শুক্রবার, ২৪ জুলাই, ২০১৫

প্রকৃতি একদিন এর ভার বহতে না পেরে ঠিক বদলা নেবে

এই কিছুক্ষন আগেই পল্টনমোড়ে নেমে পাশে কাপড়ে ঘেরা দোকানে রং চা পান করছিলাম। আমার পাশেই চা পান করছে টিং-টিঙ্গে হেংলা পাতলা ফর্সা গোছের এক মেয়ে। চায়ের দোকানদার বোধ করি তার পুর্ব পরিচিত। দোকানি তাকে জিজ্ঞাসা করল- কিরে তোদের বেতন-বোনাস হয়নি? মেয়েটি কিছুটা জড়ানো গলায় জবাব দিল- বেতন-বোনাস? গত সাপ্তাতে মাত্র মে মাসের বেতন পেলাম। ১০-১৫ দিন আগে অফিসে দেখলাম ৪৫০০০ ফেবরিক্সের মাল এল গার্মেন্টেসে, মাইকে এলাউন্স করে জানানো হল আগামী ২ দিন কাজ করতে হবে। কাজ শেষে সবার সবার বেতন-বোনাস দিয়ে ছুটি দেয়া হবে। পরদিন গিয়ে দেখি সব মাল নিয়ে চলে যাচ্ছে। বসকে জিজ্ঞাসা করলে, বলল- এটা নাকি অন্য কোন বায়ারের সাথে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ ছিল। কাজের হিসেবে বনিবনা না হওয়ায় মালিক বলেছে সাব-কন্ট্রাকে কাজ করবে না। এরপরের দিন শুনি মালিক নাকি পালিয়ে যাচ্ছিল, এয়ারপোর্টে ধরা পড়ে আর যেতে পারল না, পরে জোর চেষ্টায় সকলের মে মাসের বেতন মিলল।

তোদের গার্মেন্টস কোথায়? এয়াপোর্টের কাছে, উত্তর খানে। ঈদে বাড়ি যাবি না?
একটু থেমে- সে আল্লাহ মালুম। একথা বলে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে মেয়েটি জানতে চাইল- তার কতটাকা হয়েছে। দোকানী জানাল ১২ টাকা। মেয়েটি দোকানিকে টাকা দিয়ে বেরিয়ে গেল।

মেয়েটি চলে গেলে চা দোকানির কাছ থেকে জানলাম- আজ ৫ ধরে ওরা কমিউনিস্ট পার্টির অফিস মুক্তিভবনের সামনে জড়ো হয়েছে। পার্টির নেতাদের নির্দেশনায় তারা আন্দোলন করছে নিজেদের প্রাপ্য মজুরী আদায়ে।

অফিসে আসতে কিছুক্ষন মুক্তিভবনের সামনে দাঁড়ালাম। দেখলাম ১৫০-২০০ নারী-পুরুষের অবস্থান, যাদের শতকরা ৮০ জনই নারী। সকলের চোখ-মুখ অন্যায় আর ঘৃণার চাপ বয়ে বেড়াচ্ছে। দূরাশা, হতাশা কিংবা মেনে নেয়া না নেয়ার দ্বিধা-দ্বন্ধে তারা সকলে দ্যোদুলমান। আর ৩-৪ দিন পর ঈদ, সকলের ঈদের আয়োজনে ব্যস্ত থাকবার কথা। অথচ তারা রক্তঝরা ঘাম ঝেরে হাত পেতে বেড়াচ্ছে ঘোরহীন আচ্ছন্ন বলয়ে।

না কোন আশ্রয়ী-অনাশ্রয়ী পেতাত্মা, সাধু-সন্ন্যাসী কিংবা তেঁতুল হুজুরদের অভিশাপ কিংবা অভিসম্পাতে আমাদের এই দেশ কখনো তলিয়ে যাবে না। ধ্বংস হবে না কোন ক্ষমতালোভীদের স্বার্থসিদ্ধ অভিপ্রায়ে। কিন্তু আমি নিঃশ্চিত করে বলতে পারি- এই দেশের অবহেলিত, অনাহত, অতিদরিদ্র মানুষের রক্তঝরা ঘামের মূল্য পরিশোধের যে হীণমন্যতার প্রভাব, যা শ্রমিক, কৃষক কিংবা মেহনতি মানুষের দম আটকিয়ে রাখা রূদ্ধ নিঃশ্বাসে বাতাস ভারী করে তুলছে, প্রকৃতি একদিন এর ভার বহতে না পেরে ঠিক বদলা নেবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন