বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০১৬

আশা-নিরাশা

তারা বলেছে তোমরা শ্রম দাও, হও দেশ উন্নয়নের অংশীদার
সকলেই রক্তঝরা প্রতি কনার মূল্য পাবে মনে করি অঙ্গিকার

আমরা দেশমাতৃকার মাথা পাহাড়সম উঁচু করার করি প্রতিজ্ঞা,
শৈশব ভূলি কৈশর হেলি যৌবন করি জলাঞ্জলি
বৃদ্ধ হাল কাঁধে বয়ে পাই নাঙ্গল-জোয়ালে বেঁচে থাকার আজ্ঞা

দেশমাতৃকাকে দেয়া কথা রাখতে হই বিদেশ-বিভুঁইদের গোলাম
রাত-দিন ঘুম ভেঙ্গে শ্রম দিয়ে সদা করি কর্পোরেটরদের সালাম
হাতুড়ির লৌহ আঘাতের ক্ষতগুলো করি প্রতিনিয়ত আড়াল
অকারণ অন্যায়ে শত যাতনাগুলো সহে করি অশ্রু আবডাল

চারদিকে যখন একটু-আধটু আনন্দঘন ঘন্টা শুনি,
শুনি বাতাসে ভেসে আসা শব্দ এগিয়ে যাচ্ছি আমরা
শুনে সুখ পাই- ভাবি এতদিনে কষ্টরা হচ্ছে সারা
কিন্তু হায়; পৌড়া কপাল আরও পুড়ে নিরাশায়...

যারা স্বপ্নটাকে সত্যি করবে বলে দেশের হাল নেয় তুলে
আমাদের রক্তের প্রতিটি ফোঁটা তরল গিলছে তারা ভুলে...

চোখ

সব চোখের রং এক থাকে না
সময়ে সব চোখ এক দেখে না
কখনও চোখ সৃষ্টি দেখায়, কখনও আবার কর্ম
কখনও সমাজ-ধর্ম শেখায়, কখনও আবার মর্ম

ভালোবাসার অনুসঙ্গে

বীণাকে ভালোবেসে ফেলেছি মুগ্ধতা ঝরা চঞ্চল নয়নভোলা হাসি দেখে
তারপর থেকে এক অদৃশ্য মায়া সারাদিন তার কাছে টেনেছে
হঠাৎ সামনে দাঁড়াবার সাহস ছিলনা, তবু ব্যকুল অনুসঙ্গ ভোগালে
পথ আগলে দাঁড়াই, বলি কাউকে ভালোবাসিস বীণা?
বীণা- আকস্মাৎ প্রশ্নে কিছুটা দ্বীধা নিয়ে বলে; কেন?

বলি- চলিস তো নদীর মতো এঁকে-বেঁকে, পায়ের নুপুরে কি খেয়াল রাখিস?
বীণা বলে- তুই বড্ড পাগল হয়েছিস, নুপুরে চেয়ে হাঁটতে কি হোঁছট খাব?

কবির অকাল প্রয়ান

যৌবনে সম্ভবনাময় কবির ঔরস প্রোথিত গর্ভ হতে
আজ নেমে গেল জন্মবিধৌত মৃত প্রসব যন্ত্রণা
তার দশমাস সন্তান যাতনা ছিল
সতর্ক চলনেও তার অন্তঃ ছিল ভার
ডাক্তারি পরীক্ষা সব ঠিকঠাক ছিল
আল্ট্রাসনোগ্রামেও সমস্যা পায়নি খুঁজে
জন্মদানের ব্যাপারটিও ছিল স্বাভাবিক
তবুও অপ্রাকৃত পৃথিবীতে মৃত প্রসবের জন্ম যাতনায়
কবির অকাল প্রয়ান তিথীটাও এঁকে গেল।

মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ডাক

আজ আবার তাই পথে-ঘাটে
ধরি সুরে পথ হারাবার গান

ওরে আয় আয় আয়রে তোরা
ভবঘুরে আছিস যারা
পথ হারিয়ে পথ খুলে দেই
মন বাউলার টান।

মানুষ, আমরাও ছিলেম একদিন!

ঝুলবারান্দায় বসে-বসে পচে গেছে মন
সভ্যতার স্তুপে জমে শহুরে যান্ত্রিক দর্শন
যাবতীয় কোলাহলে জমে যত ত্রাহি-ত্রাহি রাহুদশা
তারি মাঝে আমরা বাঁচি, দেহপৃষ্ঠে নিয়ে লাগাতার ব্যস্ততা...
ভূ-মৃত্তিকা জানে কি না জানে
জানি না আমরা শেষ কবে পেয়েছি সে দিন
বৃত্তের আবর্ত বলয়ে পড়ে থেকে আজন্ম
দু‘হাতে বিলিয়ে দিতে বে-রসিক স্বপ্নঋণ
জানে সবে গন্তব্যে জনে-জনে ফিরতে হয় একদিন
তবুও সভ্যতার ভূতলে কষাঘাতে ঠেকে মাথা
বলে চলা হায় মানুষ, আমরাও ছিলেম একদিন!

ভিন্ন


যার জীবন ভিন্নগতিতে চলে, তার জগতটাও ভিন্ন...

কিছু জীবন বিলিয়ে দেবার

কিছু জীবন বিলিয়ে দেবার
ফুল ফোঁটে!!!
প্রকৃতির মাঝে সৌন্দর্য্য বিলায়
মুগ্ধ হতে গন্ধ বিলায়
ফলরুপে শাস বিলায়
প্রেমিকের ডাকে প্রেম বিলায়
সুবাসে কারও মৃত্যু বিলায়
বীষ শুষে কারও জন্ম বিলায়
বীজরুপে বংশধারা বিলায়।।

কেউ যদি জানতে চায় ভালোবাসা কি?

কেউ যদি জানতে চায় ভালোবাসা কি?
আমি বলব এটি তিনটি অংশের সমন্বয়-
প্রথম অংশটি আবেগ- “যা কাউকে নিয়ে ভাবতে শেখায়, কারও ভালোটাকে খুঁজে দেখায়।”
দ্বিতীয় অংশটি লাম্পট্য- “যা অধিকারে নিতে চায়, আত্মগ্লানিতে ভোগায়।”
শেষ অংশটি মায়া- “যা বন্ধন চায়, সারাজীবন কাউকে আগলে রাখার প্রত্যয়ে পুড়তে চায়।”

এখানে সম্পূর্ণতাই কেবল ভালোবাসা, সে পূর্ণতা পাক কিংবা না পাক।
যার কলকাকলী প্রথম অংশেই সম্পন্ন হয়- তার কাকলীটুকু ভালোবাসা নয়, শুধু ভালোলাগার ভ্রম।
যারটা দ্বিতীয় অংশ সম্পন্ন হবার পরপর বিনষ্ট হয়- তারটা কেবল দৈহিক কামনা, স্বার্থসিদ্ধি।
ভালোবাসা তখনই কেবল পূর্ণাঙ্গরূপ পায়, যখন দুটো মনের দ্যোটানা একবিন্দুতে পরিসমাপ্তী টানতে চায় বারংবার।

মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

সৌন্দর্য্য অনুভবের....

সৌন্দর্য্য অনুভবের, গন্ধ চেনার আর শাস ক্ষুদা মেটাবার প্রয়োজনে...

চাইলেই সৌন্দর্য্যও খাওয়া যায়, গন্ধ অনুভব করা যায় আর শাসটাকে চিনে রাখা যায়, তবে তাতে কেবল প্রকৃতির রুপটাই বিরূপ হয়....

স্বপন

স্বপন জীবনটাকে নিয়ে সত্যিকারের ভাবনায় পড়ে গেল!! নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে সে অন্যভুবন ধরে হাঁটছে আর নিজের সাথে বলছে, না আমার কোন স্বপ্ন নেই, স্বপ্ন থাকতে নেই। বারংবার হোঁছট খেয়ে পড়াটাই আমার জীবন! আমার নিয়তি! আমার গন্তব্য!!!

বেশ কিছু দূর হেঁটে যাওয়ার পর স্বপন দেখল উষ্ক-শুষ্ক মলিন বদনে ছেঁড়া বসনে জড়ানো শরীর টেনে কয়েক টুকরো ইট আর পাথর হাতে দীনু পাগলা ছুটছে। দীনুর এইভাবে ছুটে চলা দেখে স্বপন স্তম্ভিত ফিরে পেল। সে দীনুকে থামাল, জিজ্ঞাসা করল- কিরে ইট-পাথরের টুকরো হাতে কোথায় ছুটছিস...? জবাবে দীনু জড়তার স্বরে বলল- ঘল তুলব লে, পাকা ঘল তুলব। মা কান্দে কইছে আমি বালা হইলে, আমাদেলও পাকা ঘল হত!!! দীনুর কথা শুনে স্বপন হেসে উঠে বলল- এই কয় টুকরো ইট-পাথরে কি ঘর হয় রে বোকা? দীনু বলল- যা তুই বোকা, আলও (আরও) আনব লে, তখন হবে!!! বলেই দীনু আপনার গন্তব্যে ছুটে চলল।

দীনু চলে গেলে স্বপন তার পাগলামীর কথা ভেবে মনে-মনে হেসে উঠল, কিন্তু পরক্ষনেই দীনুর ইচ্ছের কথা ভেবে সে অবাক হল! সে ভাবতে থাকল, সারা জীবন ধরে ইট-পাথরের টুকরো কুড়োলেও তো দীনুর পাকা ঘর উঠবে না। সারাজীবনের তপস্যাতেও দীনুর বদলাবার সম্ভবনা নেই, তবুও সে স্বপ্ন দেখছে, আগ্রহে এগিয়ে চলছে, জীবনটাকে ব্যস্ততায় ভরে তুলছে, সময়ের রংগুলোকে রঙ্গিন করে তুলছে। তবে আমি----?

স্বপন জীবনের গন্তব্য পেল, সে বুঝল জীবন শুধূ ফসলের ফল বইবার জন্য অতটা নয় যতটা ফসল ফলাবার। জীবন কেবল স্বপ্ন দেখে কদম ফেলার, স্বপ্নগুলোকে ছুয়ে দেখার আগ্রহে ব্যস্ত হবার, দুঃখ-দুর্দশা-পীড়ন ভূলে থাকবার মত কার্য্য করার।

স্বপন এখন ভাঙ্গার স্বপ্ন দেখে না, স্বপন এখন ফসল ফলাবার প্রত্যয়ে স্বপ্ন গড়ে।

সময়

প্রেম, ভালোবাসা কিংবা ভালোলাগার জন্য চঞ্চল, আবেগী, মুখের ভাব-প্রকৃতি আর মিষ্ট প্রকাশের পারঙ্গমতাই যথেষ্ঠ। 

কিন্তু জীবন সংগ্রামের সংসার সাজাতে গেলে উপরেরগুলো বেশীরভাগই অযাচিত, অনাকাঙ্খিত আর অসহনীয় হয়ে দাঁড়ায়। সংসার জীবনে পরিশ্রমী, সহনশীল আর বোধগম্যযুক্ত মানুষই সকলের প্রথম কাম্য থাকে।

দম্ভ

যে কায়া ছুঁলে জাত চলে যায়...
সে কায়ার ছায়া পদতলে মাড়ায়
ছোট-বড়-জাত-বেজাত নাই সে ইশারায়
আপনার দম্ভ আপনার কর্মে চূর্ণ হয় ধরায়...

বিভেদ

সবজায়গায় হালুয়া-রুটির ভাগাভাগি; কাড়াকাড়ি

আমি-
পায়ে বল নেই বলে বাহন চাপাতে পারি না
গায়ে বল নেই বলে গতর খাটাতে পারি না
হাত কাঁপে বলে ভার বইবার শক্তি পাই না
মগজ শূণ্য বলে বুদ্ধির জোরেও টিকি না

সবাই পথ খুঁজে হালুয়া-রুটির কিঞ্চিৎ পেয়ে গায়-গতরে বেঁচে যায়
আমি কঙ্কালসার দেহের বেদন সহতে না পেরে ওপারের প্রত্যাশায়...

যে ভালোবাসে

যে ভালোবাসে কিংবা বাসতে চায় তাকে চেনা যায়!
মুখের মায়ায় ধ্রুবরাশির রেখায় খেয়ালের উচ্ছলতায়
সময়ের কাব্যকলার ঢংয়ে মনটাকে পড়া যায়...