধ, তাই সাধারন মানুষ বিষয়াসক্ত নয়- এ কথাটি সম্পূর্ণ অবান্তর। সত্য এই- মানুষের কোন না কোন বিষয়-বৈভবে আসক্তি থাকেই। অতএব- সর্বসহায়ের কাছে মানুষের প্রার্থনার মূল প্রার্থনা‘ই বাসনার, ক্ষমার নয়।]

সভ্য!!!

সভ্যরা অস্ত্র বানিয়ে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে মশা-মাছি, কীট-পতঙ্গ ধ্বংস আর পশু-পাখি শিকার করে জীবন-ধারনের মহৎ উদ্দেশ্যে। আর তারা অসভ্য-বর্বর‌‌ মানুষদেরও শিকার করে চলছে সভ্যদের সাথে গলায়-গলায়, বাহুয়ে-বাহুয়ে জড়িয়ে চলতে!!!

প্রবাসী বাঙ্গালির গল্প



মেদু মিয়া প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছে। দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরলে বাড়িতে আনন্দের জোয়ার উঠে। কৌতুহলী ময়-মুরুব্বি‘রা ঘিরে ধরে তার প্রবাস জীবনের গল্প শুনতে- আর মেদু মিয়াও আগ্রহ নিয়ে গল্প শুরু করে-

আরে ভাই বলবেন না, সে দেশ আর আমাদের দেশ? সবকিছুতে আকাশ-পাতাল ব্যবধান।আমাদের এখানে তো কেবল খুনোখুনি-ঝড়গা-ফ্যাসাদ আর তারা যারা-যার মতো করে সে চলছে, কেউ কারও দিকে তাকাবার পর্যন্ত সময় নেই। সবচেয়ে আশ্চর্য্য কি- আমাদের দেশের মানুষের শরীরে মলে কি বাজে দূর্গন্ধ, কিন্তু কি কমু ভাই বিদেশে তারা যেমন ভালো-ভালো সুগন্ধি গায়ে মাখে তেমনি সুগন্ধিযুক্ত খাবার খায় আর তাদের মলগুলোও বেশ সুগন্ধযুক্ত। আর সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার কি- তাদের মল পড়ার সাথে-সাথেই মাটি হয়ে যায়। আর মাটিও বেলে মাটির মত চকচকে দেখায়। আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা হলে তো এই মাটি দিয়েই ভাত-তরকারী খেলত। আমারও মাঝে-মাঝে ছোটবেলাকার ভাত-তরকারী খেলার কথা মনে পড়ত, তখন আমি বালতিতে করে টাংকিতে জমে যাওয়া বেলে মাটি দূরে সরিয়ে টাংকি খালির কাজ করতাম।

[বি. দ্রঃ- এই স্যাটোয়ারটি যারা ইংল্যান্ড, জার্মানি, আমেরিকা, রাশিয়া, সৌদিআরব কিংবা দুবাইয়ের মতো দেশগুলো নিয়ে খুশিতে ফেটে পড়ে তাদের উদ্দেশ্যে লেখা। ভাইলোগ তারা নিজের দেশে কিংবা দেশের মানুষের সাথে যত ভালো ব্যবহারই করুন না কেন, কিংবা যত ভালো মানুষির পরিচয় তুলে নিজেদের সভ্য প্রচারের চেষ্টা করুক না কেন, জানুন বিশ্বব্যাপী সাধারন মানুষের জীবন-যাপন দিনকে-দিন কঠিন হয়ে পড়ছে তাদের বহমান কূট-কলাকৌশলের কারণেই। তাদের ভালো মানুষিরুপটা সত্যিকারের হলে- দুনিয়াব্যাপী খড়গ হাতে কারোই হয়ত রক্ত নেশায় ছুটতে হত না।]

প্রসঙ্গঃ জীবনবোধ ও বাস্তবতা

মিডেলইষ্টে কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়া প্রবাসীর বেশীরভাগ খুবই কষ্টসাধ্য দিনযাপন করেন। যেখানে দেশে ২৭-২৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা সহ্য করা কঠিন, সেখানে অনেকে ৪০ ডিগ্রীর উপরের তাপমাত্রা সহ্য করে ভেড়া-উট চারণ, খেঁজুর গাছ কাটা, খেঁজুর সংগ্রহ করা, মেথর-মুচির কাজ, রাজমিস্ত্রির কাজ, দোকানের সাধারন শ্রমিকের কাজ, তেলের খনিতে কিংবা দিনমজুর হিসেবে কাজ করে পরিবার পরিজনের জন্য অর্থের সংস্থান করে থাকেন। অনেকে সেখানে দূর্গম পাহাড়ের গায়ে বির্স্তৃন জনাকীর্ণ স্থানে খাবার-দাবারের নানাবিধ সমস্যা বয়েও টিকে থাকবার চেষ্টা করেন। নিজ দেশ ছেড়ে, পরিবার-পরিজন সব ছেড়ে সেখানে একা-একা যুদ্ধ করা কিংবা দুই-একটা পরিচিতমুখ সামনে রেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জীবনের প্রাণবন্ত মুহূর্তগুলো শেষ করে শেষ জীবনে এসে পরিবার-সন্তান সন্ততি নিয়ে একটু সুখের মুহূর্ত উপহার পাওয়া- এটাই বেশীরভাগের তাগিদ থাকে। কাজের মাধ্যমে মিডেলইষ্ট প্রবাসীরা সাথে সংযুক্ত থাকায় আমার জানা আছে- ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যারা কাজ করতে যায়, তারা মাসিক যে বেতনে চাকুরী করে তাতে ৮-১০ বছর চাকুরীর সুবাদে জমানো অর্থের পরিমান এ দেশে অবস্থানরত ১০-১৫ টাকা বেতনের চাকুরীজীবীদের থেকে সামান্যই বেশী। তাই বলতে গেলে বলা চলে- প্রতিনিয়ত বিরুপ পরিবেশে টিকে থাকায় তাদের জীবনবোধ অনুভব করার তাগিদ কিংবা সুযোগ দেশে বসবাসরত অন্যদের থেকে কয়েকগুন বেশী হবার কথা।

কিন্তু বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আমরা কি দেখতে পাই?

দেখতে পাই- জীবন সম্পর্কে যাদের বোধশক্তি বেশী জন্মাবার কথা, তাদের বেশীরভাগই এদেশে এসে জমিদার বনে যায়। দেশে ফিরে তারা নিজের হাত-মুখ ধোয়ার জন্যও কারও হাতে থাকা পানির পাত্র খোঁজে। যা সত্যিকার অর্থেই দুঃখজনক। আর সবচেয়ে বেশী দুঃখজনক, ফিরে এসে যখন সেখানে যাদের হাতে অত্যাচারিত হয় তাদের গল্পই গর্ব করে বলে বেড়ায়। অথচ এদেশে ফিরে মানুষকে জীবনমুখি শিক্ষায় উৎসাহিত করার তাদের কত না সুযোগ ছিল। দেশের কাজে হাত লাগিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবার তাদের কত না সুযোগ বর্তমান। অথচ তারা প্রবাসে অন্যের মল তুলতে ঘৃণা বোধ না করলেও নিজ দেশের নাঙ্গল কাঁদে নিতে তাদের আজন্মের দ্বীধা!

[বি. দ্রঃ মিডেলইষ্টে কাজ করে অনেক টাকার মালিক বনে যারা এদেশে ফেরে, মনে রাখবেন তারা বেশীরভাগই ঐদেশে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে ফিরেছে অথবা কারও মাথায় আঘাত করে কাউকে নিঃস্ব করে ফিরেছে। সৎভাবে উপার্জন করে ১০০-তে কেবল ২-৫ জনেরই ভাগ্য প্রসন্ন হবার সুযোগ বর্তমান।]

সময়ের অভ্যর্থনা

যৌথপরিবারে কেটেছে পুরোটা শৈশবকাল। একত্রে পরিবারের ১৫-২০ জন মানুষের সাথে মানষিকতা ভাগাভাগি কিংবা বসবাস করতে গিয়ে দেখেছি প্রত্যেকটি স্বাধীনতা মুখাপেক্ষি জীবনগুলোকে। স্নেহ-মমতা-ভালোবাসা ভাগাভাগিতে তখন কত কত প্রতিযোগিতা! সময়ের সাথে জীবনের আয়োজন, খাদ্যের প্রয়োজন কিংবা বন্টণে কত বৈসাদৃশ্য-বৈচিত্র্যতা! দেখেছি স্বার্থের প্রয়োজনে অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করার সে কি দারুন নিকৃষ্ট মানষিকতা। পরিবারের ক্ষমতাধর ব্যক্তির নিকট ভালো মানুষিরুপে প্রতিষ্ঠিত হতে গিয়ে অন্যকে অগ্রহণযোগ্য করে তোলার কত সব নির্মম প্ররোচনা। অন্যের দূর্বলতার সুযোগে উচ্চস্বর বিলাপে কারও মাথা নত করে দেবার কত শত প্রতারিত ভাবনা। কত সহজে সময়কে না বলে কারও চোখে ঢল অথবা কারও চোখে চকচকে ছল্। দেখেছি কখনও অমানুষিক অন্যায় নির্যাতন, কখনও আবার চোখের সামনে দিয়ে রক্তের ঢলে ভেজাঘাস কিংবা অসহায় বেলায় কীতপতঙ্গের পীড়ন। আর সময়কে বাসনা করে উপোস কাটিয়ে দেয়া জীবনের কিছু নির্মম দিনলিপি।

সময়ের সাথে-সাথে জীবনের অনেক গল্প বদলে যায়, বদলেছেও। অনেক বছর আগেই যৌথপরিবার ভেঙ্গে একক স্বতন্ত্ররূপ পেয়েছে। স্বতন্ত্র পরিবারগুলো নিজেদের ঘিরে জমানো স্বপ্নে বর্ণিল হয়েছে। কিন্তু কিছু মানাষিকতা কিংবা রক্তধারা এখনও উত্তরাত্তরে বয়ে যাচ্ছে। সমতা বজায় রেখে বাঁচার তাগিদে যতটা সাধ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করছি কিন্তু ব্যর্থতায় মাঝে-মাঝে অসহায় আর অবাক লাগে। তবে সবচেয়ে বেশী অবাক লাগে যখন দেখী ছোট-ছোট ভাইবোন যারা আমাদের মতো এমন শৈশব পায় নি অথচ আমাদের বদ্যৌলতে তারা পূর্বপ্রজন্মের মতো দক্ষ অভিনয়ের কৌশল আয়ত্ব করে ফেলেছে আর ভাব দেখাচ্ছে সে বুঝতে অক্ষম!!

সন্তুষ্টি কি সম্পূর্ণতা আর সম্পূর্ণতাই কি সার্থকতা?

সন্তুষ্টি কি সম্পূর্ণতা আর সম্পূর্ণতাই কি সার্থকতা?

যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়- আপনি নিজেকে নিয়ে কি সন্তুষ্ট? সন্তুষ্ট কি আপনার পরিবারবর্গ নিয়ে? অথবা প্রতিবেশী-সমাজ-দেশমাতৃকা কিংবা ভূ-গোলার্ধ ভাবনায়?

আসল সত্য- কামনার বেড়াজালে জড়িয়ে থাকা মন হাজারো প্রচেষ্টাতেও সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম নয়। তাই ব্যক্তি সন্তুষ্টি কিংবা স্বার্থকতার আশায় ছুটে চলা পথটা বেশীরভাগ সময়ই বিপথগামীর কিংবা অবৈধ। আর স্বার্থকতার নেশায় ধাবিত লোকজনের বর্তমান চিত্রটাই সবচেয়ে বেশী চোখে পড়বার মতো।

জীবনটাকে উপভোগ করতে গেলে নিজের মনকে নিজের বিবেকলব্ধ সৎ চেতনায় বাঁধতে হয়, নিজের অবস্থান নিয়ে সর্বোচ্চ সুখী হবার চেষ্টা থাকতে হয়, তা না হলে সম্পূর্ণতা কিংবা সার্থকতার নেশায় ঘরে-ঘরে উন্মাদ জঙ্গিতে ভরে উঠবে। অথবা অসভ্য-মাতাল নষ্টদের পদচারণায় পৃথিবী ভরে যাবে। যা থেকে সত্যিকারে নিস্তারের কোন পথ নেই। তাই ভালো মানুষিকতায় সৎ চেতনা জাগ্রতকল্পে এখনই সবার সজাগ হওয়া জরুরী।

মৃত্যু ও মায়া

জন্মে মৃত্যু অধীর হয়ে দিচ্ছে কেবল তাড়া
মাঝখানে তার জড়িয়ে রাখা কিছু স্বপ্ন-মায়া।

দ্বিগবিজয়ী

দ্বিগবিজয়ীর পথ থাকে না! তিনি আঁধারের ইশারায় ছুটেন, বোকা পথ তাই আড়ালে হারাবার বাঁক খুঁজে পায় না।

ভারতীয় দালাল!!!

মাঝে-মাঝে কিছু লোকের সাথে অনিচ্ছায় বিতর্কে যেতে হয়। তাদের ভাষায় ভারত হিন্দুদের দাদার দেশ। হিন্দুরা ভারতের দালাল। তাদের কথায়-বার্তায়, আকার-ইঙ্গিত কিংবা উদ্দেশ্য কি? কথার বাকামিতে তারা এমন ভাব ধরে যেন আমরা কিছু বুঝি না। কিন্তু তাদের যদি প্রশ্ন করি এদেশে আপনার আমার নাড়ি ছেঁড়া রক্ত মাটি শুষেছে, এদেশের আবহাওয়ায় আমরা উঠেছি-বসেছি-খেলেছি। তারসত্বেও যদি আমাদের এদেশের চেয়ে ভারতের প্রতি দূর্বলতা বেশী হয়, তবে এদেশে বসবাস করে আপনাদের কাদের জন্য জ্বলে? আসলে তাদের কথার ভাবে মেনে নিতেই হবে- আসলে আমরা এদেশে নই, আমাদের মন-প্রাণ সব সঁপে দেয়া ভারতের জন্য। যদি আমি বা আমরা নাও হই, তারা জোর শক্তি প্রয়োগ করে হলেও আমাদের তা মানাতে বাধ্য করে ছাড়বে মনে হয়। আসলে দুনিয়াটা সত্যি খুব মজারু! এখানে ক্ষমতাই মূখ্য আর বাকী সব মৌন। ক্ষমতায় রাতকে ঝাড়বাতিতে দিন করে আর দিনকে কপাটের আড়ালে লুকিয়ে রাত করে। কিন্তু সাধ্য কিংবা সীমাবদ্ধতার কিংবা সত্যটা যথাযথ স্বীকৃতির ধার ধারেনা।

এখানে আমাদের কে ভারতের দালাল বলার কারণ হিসেবে তাদের যুক্তিগুলো শুনুন- বেশ রং চঙ্গা যুক্তি, জানা থাকলে যেকোন হিন্দুদের দালাল আখ্যায়িত করা আপনার জন্যও সহজ হবে। যুক্তিগুলোঃ

১) বাংলাদেশের প্রত্যেকটি হিন্দুদের আত্মীয়-স্বজন ভারতে আছে (কি কারণে সেটা বিবেচনার বিষয় নয়, কারণ.....সে না বললেও যারা বোঝার বুঝবেন নিশ্চয়ই)
২) বাংলাদেশের হিন্দু‘রা খুশিতে বসবাস করার জন্য ভারতে ছুটে।
৩) হিন্দু‘দের উপর এদেশে মানুষ অন্যায় অত্যাচার করলে তারা ভারতের কাছে বিচার দেয়।
৪) এরা ভারত সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত আওয়ামীলিগকে ভোট দেয়।
৫) ভারতের বিভিন্ন চ্যানেলের প্রতি এদের দারুন আকর্ষন, এরা দেশী সংষ্কৃতি বাদ দিয়ে ভারতের সংষ্কৃতির প্রতি দাবমান। (যদিও বাংলাদেশের সত্যিকারের সংষ্কৃতি আসলে কি ছিল বা কি হচ্ছে তারা তা ভুলতে চেষ্টা করে অর্হনীশ।)
৬) হিন্দুরা ভারতের বাংলাদেশের উপর অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদ করে না। (যদিও বাংলাদেশের সামগ্রিক ইতিহাস বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, এদেশের মানুষের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার ইতিহাস সংখ্যার বিচারে এখনও হিন্দুরাই এগিয়ে। এটা মুখের কথা নয়, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়।)
৭) হিন্দুদের ভারতীয় কবি-সাহিত্যিকদের (রবীন্দ্রনাথ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর....) প্রতি দূর্বলতা।
৭) আরও আছে, এ মুহূর্তে মনে করতে পারছি না।

এসব বলার পর তাদের যদি প্রশ্ন করা হয় এর জন্য যদি হিন্দু‘রা ভারতের দালাল হয়ে যায়, তবে বলুন-

১) আপনারা ভারতের চ্যানেল বর্জন করতে লাফালাফি করেন, অথচ মজার কথা আপনাদের প্রিয় নায়ক নায়িকাদের লিষ্টে এগিয়ে- সালমান খান, শাহরুখ খান, ফারদিন খান, আমির খানসহ ভারতের সব মুসলিম নায়ক‘রা, যদিও তারা আমারও প্রিয় নায়কের তালিকায়। তবু এদেশের মুসলমানদের তালিকাটি কিন্তু বিভাজিত।)
২) তেনাদের প্রিয় শিল্পীর তালিকায়, ভারতে গান গেয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া আতিফ আসলাম, আদনান সানি.....
৩) ভারতের চ্যানেলে প্রতি তীক্ততা থাকলেও তারা আবার ভারতের পিস টিভির দারুন ভক্ত।
৪) ভারতের সব নিকৃষ্ট বর্বর কিন্তু জাকের নায়েক, মওদুদী, ড. আবুল কালাম আজাদ তাদের আদর্শ। জাকের নায়েক আর মওদুদীর আদর্শ উদ্দেশ্য স্থাপনের জন্য তারা এমন কোন ঘৃন্য পথ নেই, যাতে আশ্রয়ে তাদের কার্পণ্যতা আছে।
৫) ভারতের সনিয়া মীর্জা পাকিস্থানের মালিককে বিয়ে করাতে তেনাদের সুখ বলে শেষ করা যাবে না।
৬) রবীন্দ্রনাথ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ভারতীয়, তাই এদেশের সমস্ত পুস্তক থেকে তাঁদের বাদ দেয়া (আসল উদ্দেশ্য বাংলাভাষাটাকে মুছে দেয়া, একথা বলছি কারন- বাংলাসাহিত্যে তাঁরা ব্যতীত বাংলা সাহিত্যের আধো অস্তিত্ব আছে কিনা, আমার জানা নেই)। কিন্তু তাদেরই আবার ভারতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি নির্মোহ দূর্বলতা। ঘটনাটি প্রশ্নবিদ্ধ।

এসব বিষয় যদি বলা হয় এবং একই অভিযোগে তাদেরকেও ভারতীয় দালাল বলা হয় তখন এরা রক্তচোখে আপনাকে মারতে হুমকি দেবে না এও বলা মুশকিল। অতএব হিন্দু‘রা ভারতীয় দালাল তমকা নিয়েই এড়িয়ে চলুন জান বাঁচাতে, জানেন তো জান বাঁচানো ফরজ।

ধর্মবোধ ও আমরা

আমরা মানুষ হবার যতটা না চেষ্টায় রত, তারচেয়ে বেশী চেষ্টায়রত ধর্মকে আশ্রয়ে রাখতে। তবে কি আমরা ধার্মিক?

এই প্রশ্নের প্রতিউত্তর একটাই- ধর্মের নির্দেশনা ধর্মীয় অনুশাসন যথাযথভাবে পালন, একে অপরের সাথে মিথ্যা কিংবা জোচ্ছুরি না করা, সৎ পথে চলা, কারও ক্ষতির মানষিকতা পোষন না করা, নিজের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা কিংবা থাকার সর্বোত্ত চেষ্টা করা, কারও গীবত না করা, সামার্থ্য অনুযামী দান-সদকা দেয়া, মনুষ্য জ্ঞাণে আবদ্ধ থাকা, মাণবতা পোষন করা, কারও ক্ষতি না করা, কারও উপর অন্যায়-অত্যাচার থেকে বিরত থাকা এবং সর্বোপরি সর্বোত্তভাবে সকলের সহিত যথার্থ বন্ধুত্বপূর্ণ আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখা।

কিন্তু আমরা কি দেখছি? আমরা দেখছি মন্দিরে বড়-বড় ধর্ম যাজক নামধারীরা জানাচ্ছে হিন্দুদের উপর অমানুষিক নির্যাতনের কথা, প্রার্থনা করছে তাদের ধর্মের লোকদের সু-প্রসন্ন জীবনের জন্য। মসজিদের ইমাম তিনি বয়ান দিচ্ছেন সমগ্র মুসলিম জাতির দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে, দোয়া করছেন মুসলিম ভাইয়েরা যেন জালিমদের দুঃখ-নিপীড়ন উতরে আল্লার পথ ধরে বেহস্তবাসী হয়। একই অবস্থা বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, গুরুধর্মসহ প্রায় সকল ধর্মের বেলায় বর্তমান।

আমরা প্রত্যেকে এক-একটা পরিবারের সন্তান, আমরা দেখতে পাই আমাদের প্রত্যেকের পরিবারের অভ্যন্তরের প্রত্যেকের মানষিকতা কিংবা আদর্শ এক নয়। যদি একই পরিবারের অন্তর্ভূক্ত হবার পরেও আমরা সম-মানষিকতা সম্পন্ন না হই, তবে সমাজ-সংসার কিংবা ধর্মীয় বিধি-নিষেধ মেনে আমরা সকলে কি করে এক হব? যদি একটি পরিবারের একজনের উগ্রতায় পরিবারের সবাইকে সামষ্টিক বিচারে আনা না হয়, তবে কেন ধর্মীয়বোধের উপর ভিত্তি করে মানুষে-মানুষে পৃথক হবে? সবধর্মের পালনকারী যেহেতু মানুষ- অতএব দৃষ্টিভঙ্গি, মানষিকতা কিংবা আদর্শিক বিচার-বিবেচনায় আনলে প্রত্যেক ধর্মে এমন কিছু মানুষ আছে- যারা আগ্রাসী, ধর্মের নাম করে এরা রক্ত নিয়ে হোলি খেলায় মজতে পছন্দ করে। এরা ধর্ম নিয়ে মানুষ নির্ণয় করতে চায়- মনুষ্যত্ব কিংবা মানবিক বিরেচনায় নয়। এরা দেখাতে চায়- এই ধর্মের লোক আমাদের এই করেছে, ঐ ধর্মের লোক আমাদের পাছায় বাঁশ দিয়েছে, ওরা আমাদের ধ্বংশ করতে চায়, চলুন আমরা আমাদের ভাইদের জন্য দোয়া করি। কিন্তু এরা এতটুকু বিবেকেও কখনও মানুষ হিসেবে ব্যক্তির উগ্রতা কিংবা হিংস্রতাকে দেখাতে চায় না। আসলে উদ্দেশ্য বিবেচনায় নিলে এরা চায়, শুধু নিজ ধর্মকে প্রচার আর প্রসার ঘটাতে। এতে রক্তের লিপ্সায় অন্যকে হিংস্র জানোয়ার বানাতে এদের বাঁধে না।

যদি একজন ধর্মীয় আদর্শ পালনকারী নেতা শুধুমাত্র ধর্মীয় প্রচার-প্রসারের নেশায় পড়ে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মানুষকে মারার নির্দেশ দেয় কিংবা কারও ইচ্ছের বিরুদ্ধে নিজের আদর্শিক মতাবাদ জোর করে চাপিয়ে দেয়, অথবা আদর্শিক মতবাদ চাপাতে না পেরে তাকে নিঃস্ব করে কিংবা তাকে কুপিয়ে হত্যার পরোক্ষ মদদ দেয়, তিনি কি করে সঠিক ধর্মীয়গুরু কিংবা ধার্মীক? যদি নিজের বিবেক-বোধ এতটুকু অন্তত থাকে তবে এই রক্তের হোলিখেলা থামাবার জন্য এখনই তা বিবেচনায় নিতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে এখনই, সেসব ধর্মীয়গুরুদের ভূল এখনই ধরিয়ে দিতে হবে। বলতে হবে আপনি মানুষের জন্য দোয়া করবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, মুসলিম কিংবা নিজ ধর্ম অন্তর্ভূক্ত ভাইদের জন্য নয়। আমরা মনুষ্যত্ব বিশ্বাসকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাই, বিষাদে নয়।

বাঙ্গালি চরিত্র ও ভবিষ্যত



বাঙ্গালি চিরকালই দু‘মুখো! এরা স্বাভাবিক চিন্তা-চেতনাতে কখনও এক হতে পারে নি, অদূর ভবিষ্যতের সে আশা করাটা দূরহ বটে। এরা সন্ত্রাসকে যেমন প্রতিহত করতে চায়, ঠিক তাদের লালনে মদদ দিতেও তৎপর। একদল একজনকে দোষী সাব্যস্ত করে তথ্য দিলে অন্যদলের কাছে মিথ্যে সাব্যস্ত করার তথ্যও এসে যায়। কেউ আক্রান্ত হয়ে ঘৃণা-ভয়ে থু-থু ছিটালে ঠিক বিপরীত কেউ এসে সে থু-থু চেটে খায়।

কেউ হ্যাঁ বললে সে হ্যাঁ‘কে না বলার লোকের যেমন অভাব থাকে না, তেমনি হিংস্র জানোয়ারের সুদর্শনরুপ দেখে ক্রাশ খেয়ে অর্গাজম হওয়ারও অভাব নেই।

এমন জাতির ভবিষ্যৎ কতটা ভয়ঙ্কর রুপ হয়ে এসে দাঁড়াবে- সময় কেবল তারই প্রতিক্ষার প্রহর গুনছে।

উদ্দেশ্য

আইডিবি থেকে কম্পিউটারের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক কোর্সে বৃত্তিসহ বিনামূল্যে করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে শুধুমাত্র মুসলিম ছাত্রদের। ইসলামী ব্যাংকের মতো এখানে কোন হিন্দু বা অন্যকোন ধর্মালম্বিদের আবেদন করার সুযোগ পর্যন্ত নেই। সবচেয়ে মজার ব্যাপার সরকারই এ ব্যাপারে সব সুযোগ করে দিচ্ছে, এমনকি প্রশ্ন পর্যন্ত উঠছে না- এদেশে অন্য ধর্মালম্বিদের যথেষ্ঠ বসবাস থাকার সত্ত্বেও তারা কেন সমসুযোগ পাচ্ছে না?

প্রশ্ন তুলছি, গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় এ ধরনের মানষিকতা প্রদানের সুযোগ দেয়ার কার্য্যত কারন কি? বৃত্তিপ্রদানের মাধ্যমে এভাবে একটি জনগোষ্ঠীকেও সবস্থানে ক্ষমতাশালী করে তোলার উদ্দেশ্যও বা কি? আজকে যারা কম্পিউটারের হ্যাকিং কিংবা স্প্যামিং কিংবা ভার্চূয়াল জগতে হিডেন থেকে বিভিন্ন অসাধু কার্য্যক্রম চালাচ্ছে, তাদের মদদ দাতা আসলে কারা? শুধুমাত্র একটা জনগোষ্ঠীকে নিয়ে গোপন কার্য্যসিদ্ধের উদ্দেশ্য কি?

ভয় ও বোধ

খেলোয়ার‘রা খেলছে- রাষ্ট্রযন্ত্র খেলছে, প্রধানমন্ত্রী খেলছে, আইনমন্ত্রী খেলছে, মন্ত্রী পরিষদ খেলছে, সাবেক বিরোধী বর্তমান বিরোধী খেলছে, বাম খেলছে, ডান খেলছে, সাথে মধ্যবর্তী‘রাও খেলছে। বুর্জোয়া রাজনৈতিক খেলছে, নীতি বিসর্জিত আমলাতন্ত্র খেলছে। প্রশাসন খেলছে, তার হাতে ধরে সাঙ্গ-পাঙ্গরা খেলছে। লেজুড় ধর্মব্যবসায়ী খেলছে, বুদ্ধিজীবী খেলছে। বিশ্বাসীরা খেলছে, বিশ্বাসবাসী‘রা খেলছে। লেজ গুটানো বিড়াল খেলছে, ধূর্ত শেয়াল খেলছে। লেজ তোলা কুকুর খেলছে, উগ্রতায় শুয়র খেলছে।

এখানে খেলায় জয়-বিজয় অনুমেয় না হলেও খেয়াল করলেই বোঝা যাচ্ছে সকলের খেলার উদ্দেশ্য হাসিল! খেলায় অংশগ্রহণকারী সবাই নিজেদের কায়দায় খেলতে-খেলতে ভাবছে আবাল জনতা ঠিক বোঝে না, ঠিক খেলার কৌশল জানে না। আর সত্যিতে পৌঁছে আমরাও দেখছি, আসলেই কম ভুগছি না। খেলার চমকে-ঢমকে আমরা ভীতি নিয়ে সেযে, ছুটছি আর থামছিও না। অথচ ভীতি থামিয়ে এদের দিকে হাত এগিয়ে নিলে এরা ঠিক মুঠিতে কতটা পুরত সন্দেহ!