শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

উপযুক্ততা

সময়ের পথ ধরে যে শৃঙ্খল শক্ত শিকলের বন্ধনীতে সংযুক্ত হয়, তাকে উপযুক্ত হাতুড়ি ব্যতীত টুটে ফেলা দূরহ!

আমাদের বৈশাখ আনন্দ

চৈত্র সংক্রান্তির আগেরদিন থেকে বৈশাখের প্রথমদিন, ছেলেবেলাকার সময়ে এই তিনটি দিন আমাদের কাছে বিশেষ ছিল, ছিল আকাশ ছৌঁয়া আনন্দের। আনন্দের মাত্রা যদি জানতে চান, তবে বলি- এ আনন্দ বাতাস কেটে-কেটে সুখে ভেসে বেড়ানো ঘুড়ির মতন। মনটা কি রকম জানি ভাবাবেশে আকাশে নিরলে ভাসবার অবকাশ পায়!

খুব বেশীদিন আগের কথা নয়, বছর ১৫ ফিরলেই হাতের নাগালে উজ্জিবিত অতীতের ছৌঁয়া কিছুটা খুঁজে পাই, ছুঁতে পাই। মনে পড়তেই ফিরি চৈত্র সংক্রান্তির আগেরদিন ভোর হতেই শুরু হওয়া আমাদের আনন্দ ঘনঘটার আয়োজন। ঘুম থেকে উঠেই বেরিয়ে পড়া আঙ্গিলা ফুল আর আপনফুলের খোঁজে। এই দুটো ফুলের খোঁজ পাওয়া কিছুটা কষ্টসাধ্য ছিল, ফুলের গাছগুলো আপনা হতে বাগানে উঠত এবং অপ্রয়োজনীয় বলে লোকজন বাগান পরিষ্কার করতে কেটে ফেলত। ফলত বাগানে এই দুটো ফুলের গাছ মিলত খুব কমই। ফুলের জন্য তখন আমরা ঘন জঙ্গলভরা বাগানেও গিয়ে পৌঁছতাম, যেখানে ছিল কল্পিত দু‘মাথাওয়ালা ভূত আর সাপের ভয়! কিন্তু ফুল সংগ্রহের ব্যাপারটা তখন প্রতিযোগীতার বলে ভয়টা কিছুটা কুঞ্চিত হয়ে পড়ত!

সারাটা সকাল ফুল সংগ্রহ শেষে তা ফুলের ঝুড়িতে রেখে দিলে দিদিরা সময় করে বসে-বসে ফুলের মালা গাঁথত, আর আমরা তখন কাস্তে-দা নিয়ে ছুটে যেতাম রাস্তারধারে-মাঠে। তখন মাঠে আপনা হতে জন্মাত ধুছনি গাছ, বিষকাটালি গাছ, গাগরা গাছ আর রাস্তার পাশের গাছ হতে মিলত বিভিন্ন কাঁটা (যেমন: মান্দার কাঁটা, মন কাঁটা, বেল কাঁটা, বরই কাঁটা, নাটাই গাছের কাঁটা ইত্যাদি), আমরা কাঁটা আর গাছগুলো ইচ্ছেমত কেটে একটা নির্দিষ্টস্থানে এনে শুকোতে দিতাম। সারা দুপুরের পোড়া রোদে গাছগুলো শুকনো জ্বালানির উপযোগী হলে আমরা তা উঠোনে এনে জড়ো করতাম।

সাঁঝ নামবার আগেই মা-কাকীরা ব্যস্ত থাকতেন কড়ই (চাউল ভাজা) আর খই গুড়ো করার কাজে। আমরা ছোটরা তখন দলবেঁধে ছুটছি প্রকৃতির কাছে তাকে জেগে থাকবার আকুতি নিয়ে। আগামী কাল বছরের শেষ দিন, তাই আমাদের সাথে-সাথে প্রকৃতিও আনন্দে সারা হবে সারাদিন-সারারাত্রি। এ প্রচলিত রেওয়াজ-রীতি, প্রাচীন ঐতিহ্য! আর তাই আমরা যখন বাড়ির চারপাশ-মাঠ-রাস্তায় ঘুরে-ঘুরে মাতিয়ে তুলছি-

