রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০১৬

বাঙ্গালি থেকে গালি

অনেকে বলে থাকেন- গালিটাও নাকি একপ্রকার আর্ট, যে আর্ট মানুষ মনের অন্তঃগোছরে এঁকে রেখেছে সে আদিমকাল হতে। আমিও তাই মনে করি, জীবনের প্রতিটি আলোক বিচ্ছুরণের বিম্ব কিংবা প্রতিবিম্ব যখন চোখের কোণে ধরা দেয়, তখন সে মনের মাঝেও উজ্জ্বল পটরেখা এঁকে যায়।

আমি গাঁয়ের ছেলে। গাঁয়ে থাকাকালে আমাদের বেশীরভাগ সময়ই ঘুম আসত গালি-গালাজের শব্দে আবার ঘুমও ভাঙ্গত তা শুনেই। জীবনের সাথে এর এতটা অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক এমন ছিল যে, মাঝে-মাঝে মনে হত গালি না শুনলে প্রকৃতিও বোধহয় শূণ্যতা বোধ করত।

আমাদের জাতিসত্তা নিয়ে যদি বিস্তারিত ঘাঁটাঘাটি করা হয় তবে, আমাদের শিকড় থেকেই যে এর অন্তঃপ্রবাহধারা বর্তমান -তা সহজেই অনুমেয় হবে বলে আমার বিশ্বাস। কিন্তু প্রযুক্তির যুগে বসেও সে সব নিয়ে বিস্তর গবেষনা করবার মতো ধৈর্য্য না থাকায় অনুমানভিত্তিক জ্ঞাণকে সত্য বলে স্থাপন করবার যে সাহস দেখাচ্ছি তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

কিন্তু হঠাৎ আজকে গালি নিয়ে লেখালেখির কৌতুহল জন্মাল কেন? আসলে মনের মর্জি-আর্জি দুইই বোঝা দায়! কখনও সে কাকে দাবড়াতে চায়, কখন সে নিজের দাবড়ে পালায়, এ বোঝা বেশ কষ্টসাধ্যই বটে। আজকে একটা বিষয় খেয়ালে নিতেই হঠাৎ মনে হল, গালি নিয়ে একটা ধারাবাহিক শুরু করলে কেমন হয়? এ নিয়ে কিছু অল্প-বিস্তর ভেবে দেখে পেলাম, আসলে ব্যাপারটা একেবারে মন্দ হবে না! যে হারে নিজের বিপরীত মানষিকতার মানুষের দিকে মানুষ ক্রোধের দৃষ্টি রেখে চৌদ্দগোষ্ঠীর শ্রাদ্ধ করছে, গোষ্ঠীর নামে নামে ফুল-তুলসির দিয়ে পিন্ডি চটকাচ্ছে, তাতে গালির ধরনগুলো শেখানোর মতো নিখাদ যুক্তির কার্য্যকারিতা আছে বই কি...

বর্তমানে উদিয়মান ক্ষমতাশালী দেশগুলো মধ্যে চীন, ভারত অন্যতম। তো আমরা বাঙ্গালিরা খুবই ভদ্র-শান্ত-সভ্য (নিজেদের মনে) হওয়ায়, আমরা ভাবি- যদি আমরা কোন দিন উদিয়মান শক্তি হইও, আমাদের মনের মধ্যে ভারতের মতো ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ইচ্ছে বা অভিলাষ হবে না, কেননা আমরা তাদের তুলনায় অনেক ছোট দেশ এবং আমাদের লোকবল কম এবং আমরা আগায়-গোড়ায় সুগন্ধিমাখা ভালো মানুষী এবং ক্ষমতা হলেও দেশীয় ভূখন্ড কিংবা জনগোষ্ঠীর হিসেব-কিতেবে ইসরাইলের সাথে আমাদের দেশিও ইনছানদের তুলনা চলে না। কারণ তারা ইসরাইল, তারা ইহুদী-নাসারা, তারা ক্ষমতার জন্য হিংস্র দানব হয়ে রক্ত খায়।

তো ঠিক আছে, মুল কথায় আসি- যেহেতু আমাদের দেশের উপর ভারতীয়দের প্রভাব বেশী এবং ওরা আমাদের ক্ষমতার জোরে করায়ত্ত করে রাখতে চায়, তাই আজ আমরা ভারতীয় এবং এদেশে অবস্থানরত ভারতীয় দালালদের গালি-গালাজের কৌশল শিখব।

যেকোন গালি-গালাজ শুরুর পূর্বে যেমন কিছু কারণ থাকা চাই, তেমনি থাকা চাই কিছু উপকরণও। তাই ভারতের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করার জন্য যে কারণগুলো আছে সেগুলোতে চোখ বুলিয়ে নেই।

১) ভারত আমাদের চারিদিকে স্থল ও জল দখল করে খাচ্ছে। (শ্রুতিপদঃ অধিকার আদায়ের ক্ষমতাহীন প্রত্যেকে অথর্ব বলে, এরা সবকিছু শুয়ে-বসে পেতে চেয়ে কাঁদে।)

২) ভারত অন্যায় ভাবে সীমানায় বাংলাদেশীদের খুন করছে। (তর্কিত প্রশ্নঃ খুন হবার সাধ বুকে জমিয়ে কারা অবৈধভাবে সীমানা পারাপার হতে চায়? আর কেন পারাপার হতে চায়?)

৩) আমাদের দেশের অসহায় গরু ব্যবসায়ীদের মেরে ফেলছে এবং গরু আনতে দিচ্ছে না। (প্রশ্নঃ গরু ব্যবসায়ীরা অকারণ সেখানে মরতে যাচ্ছে কেন? গরু কি এদেশে উৎপাদন সম্ভব নয়?)

৪) ভারত আমাদের সাথে টিপাই বাঁধ নিয়ে খেলছে, তিস্তা চূক্তি নিয়ে খেলছে। (উত্তরেঃ ভারত যখন টিপাই বাঁধ দিয়েছে, তিস্তা নিয়ে খেলছে, তখন আমরা তাদের সাথে শরীর ঘষাঘষি না করে বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছি না কেন? আমরা বিকল্প ব্যবস্থা নিতে অসমর্থ্য? তবে অসমর্থ্যে উর্দ্ধস্বর কি মানায়? আমরা না হয় যেদিন সামার্থ্য হবে সেদিন দেখাবার অপেক্ষায় থাকি)

৫) ভারত আমাদের দেশের সমাজ-রাজনীতি আর অর্থনীতি নিয়ে খেলছে। ( আশ্চার্য্যবোধক চিহ্নযুক্ত প্রশ্নঃ খেলার মাঠ আমার দেশের, লোক আমার দেশের, খেলবার দলও ঠিক হল দেশের মধ্যেকার লোকজন নিয়ে। তবে তারা খেলছে কিভাবে? যদি নিজের স্বাধীন ভূখন্ডে অন্যলোক এসে খেলে থাকে, তবে গলা ফাটিয়ে না বলে নিজের অক্ষমতার জন্য সকলের তো উচিত ছিল আত্মহত্যা করা।)

যা হোক- গালি দেবার মতো কারণ তো মিলল- এবার বন্ধুদের সাথে শুরু করুন গালাগালি।

ভারত রেন্ডিয়ার দেশ, শালারা নাপাক, ন...পো, মান্দ..., চু...পো, মা...রি, খা....পো, মা...পো, ন...জাত, বে..., দা... এভাবে চলতে থাকুক।

যেহেতু মেজাজ চাঙ্গা, তো বন্ধুদের গালির সাথে আরও যোগ করুন-

“রেন্ডিয়ার জাকির নায়েক খা.....পো, মওদুদি ন....পো, ভারতের মুসলমানদেরও..... করি, পিসটিভি লোকজনরে......, ডান্ডি রাষ্ট্রে দেওবন্দ রে.....” -আচ্ছা কোটেড লাইন শুরু করার পর বন্ধুরা কেউ-কেউ থেমে গেছে? কারও চোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে? কারও রক্তচক্ষু আপনার দিকে তেড়ে আসছে? তবে রাগ সামলে থেমে গিয়ে সরে পড়ুন। কারণ গালি আপনি এখনও শিখে উঠতে পারেন নি, উল্টো-পাল্টা গালির জন্য আপনার কাঁধের উপরের ধড়টা হয়ত বন্ধুর রক্তচোখা রাগের উপর হারিয়ে বসতে পারেন।

পরিশেষঃ ভাইলোগ আমার উপ্রে রাগ লইয়েন না। সত্যি কতা কইতে কি- আপনেরা আসলে যে যুক্তিতে আড়ালে আবডালে গালি দিবার পয়তারা করেন, সে যুক্তিরই খাতিরে কয়েকটা কইলে কইছি ভায়ে আপনেরার সইবে না। আর কাঁধে একটু বিদ্যের ভার আছে বিধায় লজ্জায় মুখও খুলবার চাই না। কিন্তু এতে ভাইবে বইসেন না, কিচ্ছু কইবার পারি না, সত্যি কইছি ভাইলোগ- এখানে যে বিদ্যে আপনারা ফলিয়ে যাচ্ছেন তার কয়খান কইলেম পিচ্ছিবেলায়ই মুখস্ত হইয়ে গেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন