সোমবার, ২০ জুলাই, ২০১৫

বন্ধু, শুভাকাক্ষি

বিশাল আকাশের নীলে ঘুড়ি উড়তে গিয়ে যখন ঘুড্ডি খেতে-খেতে দিক কেটে উলম্বাকারে নিচে পড়তে থাকে, তখন নির্দিষ্ট পরিধির জায়গায় পৌঁছতেই বায়ু তার পড়াটাকে থামিয়ে আবার ঠেলে দেয় উর্দ্ধমুখে মুক্তভাবে উড়বার জায়গাটিতে। আমরাও উড়ছি ঠিক ঘুড়ির মতো করেই। আর এই মুক্ত উড়ে চলায় আমাদের হোঁছট খাওয়া স্থানে-স্থানে যারা ব্যর্থ হাতগুলো ধরে সাফল্যের সাহস জোগাচ্ছে, সাথে হেঁটে চলছে তারাই এক-একজন বন্ধু, শুভাকাক্ষি।

বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০১৫

বিদ্যালয় জীবনে সেন স্যারের রেখে যাওয়া যে স্মৃতি আজও হাসায়

সপ্তমশ্রেনীতে সেন স্যারের মতো ভয় অন্য কাউকে বোধহয় খুব কমই পেতাম। কারণ স্যারের শ্রেনীকক্ষে প্রবেশ মানে ধুমম্ মাইর হবে।

স্যার শ্রেনীকক্ষে ঢুকে প্রথমে পড়ার জন্য ডাকতেন খ্রীষ্টান বন্ধুদের। তাদের পালা শেষ হলে এরপর উল্টো-প্লাটা রোল দিয়ে ডেকে তাদের পালা। পড়া শেখা থাকলেও মাইর খাওয়া নির্ভর করত স্যারের মর্জির উপর। সে হিসেবে বলা যায় রোল এক হোক বা একশ, মাইর খাওয়াটা সবার মোটামুটি নিশ্চিতই ছিল। আর তাঁর পড়ানোর ধরনও সম্পূর্ণ ভিন্ন, আসলেই Tense, Translation, Essay, Paragraph এই চার-পাচটা গন্ডিতেই আবদ্ধ ছিলেন।

স্যারের শ্রেণীতে অবস্থান আমাদের কতটা আতঙ্কিত কিংবা তত্রস্থ করত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্যারের সেদিনকার দিনগুলো এমন আচারণই হয়ত আজকে আমাদের স্যারকে সবচেয়ে বেশী মনে করার প্রধান কারণ।

স্যারের মুখের সে কথাগুলো যে, কথাগুলো আমরা বন্ধুরা এখনো কয়েকজন এক হলে মনে করতে থাকি, খ্রীষ্টান বন্ধুদের ডাকতে গেলে- খ্রীষ্টাইন্না বেগ্গুন একত্তরে চলি আয়, লেখতে বললে- ১০-১২ পৃষ্ঠা লেই হালাও, লেখা থামাবার সময়- স্ট্যান্ড আপ একপায়ে টেবিলের উপর, মারতে গেলে উত অই যাও উত অই যাও টেবিলের নিচে মাথা দি উত অই যাও, মাইরের আগে কেউ কিছু বলতে চাইলে স্যার বলতেন- আগে মাথা পরে কথা, মাইর দিতে গেলে কেউ যদি স্যার স্যার বলে মাপ করার বাসনা করত- স্যারের জবাব সাগু সাগু করিও না, সাগু সাগু করিও না, সাগু সাগু করি বছরের ১০ মাস খাইয়ালাইছ।

অন্যদের পিটানোর মাঝে স্যারের কমিকগুলো এমন ছিল যে, আমরা এত আতঙ্কের মধ্যেও মাঝে-মাঝে হেসে ফেলতাম। তখন স্যার বলত- হাইসোনা, পালা আইয়ের। মাইরের ভয়ে কয়েকজন জিন্সের প্যান্টের ভিতর কাছা (গোছ) মেরে লুঙ্গি পরে আসত। উৎ করে পিটানোর সময় স্যার যখন দেখত স্যারের মাইর ঠিক মতো লাগছে না তখন দাঁড় করিয়ে শরীরে পিটাত। পরে অবশ্যই পোলাপাইন স্যারের ধরে পেলাটাকে ধরতে পেরে কোচ মারা লুঙ্গির উপরে জিন্সের প্যান্ট পড়েও মাইরের সাথে-সাথে জোরে চিৎকার করে আঘাত পাওয়ার ভাব দেখাত।

আমাদের শ্রেনীতে বয়সের তুলনায় লম্বা সারির ছিল রহমান, বর্মাকেন্টিন (ওর নাম ভূলে গেছি, তাই স্যারের দেয়া নামেই চালিয়ে দিলাম ) , লুক, জোনাস, জিকোসহ বেশ কয়েকজন। রহমান লম্বায় স্যারের থেকেও প্রায় একহাত উঁচু ছিল। তাকে পিটানোর পর আমরা তাকে কখনও আঘাত পেয়েছে এমন কোন ভাব তার মুখে দেখিনি। স্যার তাই তার নাম দিয়েছে স্টিক টাইট। বর্মাকেন্টিন কে নিয়ে স্যারের অজুহাত ছিল বেশ। ও নাকি বর্মাকেন্দ্রীতে একটা কেন্টিনে বসে লুকিয়ে সিগারেট খেত। লুক আব্দুর রহমানদের দলের লোক, অনেক মাইর খাওয়ার পরও যখন ওদের মধ্যে কান্নার কোন ভাব আসত না, তখন স্যার উত্তেজনায় মুখের থু-থু চারিদিকে ছড়িয়ে মারতে-মারতে বলতে থাকত লুকুচ্ছা-ফুকুচ্ছা হুস-হাছ ঠুস-ঠাস হুয়া-হুয়া।

নাকি কাঁদার মতো আমাদের শ্রেনীতে বয়সের তুলনায় কম লম্বা ছিলাম - আমি, সাত্তার, ফারুক, ওয়াছি, আরিফ, কনক, জিয়া, নাজিম, নিতু, সুমনসহ বেশ কয়েকজন। বেতকে আমার জন্মের ভয় ছিল, তাই যখনই আমার ডাক পড়ত আমি স্যারের বেতের সামনে গিয়েই কেঁদে দিতাম। আর গায়ে বেত পড়াত মানে ১০-২০ মিনিটের কান্নার ব্যবস্থা। আরিফকে মাইর দিলেই ও লাফিয়ে উঠে গাল ফুলিয়ে শব্দ করত উফস্ । কনকের গাল তুল-তুলে ফোলাই ছিল, তাই যখন ওকে মারত মুখ দিয়ে কেবল উহ্ উহ্ করত আর তার শরীর রক্তবর্ণ ধারন করত। সাত্তারকে মাইর দিলেই ও শরীরকে বাঁকিয়ে এমন ভাব করত যে না হেসে পারা যেত না। জিয়া (শিমুল) ‘র এলার্জির সমস্যা ছিল, তার শরীরের যেখানটায় মাইর পড়ত সেখানটায় ফুলে এমন টইটম্বুর হত যে, কিছুক্ষন হয়ত চেনাই মুশকিল ছিল । অবশ্য স্যার আমাদের পিচ্ছিদলের অবস্থা বুঝত, তাই আমরা অন্যদের হিসেবে অনেক কমই বেত খেতাম।

জনি, রিটুল, রাহাত, মথি, সোহাগ (টিটলি ভাইয়া) স্যার এদের প্রতি একটু স্পেশাল কেয়ার নিত, মানে বড় গ্রুপের সাথে এরাও প্রায় প্রতিদিনই ধরা খেত। তবে রহমানসহ অন্যদের পিটানোর পর ওদের পিটানোর মত একটা শক্তি স্যারেরও ছিল না ।

স্যার পড়া ধরলেই বোর্ডে সামনে নিয়ে যেত বলত কোগা অ্যাসে, প্যারাগ্রাফ শিখছ বোর্ডে লেখি হালাও। কেউ যদি কি লিখবে বুঝতে না পেরে দাঁড়িয়ে থাকত- তখনই পিঠে ধুপ্ ধুপ পড়ে যেত। মাইরের ঘোরে কেউ যখন দিশা হারিয়ে এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করত, তখন স্যার তার পিছে ছুটে গিয়ে মারত। তবে দৌড়ে গিয়ে নিজের আসনে বসতে পারলে অনেক সময়ই হাঁফ ছেড়ে বাঁচা যেত।

আমাকে এখনো স্যারের যে কর্মকান্ড বেশী হাসায় তা হল- মিরাজকে পড়ার জন্য ডাকলে স্যার মিরাজের সাথে-সাথে মনঞ্জুকেও ডাকত। মূলত দু‘জনের মধ্যে সখ্যতার কারণেও হয়ত স্যার এটা করত। মিরাজ স্যারের মাইরের হাত থেকে বাঁচতে অস্পষ্ট গুনগুনে পড়া বলতে থাকত। যেহেতু মনঞ্জুর সাথে তার সখ্যতা বেশী, তাই স্যার মনঞ্জুকে নিয়ে আসত মিরাজ কি বলতেছে তা বলার জন্য। এখানে মিরাজের কাজ ছিলো মনঞ্জুর কানে-কানে পড়া বলা। আর মনঞ্জুর কাজ ছিলে মাইক হয়ে সে পড়াটা স্যারের কাছে পরিবেশন করা। কিন্তু সমস্যা হলে গিয়ে- মিরাজের ত পড়া শেখা ছিল না, সে মনঞ্জুর কানেও বিড়-বিড় করে পড়া বলত আর মনঞ্জু তার মাইকে কি বলবে সে বুঝতে না পেরে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকত। অবশেষে দুজনের উপর একধাপ পড়ে পালা শেষ হত.....

শনিবার, ১১ জুলাই, ২০১৫

ক্ষত


নয়নজলে যে ক্ষত শুকায়
সে ক্ষত জমে কিঞ্চিৎকালে,
হৃদয়জুড়ে কত ক্ষত বাড়ে
শ্রাবণধারার বৃষ্টির জলে।

অলিখিত প্রণয়

যাকে দেখিনি চোখে
তারি জন্যে নিখাদ দৃষ্টিতে এঁকেছি ভালোবাসার পৃথিবী
কৃষ্ণপক্ষের নিকষ আলো ঢেলেছি তার মুখে-শরীরে
উদাসিন ভেবে যাওয়া কত রাতে একা-একা বেঁধে যাওয়া কত শত কবিতায়

সিঁথানের বালিশ কতবার বাহুবলয়ে এসেছে
তাকে প্রেমশরীরে বেঁধে রাখার সে কত অনুচ্চ ব্যাকুলতা...
তারপর কল্পনাভূক শরীর বেড়ে চোখ ধাঁধিঁয়ে যায় চৈতন্যহীন সবুজ বলয়
আর প্রজপতি ঘাসফড়িং ছুটে চলে অলিখিত প্রণয়ের মোহজালে।

যদিও আমরা

আপনাদের মত মানুষ আমরা, আপনাদের মতই মগজ আছে
মাথা-শরীর-চোখ-মুখ দেখুন, আপনাদের মতোই সব গজেছে

পা চালিয়ে চলেন যেমন, আমরাও চলছি পায়ের ভরে
মুখে তুলে যেমন করে খান, আমরাও খাই তেমন করে

দু‘কলমে জোর আছে ঢের, প্রভাব আছে কোর্ট-কাচারি
আপনারা তাই বড় মানুষ, আমরা আপনাদের কর্মচারী

প্রভুর ইচ্ছেয় চড়া কাঁধ পেলাম, গতর খাটতে কি আর মানা
সুদাসল কাগজ-কলমে কষুন, কত ঘামে মিলবে ষোলআনা

মাথার বোঝায় মগজ চেপে গেছে, বুদ্ধির খেলা খেলব কেমন করে?
আপনাদের সম্মানে, আপনাদের টাকায়, বিক্রি আমরাই নগদ ভারে।

শুধু বলি- যদিও আমরা মাঠের শ্রমিক পথের কুলি রাস্তারধারের কর্মচারী
দিনমজুরে যা খেটে পাই, তাতেই আমরা দুঃখ ঘুছাই, তাতেই পেট পুরি।

শুক্রবার, ১০ জুলাই, ২০১৫

আমার ব্রাদার আঁন্দ্রে উচ্চ বিদ্যালয়ের দিনগুলো-০৩ঃ

পঞ্চম শ্রেণীর আমার প্রথম ক্লাস। শ্রেণীতে আমাদের শ্রেণী শিক্ষক ছিলেন শ্রদ্ধেয় শ্রী অতুল চন্দ্র সূত্রধর যাকে আমরা অতুল স্যার বলে জানতাম। আমরা যখন পঞ্চম শ্রেণীতে, তখন তিনি বয়সের ভারে কিছুটা ন্যুজ। কৃষ্ণকালো পাতলা গড়নের শরীর, মাথায় টাক বর্তমান। শারীরীক বিবেচনায় নিয়ে যদি বয়সটাকে বলি তবে ৬০ বছর অতিক্রান্ত করেছেন সে নিঃসন্দেহে বলা চলে। যা হোক, স্যারকে পেয়ে মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেল। কারণ যার গানের চমৎকার গলা, তিনি মানুষটা যে চমৎকার হবেন তা নিজের বিবেচনায় বুঝতে পারলাম। স্যার হাজিরা খাতা নিয়ে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করলেন এবং সকলের হাজিরা সম্পন্ন করলেন। হাজিরা নেয়া সম্পন্ন হলে, স্যার আমাদের বিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন, লেখা-পড়া প্রভৃতি বিষয়ে বেশ কিছু মূল্যবান উপদেশ দেন। স্যার যখন হেঁটে-হেঁটে আমাদের জ্ঞাণের পরিধিকে বিস্তৃর্ণ করছেন, তখন আমরা অবাক চিত্তে তাঁর মুখ নিঃসৃত বাণী শ্রবণ করছিলাম। স্যার বললেন দেখ সন্মানের জায়গাটা সবসময় মনে রাখবে, যে তোমাকে জীবনে একটা শব্দও শিক্ষা দিয়েছে সে তোমার গুরু। তাই পথে-ঘাটে যেখানেই কোন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দেখবে তাঁদের সন্মান করবে। স্যারের হাতের লেখাটা বেশ চমৎকার ছিল। পঞ্চম শ্রেণীর আমার বার্ষিক পরিক্ষার ফলাফলের কাগজে স্যারের সেই আর্ট করা লেখা আজও বোধ করি আমাদের ঘরে রক্ষিত আছে। অতুল স্যার পঞ্চম শ্রেণীতে আমাদের দুটো ক্লাস নিতেন। প্রথম ঘন্টায় বাংলা এবং শেষ ঘন্টায় সমাজ।

প্রথম ঘন্টা শেষ হলে দ্বিতীয় ঘন্টায় এলেন শ্রদ্ধেয়া টেসি দিদি, পুরো নাম যতটুকু মনে পড়ছে তাতে মনে হয় টেসি গোনছালবেজ‘ই হবে। বিদ্যালয়ে আমরা শিক্ষকদের স্যার আর শিক্ষিকাদের দিদি ডাকতাম, সে হিসেবে তিনি টেসি দিদি। দিদি এসেও আমাদের বিভিন্ন উপদেশ দিলেন। দিদির যে উপদেশটি আমার আজও মনে গেঁথে আছে তা হল- “একটা সময় তোমরা অনেকে অনেক বড় হবে, কিন্তু একটা কথা সব সময় মনে রাখবে- কখনও মুরুব্বি বা শ্রদ্ধেয় জনদের সামনে পা তুলে বসবে না।” দিদির সে উপদেশটি আমি আজও রাখার চেষ্টা করছি। টেসি দিদি সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয়- তাঁর বয়স ৪০ ছুঁই-ছুঁই করছে। শারীরী গড়নটাকে মোটামুটি মোটা বলা চলে, গৌর বর্ণের। দিদি আমাদের গণিত আর ইংরেজী ক্লাস নিতেন। দিদির সংস্পর্শে থেকে আমরা যে গুণটিতে অভ্যস্ত হয়েছি, সে ছিল দ্রুত লেখার চর্চ্চা। তিনি বোর্ডে লেখার সময় এত দ্রুত লিখতেন যে, মাঝে-মাঝে আমরা হাঁফিয়ে উঠতাম।

অতুল স্যার, টেসি দিদি ছাড়াও আরও একজন আমাদের শ্রেণীতে পাঠদান করতেন, তিনি মমতাজ দিদি। ফর্সা স্লিম চেহারার এই দিদি ছিল আমার পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষাজীবনের আতঙ্ক। আসলে হল কি- দিদি আমাদের পঞ্চম ঘন্টার ক্লাসটি নিতেন। ক্লাসের মধ্য বিরতির ঠিক পর-পরই আমাদের শ্রেণীতে এলেন দিদি। মধ্য বিরতির পর দিদি শ্রেণীতে ডুকে পাঠদান শুরু করলেও আমি সুদেবের কাঁদে হাত রেখে কথায় মশগুল। দিদি শ্রেণীতে প্রবেশ করেছেন তাতে আমার নূন্যতম খেয়ালও নেই। হঠাৎ আমার মাথায় উপর ছুটে এল দিদির হাতের বুরুশ আর কানে দিদির কণ্ঠ, বেদপ ছেলে কোথাকার। বুরুশ মাথায় পড়লে আর দিদির চিৎকারে আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। স্তম্ভিত ফিরে যখন আমার ভূলটি বুঝতে পারলাম, ততক্ষণে আমাকে দিদি কান ধরিয়ে শ্রেণীর বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখলেন। সে দিন থেকে দিদির শ্রেণীতে আমার মতো ভদ্র ছেলে খুঁজে পাওয়া মুশকিল ছিল বটে।

বুধবার, ৮ জুলাই, ২০১৫

আমাদের মানষিকতাই সামগ্রিক অধঃপতন নিশ্চয়তার কারণ

দেশের বর্তমান হালচিত্র দেখে মনে হয়, দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে না ভাসিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সবকিছুর সঠিক তদারকির ব্যবস্থা নেয়াটা সবচেয়ে বেশী জরুরী। কেননা নামসর্বস্ব উন্নয়নের জোয়ার দেখাতে গিয়ে গতকাল যে কাজ করা হয়েছে আজ তা ভেঙ্গে পড়ছে, আজ যা করবে নিশ্চিত আগামীকাল তা ভেঙ্গে পড়বে, আগামীকাল যা করবে তা পরেরদিনই ভেঙ্গে যাবে। তাছাড়া অপরিকল্পিত চিন্তা-ধারায় কাজ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে একই কাজ (যেমন- ময়লা-আবর্জনা নিষ্কাশন বা ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ, গ্যাস সরবরাহ ইত্যাদি ) বার-বার ভেঙ্গে পুনরায় করতে হচ্ছে। বারবার একই কাজ করার ফলে প্রতিনিয়ত জনমানুষের যে অসহনীয় ভোগান্তি এবং দেশের টাকার যে পরিমান ক্ষতিসাধন হচ্ছে, শুধুমাত্র সুস্থ মানষিকতা নিয়ে কাজ করে সে টাকায় আমাদের মতো ছোট একটি দেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিনত করা কোন ব্যাপারই নয়।

দেশের সৃষ্টিলগ্ন থেকে দেখলে আমরা দেখছি শুধুমাত্র একশ্রেনী স্বার্থ কুক্ষিগত করতে এবং সরকারগুলো পরম্পরা দেখেও না দেখার ভান করে পড়ে থাকার মানষিকতায় কিংবা যথাযথ মনোযোগ দিয়ে কার্য্যকরি ব্যবস্থা না নেওয়ায় দেশ তথা নাগরিক কিংবা প্রশাসনিক ব্যবস্থার সমস্ত কার্য্যক্রম ক্রমান্বয়ে ভঙ্গুর অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

যখন কোন দেশের অর্থমন্ত্রী বলে উঠেন নিজদেহের কিছু বীষপোড়ার জন্য তিনি বা তারা কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের তীর ছুটে আসে, যদি তিনি বা তারা নিজদেহের বীষপোড়া উপড়ে ফেলতে অসমর্থ হন- তবে অন্যের দেহের বীষপোড়াগুলো তারা কি করে সারিয়ে তুলবেন? একজন দায়িত্ববান ব্যাক্তি যখন দায়িত্ব কাঁদে নিয়ে তা পালনে নিজের অযোগ্যতা, অক্ষমতা কিংবা অপারগতা প্রকাশ করেন এবং নিজ দূর্বলতা সত্ত্বেও অবস্থান ধরে থাকার মানষিকতা পোষন করেন, তখন কি প্রমান হয়? এরমানে কি এই নয় তিনি নিজ দূর্বলতায় অন্যকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন আবার কাউকে সুযোগ না দিয়ে নিজের ভেতরের দূর্বলতাগুলো ঢাঁকতে চেষ্টা চালাচ্ছেন? দায়িত্ব মানে কি বাঁধা পেয়ে থেমে যাওয়া নাকি সমস্ত বাঁধাকে উপড়ে ফেলে এগিয়ে যাবার প্রচেষ্টা করা? যদি সরকারই দেশ চালাতে গিয়ে অজুহাত তৈরী করে এবং নিজেদের দূর্বলতাগুলো জনমানুষের কাছে প্রচার করে জনমানুষের আবেগটাকে সঙ্গিন করে চলার মানষিকতা পোষন করে, তবে সে দেশ কিসের উপর ভিত্তি করে চলছে তা সহজেই অনুমেয়।

মানুষের মানষিক উন্নয়নের দিকে মনোযোগ না দিয়ে কিংবা টেকসই কার্য্যক্রমের প্রচেষ্টা না করে শুধু জনগনের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য যদি দেশটাকে লেংগুট পরিয়ে লজ্জাস্থান ঢেঁকে রাখার পয়তারা করা হয় প্রতিনিয়ত তবে নির্দিধায় বলা যায়, আমাদের মানষিকতাই সামগ্রিক অধঃপতন নিশ্চয়তার কারণ।

পরলোকে মতি

মাটি টেনে নিয়ে যায় দেহখানি যার
মাটির কোলে শয়ন পাতি, নির্ঘুম ঘুম তার
সায়ন্নে ছুটে ঘুমের দেশে, স্তব্ধ জীবনের গতি
মায়া-মোহ ত্যাগ করে সবের পরলোকে মতি।

মরি অতল জলে

কাঁচাহলুদ মুখখানি যার রবির কিরণ
লাজে লুকায় চাঁদে দেখি তার বদন
সজল দিঘীর জল ছায়া ছোঁয় ঘোরে
ভূবন হেলিয়া চাহে সম্মোহনের তরে।

বদনে চাহিয়া তার বিহঙ্গ সুর হারায়
চরিয়া সন্তোপনে সবুজ সুখে দ্যোলায়
দেখিয়া শ্রীমুখ তার হৃদয় পুড়ে অনলে
নামিয়া প্রেম সায়রে মরি অতল জলে।

অঙ্কিতা-০২

অঙ্কিতা- বাহ্যিকরুপটাই কেবল উপলব্ধ। অন্তরটাকে খুঁড়ে-খুঁড়ে জানবার বাসনা কার কোথায়? বিনিদ্রাগুলো গুমোট রাতের তারাগুলোর মত মনের মধ্যে ঝলক দিয়ে উঠে, প্রকাশের ভাষাগুলো একটু আবেগ ছোঁয়ায় লালন করবে এমন জন আর পেলাম কৈ?

অঙ্কিতা; দেখছ এখানে যে বিমূর্ত ছায়ারুপ, এখানে কেউ কেবল স্মৃতির ছায়া ধরেই পড়ে থাকে। গন্ধহীন ফুল সে আলোতেই ভালো দেখায়, আঁধারে তাকে হাতরে খুঁজবে এমনতর অভিলাষ কার কোথায়?

গ্রীষ্ম এলেই শীতের সকালে ছড়িয়ে থাকা দূর্বাঘাসের উপর শিশির পায়ে জড়িয়ে রাখা আবেশটুকু এসে শিহরিত করে। অথচ শীতের প্রাক্কালে এমন পরশে সকলেরই অনিহা থাকে। বেঁচে থাকার বাসনাগুলো সময়ের ব্যবধানে কত বর্ন - বিবর্নে সজ্জিত হয়।

এখানেও সুখ মেলে অঙ্কিতা! এ বয়ে বেড়াবার সুখ, প্রহসনগুলোকে তীর্যক মনে ভাববার সুখ অথবা প্রতারিত জীবনে কারও মনে আড়ষ্টতা জিইয়ে দেখবার সুখ। দহণ প্লাবনে আমার মত তুমি দ্রুত ক্ষয়ে না যাও, একটু-একটু করে ক্ষয়ে যাও সে আমি চাইব না কেন?

না, দেবতা হওয়ার মত এত বড় হৃদয় আমার নেই। ষড় ঋতুর বৈচিত্র্যতায় যে আমি বিচিত্র হয়ে পড়েছি, সে আমি দেবতার মত এত নিঃসংকোচ উদারতা পাব কোথায়? দেখ এই চোখের মনিতে, সে সাগরের নোনাজল বয়ে কতটা ঝাপসা হয়েছে। দেখ; দেখ এই দেহ অয়ববে, অনুভবহীন দেহকোষগুলো কতটা মরে গেছে। দেখ; দেখ; দেখ; মনের ভেতরকার ঘুমরে থাকা বাসনাগুলো আজ কতটা হিংস্র হয়েছে। তবে বেঁচে থেকে আমি কি করে দেবতা হব?

অঙ্কিতা আমি জানি- ভালোবাসা মানে ছাড় দেওয়া। কিন্তু ছাড়টাকে যদি ছেড়ে যাওয়ায় বয়ে নিতে হয়, তবে জমানো স্বপ্ন কবিতার কাতরতা সহে থাকা দুষ্কর নয় কি? আমি পারি না অঙ্কিতা, সত্যি আমি পারি না। ছন্দের ছোঁয়াগুলো আমার বিব্রত জীবনটাকে আরও বিপথগামীতার দিকে ঠেলে দেয়। এখন জীবনের পান্ডুলিপিটা পুড়ে সাঙ্গজীবনের সর্ব সমাপ্তি‘ই কেবল সুখ দিতে পারে!

নিজ বুদ্ধি

মরতে যখন হচ্ছেই
নিজ বুদ্ধিতে মরে যান
অন্যের সিদ্ধান্তগুলো যেনেই
নিজেকে নিজের মত সাজান...

সময়

সময়ের ব্যবধানে জীবন যেভাবে ফুরায়, ঠিক তেমনি সময়ে ব্যাক্তির প্রয়োজনও আর থাকে না।
আপনি একদিন যাদের আকড়ে ধরে থাকবেন বলে বাসনা করেছিলেন, প্রয়োজন শেষে কারণে বা অকারণে তারা আপনাকে ফেলে ছুটবে। তাই বলে সব ছেড়ে-ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলার ভাবনাটাও জীবন নয়।

একটা কথা সবসময়ই সত্য, আপনার নির্মোহ কর্ম আপনাকে আপনার যথাযোগ্য অবস্থানে স্থান দিতে বাধ্য!

সময়ের প্রয়োজনে আপনি আপনার কাঙ্খিত হাত আপনার দিকে না পেলেও, আপনার জন্য এমন অনেক অনাকাঙ্খিত হাত বাড়িয়ে আছে, যে হাতগুলো সত্যিকার অর্থেই আপনাকে মুগ্ধ করবে।

ভালোবাসাই হোক সাধনা

মলয় বাতাসে যখন উড়ে একরাশ এলোমেলো চুল
যখন প্রজাপতির ডানায় খেলে নানান রং ব্যাকুল
যখন তরুছায়ার চিকচিকে খেলে ঢেঁউয়ে আলো-জল
যখন সবুজে ভাবিয়ে তোলে মনে ঐ‘দূরের অঞ্চল
তখন মোহিত ভাবনার চিবুকে চুমিয়ে বললে- ভালোবাসি;

সীমানার প্রান্তরে যখন স্থির হয়ে রয় আঁখি
যখন হিজলবনে ফুল ঝরে ভাসে চেয়ে দেখি
যখন মুক্ত সরোবরে জলকেলিতে মগ্ন হংস পাখি
যখন সায়র গর্জনে আনমনে হারিয়ে যেতে থাকি
তখন ভাবাবেগে আবেশিত গালে চুমিয়ে বললে- ভালোবাসি;

অচেনা কোলাহলে যখন সুর বাজে কানে অবিরত
যখন দূর্বনে অনুকম্পনে রয় বিবাগী বিহঙ্গ মত্ত
যখন চৈতালী হাওয়ায় ভাসে নুপুরের ধ্বনিত নৃত্য
যখন হারিয়ে যাওয়া সুরে বাজে স্বরগম অনবরত
তখন ইচ্ছের দৌলায় কপালে চুমিয়ে বললে- ভালোবাসি;

আনমনে অকারণে যখন সুর উঠে বেজে ঠোঁটে
যখন প্রণয়সিথানে প্রণিত প্রণয় শিয়রে পড়ে লুটে
যখন ব্যাকুল কথার আকুল ছোঁয়া দিকে-দিকে রটে
যখন দু‘জন রচি জন্মান্তরের নেশা মৃত্যু বিয়োগান্তে
তখন শিহরিত ঠোঁটে চুমু এঁকে বললে- ভালোবাসি;

এমনি করেই ভালোবাসা আসে, ভালোবাসা রয়ে যায়
অচেনা ভুবনে অচেনা জন, আপনার আপন হয়ে যায়
সে আপনে আপনজন যখন হয়ে যাই আমরা দুজনা
ভালোবাস তুমি ভালোবাসি আমি, ভালোবাসাই হোক সাধনা।।

রবিবার, ৫ জুলাই, ২০১৫

আমার ব্রাদার আঁন্দ্রে উচ্চ বিদ্যালয়ের দিনগুলো-০২ঃ

আকাশে ঝলমল রৌদ্দুর। সবুজ ঘাসের উপর চকচকে রৌদের আলো-ছায়া খেলা। বাতাসে ফুলের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে। চারদিকে উড়োউড়ি খেলা খেলছে প্রজাপতি আর ফড়িংয়ের দল। বাতাসের ঝাপটা আসছে মাঝে-মাঝে, সে ঝাপটায় ডানা মেলে পাখিরা উড়ে বেড়াচ্ছে কিচির-মিছির শব্দে। এর সাথে যুক্ত হল বিদ্যালয়ের সব ছেলে-মেয়েদের হৈ-হুল্লোর, হুড়ো-হুড়ি, চিৎকার।

বাড়ি থেকে আমাদের বিদ্যালয়ের অবস্থান দক্ষিন দিকে, তাই বিদ্যালয়ে প্রবেশ হতে গেলে আমাদের সবসময়ই বিদ্যালয়ের উত্তর গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে হত। বিদ্যালয়ের উত্তর গেইট ছাড়াও দক্ষিণ দিক দিয়ে আরোকটি গেইট আছে।

বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পা রেখে আমার কাছে বেশ ভালো লাগল। প্রথম গেইট পেরিয়ে গীর্জা, গীর্জার ধ্বনিত প্রার্থনা সংগীত, পাশে সানবাঁধানো পুকুর, সারি-সারি নারিকেল গাছ, দ্বিতীয় গেইটের পাশে ঝাউবন, ঝাউবনের শোঁ-শোঁ শব্দ, সবুজ ঘাস বিছানো বড় মাঠ, খোলা মাঠের উপর দিয়ে দখিনা বাতাস খেতে-খেতে শ্রেণীকক্ষে এগিয়ে যাওয়া। সত্যি সবকিছু যেন স্বপ্নের রাজ্যে পর্দাপন করার মতো।

দ্বিতীয় গেইট ফেরিয়ে আমরা যখন বিদ্যালয়ের বড় মাঠ দিয়ে বাতাস খেতে-খেতে এগিয়ে চলছি, তখন দিদিসহ অন্যসকল মেয়েরা দ্বিতীয় গেইট দিয়ে ডুকে ১৫-২০ হাত পূর্বে গিয়ে তাদের শ্রেণীকক্ষে চলে যাচ্ছে। আসলে বিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়েদের আলাদা শ্রেণীকক্ষ হওয়ায় সবাই সকলের নির্দিষ্ট গন্তব্যে এগিয়ে যাচ্ছে।

তখন সকাল আটটা বাজে। আমদের বিশৃঙ্খল ছাত্রদের সুরুজ স্যার, হেলাল স্যার আর কামাল স্যার বেত হাতে শৃঙ্খলা বদ্ধ করতে লাগল। বেতে আমার ভয় সে ছোটবেলা থেকে। তাই বেত দেখেই শৃঙ্খল হবার দলে যোগ দিয়ে এগিয়ে গেলাম। প্রতিটি শ্রেণীকক্ষের সব ছাত্ররা দলবদ্ধ হলে, প্রতিটি সারি দলবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যায় সবগুলো্ শ্রেণীকক্ষের বেষ্টনিতে ঘিরে থাকা মাঠে। যেখানে রয়েছে দন্ডায়মান স্বাধীন বাংলার লাল সবুজ পতাকা। বাতাসের ছটকায় যে পতাকা উড়ে চলছে মুক্ত আকাশে আপন খেয়ালে।

দন্ডায়মান পতাকার পিছনেই সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অফিস কক্ষ। কিছুক্ষনের মধ্যে হারমোনিয়াম আনা হল, অফিস কক্ষ থেকে বেরিয়ে অতুল স্যার হারমোনিয়াম ধরলে, তাঁকে মধ্যমনি করে পাশে এসে এক-এক করে দাঁড়াল প্রধান শিক্ষিকা ও অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও দপ্তরী সকল। এবার সুরুজ স্যার এগিয়ে এলেন আমাদের ঠিক সামনে, দাঁড়ালেন আমাদের মুখোমুখি হয়ে। শুরু হল মার্চ ফাস্ট। মার্চ ফাস্টের পর শুরু হয় জাতীয় সংগীত। এ প্রথম আমি কারো মুখে জাতীয় সংগীত শুনে সবচেয়ে বেশী অভিভূত হলাম। মানুষ এত সুন্দর করে জাতীয় সংগীত গাইতে পারে, শ্রদ্ধেয় অতুল স্যারের সুরে না শুনলে আমি বোধ করি বিশ্বাসই করতে পারতাম না। জাতীয় সংগীত শেষে সুরুজ স্যারের সাথে আমরা সকলে দেশ তথা দশের কল্যানে নিজেদের বলিদান করবার শপদ বাক্য পাঠ করে সারিবদ্ধভাবে আবার নিজেদের শ্রেণীকক্ষের পথে এগিয়ে চললাম।

বুধবার, ১ জুলাই, ২০১৫

আমার ব্রাদার আঁন্দ্রে উচ্চ বিদ্যালয়ের দিনগুলো-০১ঃ

গোপাই স্কুলে পড়তাম আমি আর মেজদিদি (জয়ন্তী)। দিদি পঞ্চম শ্রেণী শেষ করে ষষ্ঠ শ্রেণীতে উর্ত্তীন হলে দিদির জন্য বিদ্যালয় পরিবর্তনের আভাস আসে, কেননা গোপাই স্কুল ছিল পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। বাবা আর পরিবারের অন্যসকলে দিদিকে পরবর্তিতে বিনোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির সির্দ্ধান্ত নিলেও মায়ের তাতে প্রচন্ড অমত ছিল। অতঃপর মায়ের ইচ্ছায় বাবা ও অন্য সকলে দিদিকে ব্রাদার আঁন্দ্রে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির অনুমতি দিল। কিন্তু এবার আমাকে নিয়ে ঝামেলা। যেহেতু তখন আমি তিনবোনের উপর এক ভাই ছিলাম, তাই ছেলের একা-একা বিদ্যালয়ে যাবার ক্ষেত্রে একধরনের ভয় মা অনুভব করতে থাকেন। অতঃপর বাবার ও অন্যান্যদের সাথে আলোচনায় ঠিক হল আমিও ভর্তি হব দিদির সাথে। যা হোক, যথাসময়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি তালিকা তৃতীয় স্থান নিয়ে উর্ত্তীন হলাম। যথাসময়ে মা আর দিদি গিয়ে ভর্তিও করিয়ে আসলেন। আমাদের দুই ভাইবোনের ভর্তি হবার সাথে সাথে ব্রাদারে আমাদের বাড়ির ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল পাঁচে। মানে শিশুশ্রেণী থেকে বিদ্যালয়ে পড়ত আমার বাবার কাকাত ভাইয়ের তিন ছেলে-মেয়ে (রানু দাদা, সংগীতা দিদি আর কানু) যারা সম্পর্কে আমার ভাইবোন।

নতুন বিদ্যালয়ের দিনগুলো কেমন হবে এ ভেবে খুবই উত্তেজিত ছিলাম আমি। কেননা; ছোটবেলা থেকে শুনে আসতাম ব্রাদার আঁন্দ্রে বেশ ভালো বিদ্যালয় এবং বিদ্যালয়ের আইন-কানুন বেশ কড়া। সুদেব আমাদের পাশের বাড়ির। পঞ্চমশ্রেণীতে ভর্তি হবার সুযোগে আমি তার সে সহপাঠী। তাই বাড়ি থেকে আর সকলের সাথে বের হলেও তার সাথে-সাথে হেলে-ধুলে পথ চলতে লাগলাম। নতুন বিদ্যালয়ে নতুন করে যাবার অনুভূতি তখন বোঝা যাচ্ছিল না ঠিক। ঠিক মনের মাঝে যেমন উৎচ্ছ্বাস ছিল তেমনি ছিল এক ধুরু-ধুরু কাঁপন। কেননা মাইর খাওয়ায় আমার ছিল দারুণ ভয়। সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটি তখন ছিল তা‘হল- বয়সের তুলনায় আমার শরীরের গঠন ততটা পরিপুষ্ট ছিল না। বড় কথা- আমাকে দেখে সকলে ঠিকরাত আমি বোধ করি প্রথম কিংবা দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি। যা হোক, হেলেধুলে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পৌঁছলাম।