“গাছ-গাছালি জাগিও, 
কাইল বিয়ানে (সকালে) বিশুদজলে (বিশুদ্ধ পানিতে) স্নান করিও
পুষ্পমালা গলায় দিও।”

তখন চারিদিকেও সমস্বরে বাজছে সে আওয়াজ, যেন প্রকৃতি সে বার্তা খুব আনন্দের সহিত ছড়িয়ে দিচ্ছে! অনেকক্ষন আনন্দে নেচে গেয়ে চলে আমাদের সে আনন্দ অনুভূতির প্রকাশ।

সন্ধ্যের আলো গাঢ় হলে আমরা সবাই ঘরে ফিরি। ততক্ষনে বাড়ির প্রতিটি ঘরে-ঘরে তৈরি হচ্ছে লাবন (চাউলের কড়ই বা ধানের খই ভেজে পরে শীল-পাটায় মিহি দানা করে গুড় অথবা গুড়-নারিকেল সংমিশ্রনে সুন্দর কারুকার্যে বানানো সুস্বাদু খাবার)। ঘরে ফিরলে মা-কাকীরা লাবন তুলে দিত খাবার জন্য। পেট পুরিয়ে লাবন খেয়ে কখন যে ভাত না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি আমরা জানতামই না।

তখনও হয়ত ফজরের আযান পড়েনি। মা ডেকে তুলছে বাবু-বাবুরে উঠ-উঠ সবাই উঠে গেছে, বিষকাটালি পুড়বি না? প্রশ্নটা কানে বাজতে আর দেরী হয় না। আড়মোড় ভেঙ্গে উঠোনে বেরিয়ে আসি। তখন কেউ-কেউ বিষকাটালি, ধুনছি, গাগরগাছ, কাঁটা, খড় সমেত জ্বালাচ্ছে, কেউ জ্বালাবার আয়োজন করছে। আমরাও নেমে পড়ি। জ্বালাতে গিয়ে ধৌয়ায় চোখে জ্বালা ধরার, কিন্তু উৎসাহ আর আনন্দের মাত্রায় তাতে ভাটা পড়ে না। কিছুক্ষনের মধ্যে আগুন জ্বলে উঠে, জ্বলতে থাকে শুকনো গাছ আর কাঁটা। আমরা তখন ধৌঁয়া পরস্পরের গায়ে মাখি। আর আনন্দে সমস্বরে চিৎকার দিয়ে বলতে থাকি-

“আঙ্গো বাড়ির মশা-মাছি দূরে রে দূরে..! 
আঙ্গো বাড়ির অসুখ-বিশুখ দূরে রে দূরে দূরে..!”

আনন্দের মাত্রা বাড়তে থাকলে তা শয়তানিতে পরিনত হয়, তখন সুর উঠে-
“আঙ্গো বাড়ির শয়তান-বদমাইশ দূরে রে দূরে..!
আঙ্গো বাড়ির চোর-ডাকাইত দূরে রে দূরে দূরে..!”

আসলে সব আয়োজনই প্রতীকি। প্রতীকি আয়োজনের রেশ ধরেই ধৌয়ায় উড়িয়ে দিতে চাই মনের সমস্ত ভয়, অহং, পীড়া, জরাজিহ্নতাকে, লোভ, ক্ষোভ, পাপ-তাপকে।

যখন আবছা আলো-ছায়ার খেলা সাঙ্গ হচ্ছে কেবল, তখন থেকে মা-দিদি-কাকী-জেঠি‘রা বাড়ির পাশের মাঠ হতে ডিমাই শাক, থানকুনি শাক, কুমড়োর ডাটা, মাইরার ডাটা, আইল্লা (কলা গাছের অভ্যন্তরের নরম অংশ), কাঁচা কলা, বন আইডগা (বাগানে জন্মানো কাঁটাযুক্ত একধরনের সরু কচু), কচুর লতি, ঢেঁকি শাক, পুঁই শাক, কাঁচা কাঠাল ইত্যাদি সংগ্রহ করে। এরপর সবাই মিলে উঠোনে বসে শুরু হয় কাটা-কুটি। কাটাকাটির আইটেমে আরও যোগ হয়- কাঁচা আম, কাঁচা পেঁপে, মিষ্টি কুমড়ো, মিষ্টি আলু, সাজনে ডাটাসহ আরও সুবিধাজনক আইটেম। আর এইসব আইটেম একযোগে পাঁচপোড়নের সম্বাদে রান্না হয়ে তৈরী করা হয় সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার “পাচন”, তবে কেউ-কেউ বোধকরি “সুপ্তী” বলে থাকে।

দুপুর হতেই বাড়িতে কাঁচা হলুদ আর নিমপাতা বাটা হয়। বাটা কাঁচা হলুদ আর নিমপাতা বৎসরের শেষ দিন গায়ে মাখতে হয়। আসলে এইদিন নিজেকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হয়, নিষ্কোমল মন নিয়ে নতুন বৎসরটিকে শুরুর প্রত্যাশায়। এরপর স্নান করতে যাবার কালে বাদিগাছের ফল হাতে করে নিয়ে স্নান করার সময় পানিতে ডুব দিয়ে খেয়ে নিতে হয়। প্রাচীন বিশ্বাস এতে নাকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

স্নান সেরে এসে পরিষ্কার পোশাক পড়ে নারীরা আঙ্গিলা ফুলের মালা ঘরের সন্মুখ দরজায় লাগায় আর আপন ফুলের মালা গরুর গলায়, আর পুরুষরা শত্রু কাটাকাটি খেলে। পুরুষ ছেলে-বুড়ো সবাই এই খেলায় অংশ নেয়। খেলার নিয়ম হল- মাটিতে কাস্তে বা লোহার ফলা দিয়ে মানুষের মত করে একটা ছবি আঁকতে হয়, তারপর তার উপরে এক-দুই মুষ্টি খই ছিটিয়ে ছবির উপর একটা কাঁচা আম বসিয়ে তা কাটতে হয়। কাটার সময়কালে পাশে থাকা একজন তাকে জিজ্ঞাসা করে- 

কি কাট কি কাট?
যে কাটে সে জবাব দেয়-
আম কাটি...
এরপর আবার প্রশ্ন আসে-
আর কি কাট?
উত্তরে- শত্রুর মাথা কাটি। বলেই আমটিকে এক কোপে কাটা হয়।

এরপর শুরু হয় খাওয়া-দাওয়ার পালা। চৈত্রের শেষ দিন নিরামিষ খেতে হয়। এই দিন পাচনের সাথে সামার্থ্য অনুযায়ী খাবারের আইটেমে থাকে চাটনি, দধি আর মিষ্টি জাতীয় মুখরোচক খাবার।

বৈশাখের প্রখমদিন সবাই ভালো-মন্দ খেতে চায়। বেশিরভাগেরই বিশ্বাস এইদিনটি মন্দ হওয়া মানে বছরের বাকি দিনগুলোও মন্দ যাওয়া। তাই এই দিনটাকে সবাই নিজেদের মতো করে উপভোগ করার চেষ্টা করে।

আনন্দের দিনগুলো খুড়িয়ে এসেছি। এখন যান্ত্রিক জীবনে আনন্দসারা হয় অফিসের কাজের চাপে। কিন্তু জীবনে ফেলে আসা আনন্দের দিনগুলো একটু নিস্তব্ধতা ফেলেই হাতছানি দিয়ে ডাকে। সময়েগুলো কালাকালে ব্যাকুল হয়ে রয়।

স্মৃতি ও সুখ

স্মৃতিরা বারবার ফিরে আসে
খুশির লগন আজও মনে ভাসে...

জানাবে কি গোপন ব্যাথা

মাধবীলতা গো...
রাখিলে জড়ায়ে, প্রভাতে সংশয়ে
জানাবে কি গোপন ব্যাথা জনে?
আমাদের প্রণয়তৃষা জাগে যা মনে?

গোপনে বাস যারে

ওগো নীল অপরাজিতা;
শোনো মনের কথা
গোপনে বাস যারে
সে জানে কি?
তোমার সজল আঁখি।

প্রেমানু সূর্য্য

ভালোবাসায় মোদের আকাশ মাটি ব্যবধান হতে পারে,

জেনে নিও এও-
তোমার আকাশের প্রেমানু সূর্য্য
হৃদয়ের শূণ্যতা আমার আলোতে দেয় ভরে!

পরিস্থিতি মোকাবেলা

ঠান্ডা মাথায় যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করবার মত মানষিক দৃড়তা চরিত্রের সবচাইতে বড় গুণ, যা বেশিরভাগ মানুষেরই থাকে না।

আজ অফিসে আসার সময় শতাব্দী গাড়ির গেইটম্যানের চারিত্রিক দৃড়তায় আমি মুগ্ধ। মুলত পরিস্থিতি খারাপ হতে না দিয়ে অন্যায়কারী কে যথাযথ জবাবে প্রতিহত করবার মত দক্ষতা কেমন হতে পারে তা দেখলাম। 

ঘটনাটি হল- আমাদের গাড়ি পল্টনের কাছাকাছি পৌঁছতেই বামদিকে একটু সাইড করায় একটা মাইক্রো গাড়ি বের হতে অসুবিধা হওয়ায়, সে গেইটম্যানকে বাজে ভাষায় গালি দিতে থাকলে গেইটম্যান কিছুক্ষন চুপ থেকে জবাব দিল- আমাদের দুজনকে দেখতে তো একই দেখাচ্ছে, যদি আমি তাই হই তবে আপনিও তো ভিন্ন হবার কথা নয়। 

চিন্তা করুন- সে কি করে একই গালি প্রতিপক্ষকেও দিল। অথচ প্রতিপক্ষের কিছুই বলার সুযোগ থাকল না।

একদিন

একদিন দেহ অনলে পুড়ে হবে ভস্ম ছাই
অথবা মাটিতে মিশে যাবে সমস্ত অহং বড়াই...

স্বপ্ন আছে বলে

স্বপ্ন আছে বলে যেছে যাই
ভাববে কি আমায়?
তোমার ভাবনার খেয়ালে
স্বপ্ন কল্পনায়...

অভিমান

যাবে বলে ছুটলে যখন
আমিও ফিরে চাইনি
অভিমান কেবল সে তোমারি
আমি কি অধিকার পাইনি?

দেখা হয়েছিল সে কবে

দেখা হয়েছিল সে কবে
কোন এক পৌষ-ফাগুনের মেলায়
মনে পড়তেই দশকের সংখ্যা পেরুই
ফিরে যাই পৌষ-ফাগুনের মধ্যদুপুর...
আগন্তুক তুমি আমি আর আমাদের চঞ্চল চোখ
মুখোমুখি হতেই কত লুকোচুরি খেলত লজ্জায়!

দেখা হয়েছিল সে কবে
কোন এক পৌষ-ফাগুনের মেলায়
সেদিন তোমার আর্দ্রগালে ছিল মল্লিকের কুসুম ছড়ানো টোল
বাঁশবনের মাতাল হিমেল হিল্লোলে ছিল কোকড়ানো চুলে দোল
আর উড়ু-উড়ু মনে পাখা মেলে উড়ছিল প্রজাপতি
আকাশের সাতরং সবুজ গায়ে মাখছিল রবি জ্যোতি

দেখা হয়েছিল সে কবে
কোন এক পৌষ-ফাগুনের মেলায়
হয়ত নির্জীব আলোড়নে মনে কোন সংবেদন পেয়েছিলে
অথবা নিলর্জ্জ কারও চোখকে দিতেছিলে ক্ষমাহীন মুক্তি!
তবুও দুটি চোখ আবদ্ধ বলয়ে বেঁধে নিয়েছিল...
আপনার আপন ভেবে আপনাকে সঁপে দিয়েছিল।

দেখা হয়েছিল সে কবে
কোন এক পৌষ-ফাগুনের মেলায়
জীবনের ভালোলাগা রং বদলে যায় সময় পেরিয়ে
ভালোলাগা ভালোবাসা পায় বার-বার অভ্যর্থনা পেলে
অথচ ভালোলাগা সে দাগকাটা হৃদয়
তুমি তো দেখলে কেবল ক্ষনিকই
আড়াল হতে আগলে হৃদয়
কি করে বুঝবে কেউ বাসে ভালো নীরবেই...

দেখা হয়েছিল এইতো সেদিন
এদিনও ছিল ফাগুনের আগুন রাঙ্গানো বেলা
হয়ত ভুলেছ হয়ত মনে আছে
কিন্তু চিনলে না বলে বুঝতে পারি
এ‘কেবল আপন মনে রাঙ্গানো আলতার রং
ধ্রুবকরাশির মান মেলাতে যা মুছতে হয় সহস্রবার
কালবেলায় কারও বেদনার ব্যর্থ অনুচ্ছেদ রচনায়।



পরাজিত

পরাজিতের নিষ্কৃতি নেই, সে হেরে যাবার বাসনায় বারবার জন্মায়!

আমি মূর্তিপূজা শতভাগ সাপোর্ট করি

আমি মূর্তিপূজা শতভাগ সাপোর্ট করি এবং এটাকে সম্মানের সহিত দেখি। অনেকে বলতে পারে এটা আমার ধর্মের অনুসঙ্গ হিসেবে তা আমি করি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা মোটেই নয়। কারন জন্মে মানুষ যদিও পরিবার কিংবা তার সমাজের ধরুন কোন বিশেষে আকৃষ্ট হয় কিংবা তার প্রতি দূর্বলতাবোধ করে। কিন্তু বিস্তৃত সমাজ পরিসরে বসবাস করতে গিয়ে সকলের সামষ্টিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে সে ঘোর অনেকটাই কেটে যায় বলেই আমার বিশ্বাস।

এখন প্রশ্ন হতে পারে- কাল্পনিক, পৌরনিক অথবা মৃত মিথ!!! -কে বিশ্বাসে আগলে আমার সাপোর্ট এবং সম্মানের কারন বা হেতু কি?

যদিও লেখালেখির কলরোলে আমাকে খুব কমজনই জানে- তবুও সত্য যে, আমি দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখির সাথে সংযুক্ত। আর এ লেখালেখি করতে গিয়ে আমি একটা বিষয় খুব বেশি অনুধাবন করি, তা হল- বাস্তবতা আপনি যতই নিরীক্ষন করুন না কেন, আপনার পর্যবেক্ষনকে রুপদান করতে গেলে অথবা তাকে নিখুঁত ফুটিয়ে তুলতে গেলে, আপনাকে অবশ্যই আবেগ এবং কল্পনা- এ দুইয়ের আশ্রয় নিতেই হবে। আবেগ ব্যতীত অনুধাবন যেমন সম্ভব নয়, তেমনি কল্পনা ব্যতীত বিষয়ের আশ্রয়ও কঠিন। ধরুন রুপগুণহীন নারী সুদর্শন পুরুষকে কামনা করছে যদিও তার অনুপযুক্ততার বিষয়ে সে শতভাগ নিশ্চত। একইভাবে কল্পনায় যে পুরুষটি সুদর্শনা নারীটিকে ছুঁয়ে যাচ্ছে! তাও মিথ্যা। কিন্তু তবু তাতে তারা আবেগের আহ্লাদী আহবানে অন্তরের প্রসন্নতার খেয়ালটুকু মিটিয়ে নিচ্ছে। আসলে চোখের দর্শন আর ব্যক্তি আকর্ষন কখনোই উপযুক্ততা কিংবা অনুপযুক্ততা খোঁজে না, যতটা অতৃপ্ত বাসনার খেয়াল মেটায়।

আমি কি আমার বিষয়ের বাহিরে চলে যাচ্ছি? না মোটেই না। আসলে আমি জানাতে চাইছি, সুদর্শন-সুপুরুষ, সুদর্শনা-গুণবতী নরনারী যদি না হত অথ্যাৎ সবাই দেখতে এক হত, তবে ভিন্নভাবনার প্রাসঙ্গিকতা আসত কোথা থেকে? 

তারমানে, ভিন্ন ভাব-ভাবনা সে প্রকৃতির ইচ্ছেতেই হচ্ছে আর দুনিয়াতে বেঁচে থাকবার এই কেবল অনুসঙ্গ!

অন্য আর একটি প্রসঙ্গে ফিরি- ধরুন আপনার কাছে জানতে চাওয়া হল- আপনি বেঁচে থাকতে চান কেন? আপনি কি জবাব দেবেন? আপনাকে ভাববার সুযোগ দিচ্ছি, দয়া করে ভেবে বলুন। ভাবতে দিলে অনেকে হয়ত উত্তর দেবেন, স্রষ্টার ইচ্ছেতে তাঁকে ডাকতে, তাঁর চরণের সান্নিধ্য পেতে! কিন্তু মুখ থেকে বেরিয়ে পড়া কথাগুলো কোনটাই বিশ্বাসযোগ্য মনে করি না। এগুলো কেবলই বলার জন্য বলা কথা, দু একজন ব্যতীত বাকি সবার বেঁচে থাকবার ইচ্ছে ভিন্ন, যেটা মন ভাবছে কিন্তু মুখ বলছে না। আসলে বেঁচে থাকবার বাসনায় মানুষের ইচ্ছেতে প্রথম স্থান পায় আত্মপ্রসন্নতা। মানে মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার ইচ্ছেতে সুখ-স্বাচ্ছন্দ-বিত্ত-বৈভব-আনন্দ-অভিলাষ এগুলোই আগে স্থান পায়। আর পূজা-পার্বন হল একপ্রকারের আনন্দ-অভিলাষ। যা অন্তত একদিনের জন্য জীবনে বেঁচে থাকবার গতি দেয় আর মনের ভিতরকার আকাঙ্খার প্রকাশকে শূন্যে ছুড়ে দেয় ধরার আগ্রহে।

আর মূর্তি?

এটা কেবলই প্রতীক। সনাতন ধর্ম মতানুসারে- নিরাকার ঈশ্বরের আরাধনা কঠিন বলে মানুষ সাকারের পূজায় আকৃষ্ট হয়। এখানে ঐ বিষয়টিই আগে প্রাধান্য পায়, সুদর্শন কিংবা সুদর্শনার রুপালব্ধি সহজ বিধায় অনুপযুক্ত কিংবা আপ্রাসঙ্গিকেই ঘিরেই সকলে অভিলাষ সঁপে বাঁচে।

পরিবর্তন

সময়ের প্রবাহ বয়ে কিছু মানুষ সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠে, তবে বেশিরভাগই মুখোশে মানুষরুপ ধরে আর কিছু সারাজীবন অমানুষই থেকে যায়।

আক্ষেপের বেদন

কলি বলল- যদি প্রজাপতির রঙ্গিন ডানা আঁকতে পার
বসন্তের মাতাল হাওয়ায় ফুটব বেনুবনে, দুলব দ্যৌলায়!

সে থেকে তুলি হতে আপন খেয়ালে
আঁকি স্বপ্ন, রঙ্গের আল্পনা
অথচ বসন্ত আসে বসন্ত যায়,
হয়না আঁকা প্রজাপতির ডানা!

অক্ষম'রা

সময়ে মনের কথা মুখে জানাতে অক্ষম'রা গোপনে কারও দহনে দহে।

জঙ্গিবাদের উত্থান অনুশীলন কাদের ধ্বংস করবার জন্য?

উইকিপিডিয়ার তথ্যনুসারে এদেশে প্রায় ১০% ভিন্ন ধর্মালম্বির মানুষের বসবাস। ৯০% মুসলিমের বসবাসের দেশটিতে প্রায় ৭০% এর বিশ্বাস এ দেশ তাদের, তাদের আচার-আচারন ও প্রভাব খাটাবার মানসিকতাও অনেকটা তদ্রুপ। স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বে যদি ভিন্ন ধর্মালম্বিদের অবদানটুকু অস্বীকার করা যায়, তবে সবকিছুই তাদের মনোভাব মর্জিতে চালানোর প্রচেষ্টা প্রকটই। ব্যাপারটিকে আমি স্বাভাবিক দৃষ্টিতেই দেখার চেষ্টা করছি। এখন আমার প্রশ্ন ৯০% মুসলিমদের এদেশে এত জঙ্গিবাদের উত্থান অনুশীলন কাদের ধ্বংস করবার জন্য? যদি ১০% কে হয়, তবে এত আয়োজনের প্রয়োজন তো দেখছি না। না বলছিলাম ৭টা হাত ১ টা গালে পড়লেই তো সে পড়ি-মরি করে মরবে!

এইটুকু আলোয় দেখাবে বেশ ভালো

ঘোর অমবস্যাও নামল পূর্ণিমার চাঁদ
তখন আমি ছুটছি জোনাকের পিছে,
আমার দশায় হেসে কুটিকুটি চাঁদ
বলল- বোকার মত ছুটছ কেন মিছে?

ঘেমে-নেয়ে হাসিমুখে বলি
শোনো হে অপরূপ সুন্দরী
আমার আঁধার কুঞ্জকাননে রয়েছে যতটুকু কালো
সে কালোয় এইটুকু আলোয়, দেখাবে বেশ ভালো।

শূন্যতা

সবকিছু সাজানো তবু- কি যেন নেই
বয়সে বাড়ে শূন্যতা, শূন্য সবখানেই

আগলে তা বইবে আমায় আজীবন

দুনিয়া চাইছে
চাইছে সবাই
তুমিও যদি চাও তা...
ক্ষমা চেয়ে বলব, প্রিয়তম
আছে কেবল দেবার মত
অন্তর আর আবেগী কবিতা

আগলে তা বইবে আমায় আজীবন!

আমি কি ধান্ধার কিছু কইলাম?

বন্ধু করিম (নানা ডাকি) কইল- জিমে টাকা দেয় কারনে জিমে যাবার গরজ থাকে। এর আগে কয়েকবার সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যয়াম করার কথা থাকলেও গরজে করা হয়নি।

আমি কইলাম নানা তয়লে তুই প্রতিমাসে আমারে ২০০০টাকা দিয়ে প্রতিদিন ফজরের পর থেইকা খালি দৌড়াবি। মাসে ২০০০টাকা চলে যাচ্ছে, এ টেনশানে দেখবি তোর দৌড়ানি থামে না...

নানা কয়, দাদা তুই ধান্ধাবাজ। জিগাইলাম কেমনে? কয় আমি নাকি ভুলাইয়া ভালাইয়া টাকা নেবার দান্ধা করতাছি।

এহন আপনেরা কন, আমি কি ধান্ধার কিছু কইলাম? আমার তো কেবল নানার গরজ বাড়ানোর চিন্তা আছিল!!