সোমবার, ১৬ জুন, ২০১৪

নারী জীবন

আমগাছে আম ধরে এ সত্য, কিন্তু যদি বলি আমগাছে জাম, লিচু, কাঁঠাল ধরে তখন এ অনেকের কাছে আজও অসত্য হিসেবে নির্ণয় হয়। তবুও বর্তমান যুগে বসবাস করে আমরা জানতে পারি- আমগাছে আম-জাম-লিচু কিংবা কাঁঠাল পাওয়া সম্ভব, যদি আমরা গাছে কলমের চারা প্রতিস্থাপন করি। এক্ষেত্রে কলমের গাছটির শিকড় আকড়ে রাখে মূল গাছটিকে, মূল বিস্তারের উপর নির্ভর করে গাছটির শাখা-প্রশাখার বিস্তার। এখানে মূলগাছটির উপর প্রতিস্থাপিত গাছটিকে বলা হয় পরজীবী। পরজীবী গাছটির জীবন সঞ্চালনে সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে মূলগাছটি বা মাতৃগাছটির উপর। কিছু-কিছু সময় এমন হয় পরজীবী গাছটি বিস্তার লাভ করতে-করতে পুরো গাছটিকে ছেড়ে ফেলে, কিছু-কিছু সময় তারা শিকড় ঠিকমতো জড়িয়ে ধরতে না পারায় প্রাকৃতির কারণে বা কৃত্রিম কারণে মূলগাছটি হতে ঢলে পড়ে।

নারী জীবনটাও অনেকটা সে রকম। আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থা আজও এমনভাবে, এমন কাঠামোর উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে পুরুষমানুষের চিন্তা থাকে তার সংসারে একজন নারী আসবে। নারীটাকে সে কখনোই একজন মানুষের অয়বব দিতে পারে না, নারীটিকে কখনো সে অগ্রগণ্য মানুষ ভাবতে পারে না। আর নারীও চলনে-বলনে-চেতনায় যতই ভাবভঙ্গিমা কিংবা গরীমা দেখাক না কেন, তারাও সত্যিকার অর্থে মানুষ হিসেবে নিজেদের ভাবতে পারে না, বরং ভাবভঙ্গিমায় উন্নতমানের দেখাতে গিয়ে তারা জীবনসত্ত্বাটাকেই খুইয়ে বসে।  সমগ্র বিচার-বিবেচনায় নিলে আমরা দেখতে পাই পুরুষদের কাছে নারী হয়ে যায় একটা পণ্য বা বস্তু। আর তাই যখন তারা পণ্য বা বস্তুটিকে তাদের সংসারে আনবে ভাবে, তাদের ভাবনায় প্রকট হয় নারী নামক বস্তুটি তাদের সংসারে আসবে, তাদের সংসারের হাল ধরবে, তাদের বুঝবে, তার চলন-বলন-কথন সব হবে পুরুষ মানুষটির চাওয়া অনুযায়ী।

কিন্তু যদি বলা হয়, একজন নারী তার জীবনে আসবে, সারাজীবন তাকে সঙ্গদেবে, তার সুখ-দুঃখে পারষ্পরিক হবে, নিজেকে বিলিয়ে দেবে তার প্রেমময় হৃদয়টির জন্য। তবে সে নারীকে সংসার বন্ধনে বা তাকে হৃদয়ের আহ্বানে হৃদয়ে স্থান দেয়ার পূর্বে কোন পুরুষ কি কখনো ভেবে রাখে তাকে নিশ্চিত রাখার জন্য সে কি করবে? তার স্থির ভাবনার জন্য, স্থির আচারণের জন্য তাকে কিভাবে সুরক্ষিত করবে তার উগ্রতা, সমাজ-সংষ্কার-সংষ্কৃতির রাহুগ্রাস হতে? না; খুব কম পুরুষই তা ভেবে তাকে ঘরে তোলে। বেশিরভাগেরই নারীর প্রতি আগ্রহের স্থানটুকু হল- দেহের তৃপ্তি আর নিজের বা নিজের পরিবারের লোকদের মানষিকতা বোঝার ক্ষমতা অর্জনের জন্য নারীকে মানষিকভাবে অপদস্থ করা।

আর যদি পরিবার হয় যৌথপরিবার, তবে সেখানে নারীর পণ্যমূল্য আরও কমে। যুগ-যুগ ধরে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙ্গে যাওয়ার পিছনের মূল কারণ হিসেবে যদি আমরা বিবেচণা করি, তবে এর মূল কারণটিকে আমার মনে হয় মেয়েদের পন্যমূল্যও না দিতে চাওয়ার কার্পণ্য। আমার মনে হয় নতুন অতিথির পর্দাপনটাকে তারা কাজ চালিয়ে যাওয়ার মতো পন্যের পর্দাপন হিসেবে গন্য করে, ফলশ্রুতিতে পরিবারের লোকজনের মাঝে এ মানষিকতাই বড় হয় যে, আমরা আমাদের পন্যকে যেভাবে ইচ্ছে ব্যবহার  করব বা করতে পারি। এখানে পন্যের কার্যকরী ভূমিকা কোন গুরুত্বই নেই। আর তাই ঐ পরিবারে বসবাস করতে গেলে নারীকে হয় পরজীবীর মতো শিকড় গাঁথতে হয় শক্ত করে অথবা ঝরে যেতে হয় প্রাকৃতিক কিংবা কৃত্রিম ঝড়ে। এখানে মাঝে-মাঝে এমনও হয়ে থাকে, নতুন পরিবারের এই নতুন অতিথিও সবার অবস্থানে নিজেকে ঠেকাতে-ঠেকাতে একসময় মূল গাছটিকে ছাড়িয়ে যায়। অথাৎ সে হয়ে উঠে পরিবারের কর্তা। তখন তার আদেশ-নির্দেশেই পরিচালিত হয় সবকিছু।

তবে সমাজ সংসারে যে যাই করুক বা বলুক না কেন, নতুন সংসারে নারীর বেশীরভাগই পরজীবী। যারা নতুন পরিবারের সাথে মূলগেঁথে থাকতে চাইলেও পরিবারের কার্য্য পরিধিতে তাদের অবস্থানটুকু পরজীবীর মতোই। হয় জোর করে মাতৃগাছটাই নিজে হতে হয়, নতুবা হয় ঝরে পরতে হয় কোন ঝড়ে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন