রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৪

আহত আমি

প্রায় এক বছর ধরে আমার বাবা বেশ অসুস্থতায় ভূগছে। নিজের সামার্থ্য অনুসারে যতটুকু সম্ভব তাকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। বাবার মূল সমস্যা ডায়াবেটিস, কিডনীর সমস্যা আর খাদ্যনালীতে পাথর। বাবার চিকিৎসা হচ্ছে মূলত ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হসপিটাল (বারডেম) ‘এ। কিন্তু সময় অসময়ে নোয়াখালীতেও ডাক্তার দেখাচ্ছি। খাদ্যনালীতে পাথর অপারেশনের ব্যাপারে বারডেমে কথা বললাম। কিন্তু তারা বলছে বাবার যেখানে পাথার সেখানের পাথর অপারেশন করে মূলত কোন লাভ হবে না, তাছাড়া অপারেশনের মতো বাবার শারীরীক উপযুক্ততাও নেই।
ইদানিং বাবার যে সমস্যা বেশী হচ্ছে তা হল- একটু হাঁটাহাঁটি করলেই বাবার পা বেশ ফুঁলে যাচ্ছে আর পা ফোলা সহজে কমছে না। কিন্তু হাঁটা-হাঁটি না করেও উপায় নাই। কারণ আমি ঢাকায় থাকায় বাড়িতে বাজারসহ সাংসারিক কাজ করার মত কেউ না থাকায় বাবাকেই তা করতে হচ্ছে।একটা বিষয় নিজেকে খুবই আহত করছে- তা হল; আমি ইন্টার মিডিয়েট পর্যন্ত নোয়াখালীতেই ছিলাম। বাবা ব্যবসার কাজে সাপ্তাহে একদিন আমাদের সময় দিতেন বিধায়, ছোটবেলা থেকে সংসারের টুকিটাকি বাজার আমাকে সব সময়ই করতে হত। একটু বড় হলে বাড়ির আশপাশের কাকি-জেঠি সকলের আবদার থাকত বাজার থেকে এটা ওটা এনে দেওয়ার। সপ্তম কি অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালে আমি বাবার ভাঙ্গা সাইকেলটা চালাতে শিখলে, সাইকেলে চড়ে বাজার করতে যেতাম। ধীরে-ধীরে সকলের আবদার বাড়ে, একটা সময় এসে দেখী বাড়ির চার-পাঁছটা কাকার পরিবারের (বাবার কাকাত-জেঠাত ভাইয়েরসহ)- জেঠার পরিবারের সবার বাজারের দায়িত্ব আমার কাঁধে এসে পড়ে। একান্ত অনিচ্ছায় কিংবা অসমর্থ্য না হলে কখনও কাউকে না করিনি। নিজের সাধ্যনুসারে সকলকে সুখী রাখতে চেষ্টা করেছি। অথচ এখন দুঃখ-ভারাক্রান্ত হয়ে বলতে হয়, বাড়িতে এখন আমার কাকাত-জেঠাত ভাইসহ অনেকে থাকার সর্ত্ত্বেও আমার এই অসময়ে বলার মতও বা আমার কষ্টটাকে উপলব্ধি করার মত তেমন কাউকেই পাচ্ছি না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন