বুধবার, ২৯ জুন, ২০১৬

মূল্য

দীর্ঘ তিন বছর যন্ত্রণা সহ্য করেছি, দৈনিক গড়ে ৪-৫ ঘন্টা রাস্তায় কাটিয়েছি ২০ মিনিটের বাসের রাস্তায়। সব সহ্য করেও ভেবেছি সরকার ফ্লাইওভার বানাচ্ছে সে তো আমাদের মতো জনসাধারনের জন্যেই। কাজটা শেষ হলে আমরাই উল্লাসে এই রাস্তায় পথ পাড়ি দেব। ফলে ফ্লাইওভারের উল্লাসে বিভোর আমরা যখন রাস্তার বড়-বড় গর্ত পার হই, তখন তাতে আমাদের চিত্ত আহত হয় না বরং আমরা হাওয়াই মিঠে খেয়ে হাওয়ায় উড়ছি ভেবে নেই।

তিনবছরের মতো সময় পার হয়। যে ফ্লাইওভার দুই বছরের মধ্যে শেষ হবার চুক্তি হয়, তিনবছর পর তার অর্ধেক শেষ করেই প্রধানমন্ত্রী উৎসাহ নিয়ে উদ্ভোধন করেন। আহা! এ দেখার মধ্যেও সুখ, কৈফিয়ত ছাড়া ঢাক-ঢোল-বাজনা বাজিয়ে উদ্ভোধন! যা হোক অর্ধেক ত হয়েছে, মনে আনন্দ জাগে। আপাতত অর্ধেকে না হয় পেট ফুরবো। হ্যাঁ; মাসখানেক আধেকে বেশ ভালোই কাটছিল। ২০ মিনিটের রাস্তায় আমরা উড়োজাহাজে উড়ে ১০ মিনিটে পার হয়ে গেছি। বাসার সবাইকে তাই কয়দিন কৈফিয়ত দিতে হয়, কি করে আমি এত তাড়াতাড়ি বাসায় পৌঁছি! কৌতুক করে বড় এক ভাই বলেন; কি খবর বিপ্লবভাই? অফিস ফাঁকি দিচ্ছেন নাকি? তখন গর্ব করেই বলে উঠি, আমরা এখন ফ্লাইওভারে উড়ি ভাইয়া। আপনি উড়ে চলার মজা না পেলে বুঝবেন না।

বাবার মৃত্যু বার্ষিকী পালনের জন্য বাড়ি গেছি। ফিরে আবার যখন নিয়মিত অফিস করবার জন্য ৩০ মিনিট আগে বাসে উঠলাম, লক্ষ্য ১০ মিনিটে অফিসের কাছে পৌঁছব, তারপর হাতে ২০ মিনিটে নাস্তা খেয়ে একটু রিলাক্স হয়ে অফিসে ঢুকব। কিন্তু; একি? গাড়ি ফ্লাইওভারে উঠল না, ড্রাইভারের সাথে কেওয়াজ লাগালাম- মামা তোমাগো এত যাত্রীতে পেট পুরে না? অফিস টাইমে মজা করছ? কিছুক্ষন বাক-বিতন্ডা শেষে বাসের স্টাফের কথায় বুঝলাম, বেইলি রোড ভিআইপিদের রোড! আম-জনতা ভিআইপি রোড দিয়ে চলবে? তাই মন্ত্রণালয় থেকে সাধারন যাত্রীসেবা বাসের রোড পার্মিট তুলে দেয়া হয়েছে। সেদিন অফিসে ১ ঘন্টা পর নাস্তা না খেয়েই ডুকলাম। বুঝলাম, এদেশে আম-জনতার মূল্য শাসে, তাই আমের (আমজনতার) শাসটাই সকলের চাওয়ার, ঐটুকু শেষ হলে আঁটি হতে নতুন চারা গজে যতদিন না নতুন শাসের আম পাওয়া যায়, ততদিন পর্যন্ত তা মূল্যহীনই পড়ে থাকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন