বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬

ভারতীয় দালাল!!!

মাঝে-মাঝে কিছু লোকের সাথে অনিচ্ছায় বিতর্কে যেতে হয়। তাদের ভাষায় ভারত হিন্দুদের দাদার দেশ। হিন্দুরা ভারতের দালাল। তাদের কথায়-বার্তায়, আকার-ইঙ্গিত কিংবা উদ্দেশ্য কি? কথার বাকামিতে তারা এমন ভাব ধরে যেন আমরা কিছু বুঝি না। কিন্তু তাদের যদি প্রশ্ন করি এদেশে আপনার আমার নাড়ি ছেঁড়া রক্ত মাটি শুষেছে, এদেশের আবহাওয়ায় আমরা উঠেছি-বসেছি-খেলেছি। তারসত্বেও যদি আমাদের এদেশের চেয়ে ভারতের প্রতি দূর্বলতা বেশী হয়, তবে এদেশে বসবাস করে আপনাদের কাদের জন্য জ্বলে? আসলে তাদের কথার ভাবে মেনে নিতেই হবে- আসলে আমরা এদেশে নই, আমাদের মন-প্রাণ সব সঁপে দেয়া ভারতের জন্য। যদি আমি বা আমরা নাও হই, তারা জোর শক্তি প্রয়োগ করে হলেও আমাদের তা মানাতে বাধ্য করে ছাড়বে মনে হয়। আসলে দুনিয়াটা সত্যি খুব মজারু! এখানে ক্ষমতাই মূখ্য আর বাকী সব মৌন। ক্ষমতায় রাতকে ঝাড়বাতিতে দিন করে আর দিনকে কপাটের আড়ালে লুকিয়ে রাত করে। কিন্তু সাধ্য কিংবা সীমাবদ্ধতার কিংবা সত্যটা যথাযথ স্বীকৃতির ধার ধারেনা।

এখানে আমাদের কে ভারতের দালাল বলার কারণ হিসেবে তাদের যুক্তিগুলো শুনুন- বেশ রং চঙ্গা যুক্তি, জানা থাকলে যেকোন হিন্দুদের দালাল আখ্যায়িত করা আপনার জন্যও সহজ হবে। যুক্তিগুলোঃ

১) বাংলাদেশের প্রত্যেকটি হিন্দুদের আত্মীয়-স্বজন ভারতে আছে (কি কারণে সেটা বিবেচনার বিষয় নয়, কারণ.....সে না বললেও যারা বোঝার বুঝবেন নিশ্চয়ই)
২) বাংলাদেশের হিন্দু‘রা খুশিতে বসবাস করার জন্য ভারতে ছুটে।
৩) হিন্দু‘দের উপর এদেশে মানুষ অন্যায় অত্যাচার করলে তারা ভারতের কাছে বিচার দেয়।
৪) এরা ভারত সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত আওয়ামীলিগকে ভোট দেয়।
৫) ভারতের বিভিন্ন চ্যানেলের প্রতি এদের দারুন আকর্ষন, এরা দেশী সংষ্কৃতি বাদ দিয়ে ভারতের সংষ্কৃতির প্রতি দাবমান। (যদিও বাংলাদেশের সত্যিকারের সংষ্কৃতি আসলে কি ছিল বা কি হচ্ছে তারা তা ভুলতে চেষ্টা করে অর্হনীশ।)
৬) হিন্দুরা ভারতের বাংলাদেশের উপর অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদ করে না। (যদিও বাংলাদেশের সামগ্রিক ইতিহাস বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, এদেশের মানুষের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার ইতিহাস সংখ্যার বিচারে এখনও হিন্দুরাই এগিয়ে। এটা মুখের কথা নয়, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়।)
৭) হিন্দুদের ভারতীয় কবি-সাহিত্যিকদের (রবীন্দ্রনাথ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর....) প্রতি দূর্বলতা।
৭) আরও আছে, এ মুহূর্তে মনে করতে পারছি না।

এসব বলার পর তাদের যদি প্রশ্ন করা হয় এর জন্য যদি হিন্দু‘রা ভারতের দালাল হয়ে যায়, তবে বলুন-

১) আপনারা ভারতের চ্যানেল বর্জন করতে লাফালাফি করেন, অথচ মজার কথা আপনাদের প্রিয় নায়ক নায়িকাদের লিষ্টে এগিয়ে- সালমান খান, শাহরুখ খান, ফারদিন খান, আমির খানসহ ভারতের সব মুসলিম নায়ক‘রা, যদিও তারা আমারও প্রিয় নায়কের তালিকায়। তবু এদেশের মুসলমানদের তালিকাটি কিন্তু বিভাজিত।)
২) তেনাদের প্রিয় শিল্পীর তালিকায়, ভারতে গান গেয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া আতিফ আসলাম, আদনান সানি.....
৩) ভারতের চ্যানেলে প্রতি তীক্ততা থাকলেও তারা আবার ভারতের পিস টিভির দারুন ভক্ত।
৪) ভারতের সব নিকৃষ্ট বর্বর কিন্তু জাকের নায়েক, মওদুদী, ড. আবুল কালাম আজাদ তাদের আদর্শ। জাকের নায়েক আর মওদুদীর আদর্শ উদ্দেশ্য স্থাপনের জন্য তারা এমন কোন ঘৃন্য পথ নেই, যাতে আশ্রয়ে তাদের কার্পণ্যতা আছে।
৫) ভারতের সনিয়া মীর্জা পাকিস্থানের মালিককে বিয়ে করাতে তেনাদের সুখ বলে শেষ করা যাবে না।
৬) রবীন্দ্রনাথ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ভারতীয়, তাই এদেশের সমস্ত পুস্তক থেকে তাঁদের বাদ দেয়া (আসল উদ্দেশ্য বাংলাভাষাটাকে মুছে দেয়া, একথা বলছি কারন- বাংলাসাহিত্যে তাঁরা ব্যতীত বাংলা সাহিত্যের আধো অস্তিত্ব আছে কিনা, আমার জানা নেই)। কিন্তু তাদেরই আবার ভারতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি নির্মোহ দূর্বলতা। ঘটনাটি প্রশ্নবিদ্ধ।

এসব বিষয় যদি বলা হয় এবং একই অভিযোগে তাদেরকেও ভারতীয় দালাল বলা হয় তখন এরা রক্তচোখে আপনাকে মারতে হুমকি দেবে না এও বলা মুশকিল। অতএব হিন্দু‘রা ভারতীয় দালাল তমকা নিয়েই এড়িয়ে চলুন জান বাঁচাতে, জানেন তো জান বাঁচানো ফরজ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন