বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬

প্রসঙ্গঃ জীবনবোধ ও বাস্তবতা

মিডেলইষ্টে কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়া প্রবাসীর বেশীরভাগ খুবই কষ্টসাধ্য দিনযাপন করেন। যেখানে দেশে ২৭-২৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা সহ্য করা কঠিন, সেখানে অনেকে ৪০ ডিগ্রীর উপরের তাপমাত্রা সহ্য করে ভেড়া-উট চারণ, খেঁজুর গাছ কাটা, খেঁজুর সংগ্রহ করা, মেথর-মুচির কাজ, রাজমিস্ত্রির কাজ, দোকানের সাধারন শ্রমিকের কাজ, তেলের খনিতে কিংবা দিনমজুর হিসেবে কাজ করে পরিবার পরিজনের জন্য অর্থের সংস্থান করে থাকেন। অনেকে সেখানে দূর্গম পাহাড়ের গায়ে বির্স্তৃন জনাকীর্ণ স্থানে খাবার-দাবারের নানাবিধ সমস্যা বয়েও টিকে থাকবার চেষ্টা করেন। নিজ দেশ ছেড়ে, পরিবার-পরিজন সব ছেড়ে সেখানে একা-একা যুদ্ধ করা কিংবা দুই-একটা পরিচিতমুখ সামনে রেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জীবনের প্রাণবন্ত মুহূর্তগুলো শেষ করে শেষ জীবনে এসে পরিবার-সন্তান সন্ততি নিয়ে একটু সুখের মুহূর্ত উপহার পাওয়া- এটাই বেশীরভাগের তাগিদ থাকে। কাজের মাধ্যমে মিডেলইষ্ট প্রবাসীরা সাথে সংযুক্ত থাকায় আমার জানা আছে- ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যারা কাজ করতে যায়, তারা মাসিক যে বেতনে চাকুরী করে তাতে ৮-১০ বছর চাকুরীর সুবাদে জমানো অর্থের পরিমান এ দেশে অবস্থানরত ১০-১৫ টাকা বেতনের চাকুরীজীবীদের থেকে সামান্যই বেশী। তাই বলতে গেলে বলা চলে- প্রতিনিয়ত বিরুপ পরিবেশে টিকে থাকায় তাদের জীবনবোধ অনুভব করার তাগিদ কিংবা সুযোগ দেশে বসবাসরত অন্যদের থেকে কয়েকগুন বেশী হবার কথা।

কিন্তু বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আমরা কি দেখতে পাই?

দেখতে পাই- জীবন সম্পর্কে যাদের বোধশক্তি বেশী জন্মাবার কথা, তাদের বেশীরভাগই এদেশে এসে জমিদার বনে যায়। দেশে ফিরে তারা নিজের হাত-মুখ ধোয়ার জন্যও কারও হাতে থাকা পানির পাত্র খোঁজে। যা সত্যিকার অর্থেই দুঃখজনক। আর সবচেয়ে বেশী দুঃখজনক, ফিরে এসে যখন সেখানে যাদের হাতে অত্যাচারিত হয় তাদের গল্পই গর্ব করে বলে বেড়ায়। অথচ এদেশে ফিরে মানুষকে জীবনমুখি শিক্ষায় উৎসাহিত করার তাদের কত না সুযোগ ছিল। দেশের কাজে হাত লাগিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবার তাদের কত না সুযোগ বর্তমান। অথচ তারা প্রবাসে অন্যের মল তুলতে ঘৃণা বোধ না করলেও নিজ দেশের নাঙ্গল কাঁদে নিতে তাদের আজন্মের দ্বীধা!

[বি. দ্রঃ মিডেলইষ্টে কাজ করে অনেক টাকার মালিক বনে যারা এদেশে ফেরে, মনে রাখবেন তারা বেশীরভাগই ঐদেশে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে ফিরেছে অথবা কারও মাথায় আঘাত করে কাউকে নিঃস্ব করে ফিরেছে। সৎভাবে উপার্জন করে ১০০-তে কেবল ২-৫ জনেরই ভাগ্য প্রসন্ন হবার সুযোগ বর্তমান।]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন