বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬

ধর্মবোধ ও আমরা

আমরা মানুষ হবার যতটা না চেষ্টায় রত, তারচেয়ে বেশী চেষ্টায়রত ধর্মকে আশ্রয়ে রাখতে। তবে কি আমরা ধার্মিক?

এই প্রশ্নের প্রতিউত্তর একটাই- ধর্মের নির্দেশনা ধর্মীয় অনুশাসন যথাযথভাবে পালন, একে অপরের সাথে মিথ্যা কিংবা জোচ্ছুরি না করা, সৎ পথে চলা, কারও ক্ষতির মানষিকতা পোষন না করা, নিজের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা কিংবা থাকার সর্বোত্ত চেষ্টা করা, কারও গীবত না করা, সামার্থ্য অনুযামী দান-সদকা দেয়া, মনুষ্য জ্ঞাণে আবদ্ধ থাকা, মাণবতা পোষন করা, কারও ক্ষতি না করা, কারও উপর অন্যায়-অত্যাচার থেকে বিরত থাকা এবং সর্বোপরি সর্বোত্তভাবে সকলের সহিত যথার্থ বন্ধুত্বপূর্ণ আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখা।

কিন্তু আমরা কি দেখছি? আমরা দেখছি মন্দিরে বড়-বড় ধর্ম যাজক নামধারীরা জানাচ্ছে হিন্দুদের উপর অমানুষিক নির্যাতনের কথা, প্রার্থনা করছে তাদের ধর্মের লোকদের সু-প্রসন্ন জীবনের জন্য। মসজিদের ইমাম তিনি বয়ান দিচ্ছেন সমগ্র মুসলিম জাতির দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে, দোয়া করছেন মুসলিম ভাইয়েরা যেন জালিমদের দুঃখ-নিপীড়ন উতরে আল্লার পথ ধরে বেহস্তবাসী হয়। একই অবস্থা বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, গুরুধর্মসহ প্রায় সকল ধর্মের বেলায় বর্তমান।

আমরা প্রত্যেকে এক-একটা পরিবারের সন্তান, আমরা দেখতে পাই আমাদের প্রত্যেকের পরিবারের অভ্যন্তরের প্রত্যেকের মানষিকতা কিংবা আদর্শ এক নয়। যদি একই পরিবারের অন্তর্ভূক্ত হবার পরেও আমরা সম-মানষিকতা সম্পন্ন না হই, তবে সমাজ-সংসার কিংবা ধর্মীয় বিধি-নিষেধ মেনে আমরা সকলে কি করে এক হব? যদি একটি পরিবারের একজনের উগ্রতায় পরিবারের সবাইকে সামষ্টিক বিচারে আনা না হয়, তবে কেন ধর্মীয়বোধের উপর ভিত্তি করে মানুষে-মানুষে পৃথক হবে? সবধর্মের পালনকারী যেহেতু মানুষ- অতএব দৃষ্টিভঙ্গি, মানষিকতা কিংবা আদর্শিক বিচার-বিবেচনায় আনলে প্রত্যেক ধর্মে এমন কিছু মানুষ আছে- যারা আগ্রাসী, ধর্মের নাম করে এরা রক্ত নিয়ে হোলি খেলায় মজতে পছন্দ করে। এরা ধর্ম নিয়ে মানুষ নির্ণয় করতে চায়- মনুষ্যত্ব কিংবা মানবিক বিরেচনায় নয়। এরা দেখাতে চায়- এই ধর্মের লোক আমাদের এই করেছে, ঐ ধর্মের লোক আমাদের পাছায় বাঁশ দিয়েছে, ওরা আমাদের ধ্বংশ করতে চায়, চলুন আমরা আমাদের ভাইদের জন্য দোয়া করি। কিন্তু এরা এতটুকু বিবেকেও কখনও মানুষ হিসেবে ব্যক্তির উগ্রতা কিংবা হিংস্রতাকে দেখাতে চায় না। আসলে উদ্দেশ্য বিবেচনায় নিলে এরা চায়, শুধু নিজ ধর্মকে প্রচার আর প্রসার ঘটাতে। এতে রক্তের লিপ্সায় অন্যকে হিংস্র জানোয়ার বানাতে এদের বাঁধে না।

যদি একজন ধর্মীয় আদর্শ পালনকারী নেতা শুধুমাত্র ধর্মীয় প্রচার-প্রসারের নেশায় পড়ে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মানুষকে মারার নির্দেশ দেয় কিংবা কারও ইচ্ছের বিরুদ্ধে নিজের আদর্শিক মতাবাদ জোর করে চাপিয়ে দেয়, অথবা আদর্শিক মতবাদ চাপাতে না পেরে তাকে নিঃস্ব করে কিংবা তাকে কুপিয়ে হত্যার পরোক্ষ মদদ দেয়, তিনি কি করে সঠিক ধর্মীয়গুরু কিংবা ধার্মীক? যদি নিজের বিবেক-বোধ এতটুকু অন্তত থাকে তবে এই রক্তের হোলিখেলা থামাবার জন্য এখনই তা বিবেচনায় নিতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে এখনই, সেসব ধর্মীয়গুরুদের ভূল এখনই ধরিয়ে দিতে হবে। বলতে হবে আপনি মানুষের জন্য দোয়া করবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, মুসলিম কিংবা নিজ ধর্ম অন্তর্ভূক্ত ভাইদের জন্য নয়। আমরা মনুষ্যত্ব বিশ্বাসকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাই, বিষাদে নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন