বুধবার, ২২ জুলাই, ২০১৫

বিদ্যালয়ের কিছু বেদনাময় স্মৃতি

পৃথিবীতে সবাই বেড়াতে আসে। বেড়াতে এসে কেউ নিতে চায়, কেউ দিতে চায়, কেউ সময় নিয়ে ঘুরতে চায় আবার কেউ সময় হেলে ছুটতে চায়। সময়ের এই খন্ডিত জীবন বলয়ে তাই সকলেই প্রায় আবেগ তাড়িত, তবে আমার আবেগটা বোধহয় আর সকলের থেকে একটু বেশীই। আসলে সত্যটা কি, আমি এখনও ছায়াছবির কোন আবেগী দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলাতে পারি না, চোখ থেকে অনর্গল পানি ঝরতে থাকে কোনে এক অদৃশ্য কাতরতায়। এই জন্য বন্ধু-বান্ধবদের পাশে থাকাকালে আবেগী ছবিগুলো একটু এড়িয়েই চলি, কেননা কেউ যদি আমার আবেগের অস্ফালনটা দেখে ফেলে, যদি লজ্জায় পড়ি!

স্মৃতির ছায়াগুলো আমাকে খুব বেশী দাবড়িয়ে বেড়ায়। বেখেয়াল হলেই কানে ভেসে আসে পঞ্চমশ্রেনীতে টেসি দিদির দুখুকে উদ্দেশ্য করে বলা কথাগুলো। দুখু, পড়ালেখা তোকে দিয়ে হবে না রে। তোর মাকে আর কষ্ট দিস না, সে কত কষ্ট করে দিন-রাত খেটে তোর পড়ার খরচ জোগাচ্ছে, অথচ তুই ঠিকমতো পড়িস না। বলি- কোথাও কাজে লেগে যা, তাতে অন্তত মায়ের কষ্টটা কমবে। পঞ্চম শ্রেনীর পর আমরা আর দুখুকে পাই নি। জানি না দুখু কি তার মায়ের কষ্ট লাঘব করতে ছুটেছে কিনা, নাকি সবভূলে এখনও সে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত।

আব্দুল সাত্তারের কথাও মনে ভাসে, বেচারা নাকি সারাদিন-রাত বই নিয়ে পড়ে থাকত। অথচ পরীক্ষার ফলাফলে ও ওর পরিশ্রমের নূন্যতম সিকিও অর্জনে সমর্থ হত না। মোরশেদ স্যার মাঝে-মাঝেই বলতেন ছেলেটার প্রচেষ্টা আছে অথচ ওর মাথায় কিছুই থাকে না। সপ্তম শ্রেনীর পর আব্দুল সাত্তারকে আর পেলাম না।

জীবনের রঙ্গশালায় তার হাতে সময় খুব বেশী ছিল না। জীবন থেকে হয়ত কিছু পাবার কিংবা নেবার সময় হয়েছে মাত্র, ঠিক তখনই মিতু পাড়ি দিয়েছিল অচিন পথে। সেদিন বিদ্যালয় থেকে মেজদি আর সংগীতা দিদির আসতে বিকেল হয়ে গেলে দেরির কারণ জিজ্ঞাসা করতেই জানতে পারি মিতু নিরুদ্দেশের পথে পাড়ি দিয়েছে, আরও জানতে পারি তার বাবাও নাকি ঠিক কয়েকদিন আগেই গত হয়েছেন। মেয়েটি নাকি বাবার জন্য খুব পাগল ছিল! তাই বাবার শোকটা কাটিয়ে নিজেকে সামলিয়ে নিতে পারে নি। সেদিন বসে-বসে খুব হিসেব মিলাই, ঠিক কতটা মমতা কিংবা ভালোবাসার মোহ থাকলে বাবার পথে নিজেও অচিন দেশে ছুটে যাওয়া যায়?

স্মৃতিগুলোর যন্ত্রণা খুব বেশী, ভুলতে চাই পারি না আবার পালাতে ছুটলে পা পিছলে বারবার পড়ে যাই। বলি- কষ্টের মন্ত্রণাগুলো কেন আমার আদ্যপৃষ্ঠে এতটা জড়িয়ে থাকে? কেউ কি ভালো বলতে পার?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন