রবিবার, ৫ জুলাই, ২০১৫

আমার ব্রাদার আঁন্দ্রে উচ্চ বিদ্যালয়ের দিনগুলো-০২ঃ

আকাশে ঝলমল রৌদ্দুর। সবুজ ঘাসের উপর চকচকে রৌদের আলো-ছায়া খেলা। বাতাসে ফুলের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে। চারদিকে উড়োউড়ি খেলা খেলছে প্রজাপতি আর ফড়িংয়ের দল। বাতাসের ঝাপটা আসছে মাঝে-মাঝে, সে ঝাপটায় ডানা মেলে পাখিরা উড়ে বেড়াচ্ছে কিচির-মিছির শব্দে। এর সাথে যুক্ত হল বিদ্যালয়ের সব ছেলে-মেয়েদের হৈ-হুল্লোর, হুড়ো-হুড়ি, চিৎকার।

বাড়ি থেকে আমাদের বিদ্যালয়ের অবস্থান দক্ষিন দিকে, তাই বিদ্যালয়ে প্রবেশ হতে গেলে আমাদের সবসময়ই বিদ্যালয়ের উত্তর গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে হত। বিদ্যালয়ের উত্তর গেইট ছাড়াও দক্ষিণ দিক দিয়ে আরোকটি গেইট আছে।

বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পা রেখে আমার কাছে বেশ ভালো লাগল। প্রথম গেইট পেরিয়ে গীর্জা, গীর্জার ধ্বনিত প্রার্থনা সংগীত, পাশে সানবাঁধানো পুকুর, সারি-সারি নারিকেল গাছ, দ্বিতীয় গেইটের পাশে ঝাউবন, ঝাউবনের শোঁ-শোঁ শব্দ, সবুজ ঘাস বিছানো বড় মাঠ, খোলা মাঠের উপর দিয়ে দখিনা বাতাস খেতে-খেতে শ্রেণীকক্ষে এগিয়ে যাওয়া। সত্যি সবকিছু যেন স্বপ্নের রাজ্যে পর্দাপন করার মতো।

দ্বিতীয় গেইট ফেরিয়ে আমরা যখন বিদ্যালয়ের বড় মাঠ দিয়ে বাতাস খেতে-খেতে এগিয়ে চলছি, তখন দিদিসহ অন্যসকল মেয়েরা দ্বিতীয় গেইট দিয়ে ডুকে ১৫-২০ হাত পূর্বে গিয়ে তাদের শ্রেণীকক্ষে চলে যাচ্ছে। আসলে বিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়েদের আলাদা শ্রেণীকক্ষ হওয়ায় সবাই সকলের নির্দিষ্ট গন্তব্যে এগিয়ে যাচ্ছে।

তখন সকাল আটটা বাজে। আমদের বিশৃঙ্খল ছাত্রদের সুরুজ স্যার, হেলাল স্যার আর কামাল স্যার বেত হাতে শৃঙ্খলা বদ্ধ করতে লাগল। বেতে আমার ভয় সে ছোটবেলা থেকে। তাই বেত দেখেই শৃঙ্খল হবার দলে যোগ দিয়ে এগিয়ে গেলাম। প্রতিটি শ্রেণীকক্ষের সব ছাত্ররা দলবদ্ধ হলে, প্রতিটি সারি দলবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যায় সবগুলো্ শ্রেণীকক্ষের বেষ্টনিতে ঘিরে থাকা মাঠে। যেখানে রয়েছে দন্ডায়মান স্বাধীন বাংলার লাল সবুজ পতাকা। বাতাসের ছটকায় যে পতাকা উড়ে চলছে মুক্ত আকাশে আপন খেয়ালে।

দন্ডায়মান পতাকার পিছনেই সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অফিস কক্ষ। কিছুক্ষনের মধ্যে হারমোনিয়াম আনা হল, অফিস কক্ষ থেকে বেরিয়ে অতুল স্যার হারমোনিয়াম ধরলে, তাঁকে মধ্যমনি করে পাশে এসে এক-এক করে দাঁড়াল প্রধান শিক্ষিকা ও অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও দপ্তরী সকল। এবার সুরুজ স্যার এগিয়ে এলেন আমাদের ঠিক সামনে, দাঁড়ালেন আমাদের মুখোমুখি হয়ে। শুরু হল মার্চ ফাস্ট। মার্চ ফাস্টের পর শুরু হয় জাতীয় সংগীত। এ প্রথম আমি কারো মুখে জাতীয় সংগীত শুনে সবচেয়ে বেশী অভিভূত হলাম। মানুষ এত সুন্দর করে জাতীয় সংগীত গাইতে পারে, শ্রদ্ধেয় অতুল স্যারের সুরে না শুনলে আমি বোধ করি বিশ্বাসই করতে পারতাম না। জাতীয় সংগীত শেষে সুরুজ স্যারের সাথে আমরা সকলে দেশ তথা দশের কল্যানে নিজেদের বলিদান করবার শপদ বাক্য পাঠ করে সারিবদ্ধভাবে আবার নিজেদের শ্রেণীকক্ষের পথে এগিয়ে চললাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন