শনিবার, ৭ জুন, ২০১৪

ক্ষমতাসীনদের কুক্ষিগত ক্ষমতার সবচেয়ে কুৎসিতরূপের কয়েকটি দৃশ্যের একটি

ছবিগুলো আপলোড করার ইচ্ছে থেকে আপলোড করি নি, করেছি আমাদের দেশের ক্ষমতাসীনদের পরিছন্ন নগ্নরূপ প্রকাশের উদ্দেশ্যে। নিচের তিনটি ছবি আমাদের দেশের ক্ষমতাসীনদের কুক্ষিগত ক্ষমতার সবচেয়ে কুৎসিতরূপের কয়েকটি দৃশ্যের একটি। আর এই কুৎসিতরূপের কর্মকার এদেশের সরকার, যাদের ক্ষমতার উৎস সাধারণ জনগণ। আর যেদেশের জনগণ মুখিয়ে আছে সরকার তাদের জন্য নির্মাণ করবে একটি সুন্দর আবাস!

পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশের নগর তথা সমাজ-সংষ্কৃতি গড়ে উঠে দেশের ভূগৌলিক ভূ-খন্ডের চারপাশ ঘিরে। সমাজ তথা দেশের উন্নতিক্ষেত্র হয়ে উঠে দেশের সমগ্র পরিসীমা। অথচ আমাদের দেশেে এর ব্যতীক্রম। এখানে মূলধারার ক্ষমতা বৈকেন্দ্রীকরণ হয় নগর কিংবা রাজধানী ঘিরে, আর তাই আমাদের দেশের সবকিছুর মূলে কেন্দ্রীভূত হয় রাজধানী। গতিময় জীবনের অনুচ্ছেদে তাই যখনই জীবন বাঁচাবার তাগিদ দমআটকাবার প্রচেষ্টা করে, তখনই রাজধানীতে ছুটে আসা, অবস্থান অনিবার্য হয়ে পড়ে।

এদেশে জনসাধারনের টুটি চেপে ধরে রাখা যে ক্ষমতার অবস্থান সে আজ একদিনের নয়, একটা চলচিত্রে দেখেছিলাম যেখানে নায়কের বক্তব্য ছিল অনেকটা এরকম-“চৌধুরীবাবু ক্ষমতা ছাড়লে, রায়বাবু ক্ষমতায় বসবে, রায়বাবু ক্ষমতা ছাড়লে সেনবাবু ক্ষমতায় আসবে”, আমাদের দেশের অবস্থা বাস্তবিকই তাই। এখানে বাবুদের প্রতাপ কখনো পরিবর্তন হয় না, শুধু বাবুদের টাইটেলটাই বদলায়। আর তাই ক্ষমতাধারীদের দ্যৌরাত্মে একমুঠো খাবারের অণ্বেষনের সবস্থান যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন সাধারণ জনগণ চোখ বন্ধকরে অন্ধকার গলির মুখে পা বাড়িয়ে রাজধানীতে পৌঁছে যায়। কেননা আমাদের দেশ সমগ্রই এই রাজধানী অথাৎ রাজধানীবিহীন আমার দেশের অস্তিত্ব নেই। আর যখনই তারা রাজধানীতে পৌঁছে- তখনই রাস্তার ফুটফাট কিংবা রেলগেইট সংলগ্ন বস্তি হয় তাদের আশ্রয়স্থল, তাদের সংকটকাল মুহূর্তে অবস্থানের শেষ পথ।

কিন্তু এইযে, রেললাইন সংলগ্নবস্তি, যেখানে সহায়-সম্ভলহীন‘রা অবস্থান করে, তাদের এই বস্তির স্থানটা কি বিনে পয়সায় থাকার আশ্রয়স্থল? না মোটেই না, এ বিনে পয়সার আশ্রয়স্থল নয়। এখানে সহায়-সম্ভলহীন‘রা ভাড়ার বিনিময়ে অবস্থান করে। যখন তারা বসবাস করতে শুরু করে, তখন তারা তাদের থাকার স্থানকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, একটা মাথা গুজাবার জায়গা পেয়ে তারা আবার চলতে চেষ্টা করে। আর সেই স্বপ্নের ছিড় তুলে দেয় উচ্ছেদ অভিযান। কারা উচ্ছেদ অভিযান করতে আসে? কেন করতে আসে? মনে-মনে অনেক গালি দিচ্ছি তাদের। তাদের চৌদ্দগুষ্টিকে উদ্ধার করার মতো গালি আর মুখ ভরা থু-থু ছাড়া আমার সে ক্ষমতা নেই কিছু করার। যদি করার থাকত আমি দেশের শীর্ষকে পদাঘাত করে ভেঙ্গে দিতাম। অসহায় মানুষের স্বপ্নগুলোকে এভাবে ভেঙ্গে দেবার দায়ে, এভাবে দম আটকিয়ে বারে-বারে মরাকে আরো মারা দায়ে।

আপনারা আমার কথায় আমাকে ভুল ভাবছেন নাতো, ভুল অবশ্যই ভাবছেন। আপনারা আমার ভাব না বুঝে আমাকে ভুল ভাবছেন, ভূল ভাবা আপনাদের চরিত্রের স্বভাবজাত অবস্থান, যেমনি আমার। আপনারা সারাজীবন ভুল ভাবেন, ভুল ভেবে ভুল মানুষের সাথে সংসার পাতেন। আপনারা জানেন অথচ না ভেবে বার-বার লম্পটের সাথে ঘুরতে বের হন, শুতে যান।
জ্বী; আমি আগেই জানি, এভাবে রেললাইনের জায়গায় অবস্থান অবৈধ? কিন্তু বৈধ কি? আপনি বৈধ? এই সমাজ? এই দেশ? এ সরকার? কিংবা এই আমরা সাধারণ?

ভুল হচ্ছে কেন এত বারবার? যদি আমরা সকলে বৈধই হতাম, কেন আমাদের জনসাধারণের এই হাল? কেন আমাদের ভাষা নেই? কেন আমরা নির্লজ্জের মতো বাইজির নাচ দেখতে ছুটে চলছি? কেন বার-বার দেহ পেতে দিচ্ছি নিজেদের কংলকিত অধ্যায় রচণা করতে? হ্যাঁ; এই কেবল সত্য আমরা সকলে অবৈধ। যদি বৈধই হতাম তবে আমাদের এই বস্তিউচ্ছেদ কে সমর্থন করার পূর্বে আমাদের খেয়ালে আসত কারা এই অবৈধ বসতি স্থাপন করে? কেন করে করে? কিভাবে করে? যখন বসতি গড়ে উঠে তখন কৈ থাকে এই প্রসাশণগোষ্ঠী? কোথায় থাকে নির্লজ্জ বেহায়া সরকারের দল? কোথায় থাকে সমর্থণ করা এই জনগোষ্ঠী? কেন কেউ পারে না ওঠার সময় এই অবৈধ স্থাপনা বসানোয় বাঁধা দিতে?

আজ লজ্জার সমস্ত সীমালঙ্ঘন শেষ করে ফেলছি, চোখের সামনে যখন অসহায়‘রা পড়ে-পড়ে কাঁদে, তখন লম্পটের কাছে দেহ বিছিয়ে শুয়ে পড়া এ আমার চোখে দু‘ফোঁটা অশ্রুজল ছাড়া কিছু থাকে না। আমি বিভ্রান্তীতে পড়ে যাই আমার কর্তব্যকে খুঁজতে গিয়ে। আমার সব অগোছালো জীবনকে বাঁচতে চাওয়ার আশা করে।

না আমি কোন দিনই সমর্থণ দেব না এই অবৈধ বস্তি ভাঙ্গার, এভাবে কতগুলো স্বপ্নহীন পাখির ডানাঝাপ্টিয়ে করূণ মৃত্যুর পথে অগ্রসর হবার। জীবনের সারতত্ত্বের একটা শব্দ আমি জানি, সে হল- যখন সমগ্র জীবনটা মিথ্যায়-প্রপঞ্চণায় ভরপূর হয়, তখন সত্য অবস্থান নিতান্তই বেঠিক, সত্যটাই সবচেয়ে বড় মিথ্যা।

বর্তমানে দাঁড়িয়ে আমি এছাড়া কিছু বলতে চাই না, যদি কারো কিছু বলতে ইচ্ছে হয় তবে তারা বলুক, গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করে বলুক- কেউই আর কোন লম্পট, স্বার্থণ্বেষী, স্বার্থকুক্ষিগত লোভী কোন ক্ষমতার কাছে মাথা নোড়াতে চায় না, দেহ বিছিয়ে শীৎকার করতে চায় না, নিজেদের আর কলংকিত করতে চায় না। সকলে চায় সত্যিকারের জনদরধি, প্রজ্ঞাবান নেতা, দেশের হালধরার মতো সত্যিকারের নাবিক, যার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ থাকবে তার দেশমাতৃকার সন্মান, যার জনগণকে অন্ধকারের গলি বেয়ে রাজধানীতে পৌঁছতে হবে না, যে দেশে মানুষ একটা প্রশ্বাস ফেলে বলতে পারবে এ বড় সুখের বন্ধু; এ বড় সুখের।


                                                স্থান: নাখালপাড়া রেলগেইট, তেঁজগাঁও, ঢাকা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন