শুধুমাত্র সুনাম কুড়োবার জন্য সবাই লেখে না, অনেক বড় প্রতিভাবান দেখাবার আশায় কিংবা প্রতিষ্ঠিত হবার জন্যও সবাই লেখে না। কিছু লেখা মনের গতিকে রোধ করে, ভারাক্রান্ত মনকে স্থির করে, কখনও ভাষা ভালোবাসা অনুভবকে প্রকাশ করে।
প্রতিদিন অনেক প্রতিষ্ঠিত সমাদৃত লেখকদের মনের ক্ষুধা নিবৃত করার মতো অনেক ভালো-ভালো লেখায় যেমন মনের তাগিদ পাই, চেতনা জাগ্রত হয়। ঠিক তেমনি কিছু সমাদৃতের কলমের খোচায় মনটা ভারাক্রান্ত হয়।
আগেই বলছি সবাই প্রতিষ্ঠা পাবার আশায় লেখে না। যদি তাই হত- আমার মতো অবিবেচকেরও ৫-৬ টি বই এতদিনে কারও কারও হাতে হয়ত পৌঁছত। খুব সহজে টাকা দিয়ে বই বের করবার মতো সেই সামার্থ্য আমার হয়ত ছিল!
তবে প্রশ্ন আসতে পারে দূর্বোধ্য ছারপাশ লেখা কেন? কেন অকারণ সাহিত্যের ময়লার স্তুপ জমানো?
আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি- প্রত্যেকে তার চোখে দুনিয়াকে দেখে, তার মতো করে দুনিয়ার সমস্ত নাড়ি-নক্ষত্র বিশ্লেষন করতে চেষ্টা করে। আর বিশ্লেষন করা এইসকল তথ্য-উপাত্ত কেউ-কেউ খুব সহজে অন্যের কাছে বলার ভঙ্গিমায় উপস্থাপন করতে পারে, কেউ আবার নিজস্ব জীবনদর্শন নিজের মধ্যেই জমিয়ে রাখতে পারে। এই দুটো শ্রেণীবাদে আরও একটা শ্রেণী আছে যারা দুটোর কোনটাই করতে পারে না। তাদের সমস্ত জীবনদর্শনের কিছু বোধ প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম কাগজ-কলম। মূলতঃ নিজেদের আত্মবিশ্লেষনটাকে প্রকাশ করবার আশায়ই তারা লেখে। এখন দ্বিতীয় প্রশ্নটা আসে- তবে সাহিত্য জগতে ছারপাশের স্তুপ জমানো কেন? এখানে প্রশ্নটি করার আগে বলতে হবে- যারা অন্যের সবধরনের অভিব্যক্তিটাকে সাহিত্য বলতে চাইছেন- তারা আসলে কারা? - সাহিত্যে আবর্জনার স্তুপ জমানোর কথা বলবার আগে, তাদের মানষিক অবস্থা জানা প্রয়োজন। কারণ কোন লেখাটি সাহিত্য হিসেবে স্থান নেবার যোগ্যতা রাখে আর কোন লেখাটি মনের ভাব প্রকাশের জন্য লেখা, এই দুটোকে যারা আলাদা করতে জানে না, তাদের মানদন্ড নিয়ে মনে সংশয় জাগে।
আর একটি কথা- কাকের ময়ুরের পাখনা পড়লে যেমন কাক ময়ুর হয় না, তেমনি কাক স্বাদ করে ময়ুরের পাখনা পড়ে ঘুরলে যারা কাক আর ময়ুরকে আলাদা করতে পারে না, তারা আসলে কি? -সে বরং তারা নিজেরাই ভাবুক।