বুধবার, ২২ জুলাই, ২০১৫

লগনের অন্বেষণ

অনাশ্রিত এই আমাকে করলে জিম্মি কি সে কারণ
প্রেমপ্রয়াসী মন ভাবুকের কোন লগনের অন্বেষণ?

জীবনের আবহসংগীত

দৃশ্যপট-০১ঃ

পুরনো পল্টন মোড়- মোড়ের পাশের পুলিশ বক্স। যেকোন অনাকাক্ষিত ঘটনা সহজে পুলিশের পক্ষে দেখার কিংবা নিয়ন্ত্রন সম্ভব। অথচ কি দেখলাম?

আমি গাড়িতে করে পল্টন থেকে ফার্মগেইট ফিরছিলাম। পল্টন মোড়ে গাড়ি একটু থামিয়ে লোক ভরছে। আমি সিটে বসে লোকজন উঠছে সে দিকে খেয়াল রাখলাম। মোটামুটি ভদ্রগোছের একটা ছেলে গাড়ির পাশ ঘেষে আসছে। দেখে মনে হচ্ছে গাড়িতে উঠবে। কিন্তু হঠাৎ সে গাড়ির জানালা দিয়ে হাত ঢুকিয়েই ছোঁ মারল আমার সামনের এক ভদ্রলোকের মোবাইলে। ভদ্রলোক তখন মোবাইলে ভিডিও গান দেখতে ব্যস্ত ছিলেন। গাড়ির জানালার ফাঁকটা কম থাকায় ছেলেটি সুবিধে করতে পারে নি। আমরা আকস্মিক এমন ছোঁ মারাতে যখন ছেলেটিকে ধরতে বলছিলাম। তখন দুইজন পুলিশ গাড়ির ভিতরকার আমাদের মত নির্বাক দাড়িয়ে।

দৃশ্যপট-০২ঃ নাখালপাড়া আমার বাসার গলির মুখে হাঁটছি বাসায় পৌঁছতে। পাশে একজন মহিলা হাঁটতে-হাঁটতে কথা বলছে। মহিলাটি পুরো ঘেমে একাকার, ব্যতিব্যস্ত কেউ যখন তাড়াহুড়ো করে চলে তখন ক্রমশ দম ভারী হয়ে আসে। মহিলাটিও সেরকম দম ফেলতে-ফেলতে দ্রুত চলছে আর মোবাইলে কাকে যেন বলছে- রোজার সময়টাতে একটা বাসায় কাজ জোগাড় করতে পেরেছি, কিন্তু রোজার পর আমি কি করব?

এভাবে, ঠিক এভাবেই চলছে আমাদের দেশ, দেশের মানুষ আর বদ্ধ নিঃশ্বাসে বয়ে বেড়ানো আমাদের জীবনের আবহসংগীত।

কি চমৎকার

কত বিচার প্রতিক্ষায় দাঁড়িয়ে
কত কাঁদে সে নিরবে আড়ালে
কত বিচার দরজায় কড়া নাড়ে
বিবেক দাঁড়িয়ে অচেতন খেয়ালে।

রাত পুরোয় নতুন বিচার জমে
পুরনো বিচার ঢেঁকে যায় স্তুপে
বিচার নামের লুকোচুরি খেলায়
চলছে দেখ জীবন মেপে-মেপে।

হীরকরাজের দেশ প্রতিশ্রুতি বেশ
চারিদিকে প্রতিশ্রুতির জয়-জয়কার
বিচার হবে!!! বিচার হবে!!!
ভাবছি ভীষণ কি চমৎকার।

রাজনদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ

কি বলব? কাকে বলব? কেন বলব বুঝছি না,
যেখানে রাষ্ট্রযন্ত্র আহম্মকের মতো তাকিয়ে থাকে,
যেখানে দায়-দায়িত্ব, ন্যায়-নীতি সব পর্যবসিত স্বার্থের করতালে,
যেখানে বিবেক দায় সারতে নিয়ত ব্যস্ত,

সেখানে রাজনদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ক্রমাগত চলবে, হায়েনারা লিকলিকে জিহ্বায় রক্তের স্বাদ নিতে উন্মাদ হবে, এ নিয়ে আর ভাববার কি আছে?

মেনে নেয়া

মেনে নেয়া মানে হেরে যাওয়া নয়, বরং সময়ের আবর্তে বোধহীন কাউকে তার নিজের কাছে হারিয়ে দেয়া।

দু‘কদম

সময় বাড়ছে
বয়স কমছে
শরীর করছে উঠা-নামা,

শৈশব-কৈশর আগে গেল
যৌবন রঙ্গে মন মজিল
আর আছে দু‘কদম বাকী
ভুলতে এ পথের ঠিকানা।

বিদ্যালয়ের কিছু বেদনাময় স্মৃতি

পৃথিবীতে সবাই বেড়াতে আসে। বেড়াতে এসে কেউ নিতে চায়, কেউ দিতে চায়, কেউ সময় নিয়ে ঘুরতে চায় আবার কেউ সময় হেলে ছুটতে চায়। সময়ের এই খন্ডিত জীবন বলয়ে তাই সকলেই প্রায় আবেগ তাড়িত, তবে আমার আবেগটা বোধহয় আর সকলের থেকে একটু বেশীই। আসলে সত্যটা কি, আমি এখনও ছায়াছবির কোন আবেগী দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলাতে পারি না, চোখ থেকে অনর্গল পানি ঝরতে থাকে কোনে এক অদৃশ্য কাতরতায়। এই জন্য বন্ধু-বান্ধবদের পাশে থাকাকালে আবেগী ছবিগুলো একটু এড়িয়েই চলি, কেননা কেউ যদি আমার আবেগের অস্ফালনটা দেখে ফেলে, যদি লজ্জায় পড়ি!

স্মৃতির ছায়াগুলো আমাকে খুব বেশী দাবড়িয়ে বেড়ায়। বেখেয়াল হলেই কানে ভেসে আসে পঞ্চমশ্রেনীতে টেসি দিদির দুখুকে উদ্দেশ্য করে বলা কথাগুলো। দুখু, পড়ালেখা তোকে দিয়ে হবে না রে। তোর মাকে আর কষ্ট দিস না, সে কত কষ্ট করে দিন-রাত খেটে তোর পড়ার খরচ জোগাচ্ছে, অথচ তুই ঠিকমতো পড়িস না। বলি- কোথাও কাজে লেগে যা, তাতে অন্তত মায়ের কষ্টটা কমবে। পঞ্চম শ্রেনীর পর আমরা আর দুখুকে পাই নি। জানি না দুখু কি তার মায়ের কষ্ট লাঘব করতে ছুটেছে কিনা, নাকি সবভূলে এখনও সে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত।

আব্দুল সাত্তারের কথাও মনে ভাসে, বেচারা নাকি সারাদিন-রাত বই নিয়ে পড়ে থাকত। অথচ পরীক্ষার ফলাফলে ও ওর পরিশ্রমের নূন্যতম সিকিও অর্জনে সমর্থ হত না। মোরশেদ স্যার মাঝে-মাঝেই বলতেন ছেলেটার প্রচেষ্টা আছে অথচ ওর মাথায় কিছুই থাকে না। সপ্তম শ্রেনীর পর আব্দুল সাত্তারকে আর পেলাম না।

জীবনের রঙ্গশালায় তার হাতে সময় খুব বেশী ছিল না। জীবন থেকে হয়ত কিছু পাবার কিংবা নেবার সময় হয়েছে মাত্র, ঠিক তখনই মিতু পাড়ি দিয়েছিল অচিন পথে। সেদিন বিদ্যালয় থেকে মেজদি আর সংগীতা দিদির আসতে বিকেল হয়ে গেলে দেরির কারণ জিজ্ঞাসা করতেই জানতে পারি মিতু নিরুদ্দেশের পথে পাড়ি দিয়েছে, আরও জানতে পারি তার বাবাও নাকি ঠিক কয়েকদিন আগেই গত হয়েছেন। মেয়েটি নাকি বাবার জন্য খুব পাগল ছিল! তাই বাবার শোকটা কাটিয়ে নিজেকে সামলিয়ে নিতে পারে নি। সেদিন বসে-বসে খুব হিসেব মিলাই, ঠিক কতটা মমতা কিংবা ভালোবাসার মোহ থাকলে বাবার পথে নিজেও অচিন দেশে ছুটে যাওয়া যায়?

স্মৃতিগুলোর যন্ত্রণা খুব বেশী, ভুলতে চাই পারি না আবার পালাতে ছুটলে পা পিছলে বারবার পড়ে যাই। বলি- কষ্টের মন্ত্রণাগুলো কেন আমার আদ্যপৃষ্ঠে এতটা জড়িয়ে থাকে? কেউ কি ভালো বলতে পার?

সোমবার, ২০ জুলাই, ২০১৫

বন্ধু, শুভাকাক্ষি

বিশাল আকাশের নীলে ঘুড়ি উড়তে গিয়ে যখন ঘুড্ডি খেতে-খেতে দিক কেটে উলম্বাকারে নিচে পড়তে থাকে, তখন নির্দিষ্ট পরিধির জায়গায় পৌঁছতেই বায়ু তার পড়াটাকে থামিয়ে আবার ঠেলে দেয় উর্দ্ধমুখে মুক্তভাবে উড়বার জায়গাটিতে। আমরাও উড়ছি ঠিক ঘুড়ির মতো করেই। আর এই মুক্ত উড়ে চলায় আমাদের হোঁছট খাওয়া স্থানে-স্থানে যারা ব্যর্থ হাতগুলো ধরে সাফল্যের সাহস জোগাচ্ছে, সাথে হেঁটে চলছে তারাই এক-একজন বন্ধু, শুভাকাক্ষি।

বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০১৫

বিদ্যালয় জীবনে সেন স্যারের রেখে যাওয়া যে স্মৃতি আজও হাসায়

সপ্তমশ্রেনীতে সেন স্যারের মতো ভয় অন্য কাউকে বোধহয় খুব কমই পেতাম। কারণ স্যারের শ্রেনীকক্ষে প্রবেশ মানে ধুমম্ মাইর হবে।

স্যার শ্রেনীকক্ষে ঢুকে প্রথমে পড়ার জন্য ডাকতেন খ্রীষ্টান বন্ধুদের। তাদের পালা শেষ হলে এরপর উল্টো-প্লাটা রোল দিয়ে ডেকে তাদের পালা। পড়া শেখা থাকলেও মাইর খাওয়া নির্ভর করত স্যারের মর্জির উপর। সে হিসেবে বলা যায় রোল এক হোক বা একশ, মাইর খাওয়াটা সবার মোটামুটি নিশ্চিতই ছিল। আর তাঁর পড়ানোর ধরনও সম্পূর্ণ ভিন্ন, আসলেই Tense, Translation, Essay, Paragraph এই চার-পাচটা গন্ডিতেই আবদ্ধ ছিলেন।

স্যারের শ্রেণীতে অবস্থান আমাদের কতটা আতঙ্কিত কিংবা তত্রস্থ করত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্যারের সেদিনকার দিনগুলো এমন আচারণই হয়ত আজকে আমাদের স্যারকে সবচেয়ে বেশী মনে করার প্রধান কারণ।

স্যারের মুখের সে কথাগুলো যে, কথাগুলো আমরা বন্ধুরা এখনো কয়েকজন এক হলে মনে করতে থাকি, খ্রীষ্টান বন্ধুদের ডাকতে গেলে- খ্রীষ্টাইন্না বেগ্গুন একত্তরে চলি আয়, লেখতে বললে- ১০-১২ পৃষ্ঠা লেই হালাও, লেখা থামাবার সময়- স্ট্যান্ড আপ একপায়ে টেবিলের উপর, মারতে গেলে উত অই যাও উত অই যাও টেবিলের নিচে মাথা দি উত অই যাও, মাইরের আগে কেউ কিছু বলতে চাইলে স্যার বলতেন- আগে মাথা পরে কথা, মাইর দিতে গেলে কেউ যদি স্যার স্যার বলে মাপ করার বাসনা করত- স্যারের জবাব সাগু সাগু করিও না, সাগু সাগু করিও না, সাগু সাগু করি বছরের ১০ মাস খাইয়ালাইছ।

অন্যদের পিটানোর মাঝে স্যারের কমিকগুলো এমন ছিল যে, আমরা এত আতঙ্কের মধ্যেও মাঝে-মাঝে হেসে ফেলতাম। তখন স্যার বলত- হাইসোনা, পালা আইয়ের। মাইরের ভয়ে কয়েকজন জিন্সের প্যান্টের ভিতর কাছা (গোছ) মেরে লুঙ্গি পরে আসত। উৎ করে পিটানোর সময় স্যার যখন দেখত স্যারের মাইর ঠিক মতো লাগছে না তখন দাঁড় করিয়ে শরীরে পিটাত। পরে অবশ্যই পোলাপাইন স্যারের ধরে পেলাটাকে ধরতে পেরে কোচ মারা লুঙ্গির উপরে জিন্সের প্যান্ট পড়েও মাইরের সাথে-সাথে জোরে চিৎকার করে আঘাত পাওয়ার ভাব দেখাত।

আমাদের শ্রেনীতে বয়সের তুলনায় লম্বা সারির ছিল রহমান, বর্মাকেন্টিন (ওর নাম ভূলে গেছি, তাই স্যারের দেয়া নামেই চালিয়ে দিলাম ) , লুক, জোনাস, জিকোসহ বেশ কয়েকজন। রহমান লম্বায় স্যারের থেকেও প্রায় একহাত উঁচু ছিল। তাকে পিটানোর পর আমরা তাকে কখনও আঘাত পেয়েছে এমন কোন ভাব তার মুখে দেখিনি। স্যার তাই তার নাম দিয়েছে স্টিক টাইট। বর্মাকেন্টিন কে নিয়ে স্যারের অজুহাত ছিল বেশ। ও নাকি বর্মাকেন্দ্রীতে একটা কেন্টিনে বসে লুকিয়ে সিগারেট খেত। লুক আব্দুর রহমানদের দলের লোক, অনেক মাইর খাওয়ার পরও যখন ওদের মধ্যে কান্নার কোন ভাব আসত না, তখন স্যার উত্তেজনায় মুখের থু-থু চারিদিকে ছড়িয়ে মারতে-মারতে বলতে থাকত লুকুচ্ছা-ফুকুচ্ছা হুস-হাছ ঠুস-ঠাস হুয়া-হুয়া।

নাকি কাঁদার মতো আমাদের শ্রেনীতে বয়সের তুলনায় কম লম্বা ছিলাম - আমি, সাত্তার, ফারুক, ওয়াছি, আরিফ, কনক, জিয়া, নাজিম, নিতু, সুমনসহ বেশ কয়েকজন। বেতকে আমার জন্মের ভয় ছিল, তাই যখনই আমার ডাক পড়ত আমি স্যারের বেতের সামনে গিয়েই কেঁদে দিতাম। আর গায়ে বেত পড়াত মানে ১০-২০ মিনিটের কান্নার ব্যবস্থা। আরিফকে মাইর দিলেই ও লাফিয়ে উঠে গাল ফুলিয়ে শব্দ করত উফস্ । কনকের গাল তুল-তুলে ফোলাই ছিল, তাই যখন ওকে মারত মুখ দিয়ে কেবল উহ্ উহ্ করত আর তার শরীর রক্তবর্ণ ধারন করত। সাত্তারকে মাইর দিলেই ও শরীরকে বাঁকিয়ে এমন ভাব করত যে না হেসে পারা যেত না। জিয়া (শিমুল) ‘র এলার্জির সমস্যা ছিল, তার শরীরের যেখানটায় মাইর পড়ত সেখানটায় ফুলে এমন টইটম্বুর হত যে, কিছুক্ষন হয়ত চেনাই মুশকিল ছিল । অবশ্য স্যার আমাদের পিচ্ছিদলের অবস্থা বুঝত, তাই আমরা অন্যদের হিসেবে অনেক কমই বেত খেতাম।

জনি, রিটুল, রাহাত, মথি, সোহাগ (টিটলি ভাইয়া) স্যার এদের প্রতি একটু স্পেশাল কেয়ার নিত, মানে বড় গ্রুপের সাথে এরাও প্রায় প্রতিদিনই ধরা খেত। তবে রহমানসহ অন্যদের পিটানোর পর ওদের পিটানোর মত একটা শক্তি স্যারেরও ছিল না ।

স্যার পড়া ধরলেই বোর্ডে সামনে নিয়ে যেত বলত কোগা অ্যাসে, প্যারাগ্রাফ শিখছ বোর্ডে লেখি হালাও। কেউ যদি কি লিখবে বুঝতে না পেরে দাঁড়িয়ে থাকত- তখনই পিঠে ধুপ্ ধুপ পড়ে যেত। মাইরের ঘোরে কেউ যখন দিশা হারিয়ে এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করত, তখন স্যার তার পিছে ছুটে গিয়ে মারত। তবে দৌড়ে গিয়ে নিজের আসনে বসতে পারলে অনেক সময়ই হাঁফ ছেড়ে বাঁচা যেত।

আমাকে এখনো স্যারের যে কর্মকান্ড বেশী হাসায় তা হল- মিরাজকে পড়ার জন্য ডাকলে স্যার মিরাজের সাথে-সাথে মনঞ্জুকেও ডাকত। মূলত দু‘জনের মধ্যে সখ্যতার কারণেও হয়ত স্যার এটা করত। মিরাজ স্যারের মাইরের হাত থেকে বাঁচতে অস্পষ্ট গুনগুনে পড়া বলতে থাকত। যেহেতু মনঞ্জুর সাথে তার সখ্যতা বেশী, তাই স্যার মনঞ্জুকে নিয়ে আসত মিরাজ কি বলতেছে তা বলার জন্য। এখানে মিরাজের কাজ ছিলো মনঞ্জুর কানে-কানে পড়া বলা। আর মনঞ্জুর কাজ ছিলে মাইক হয়ে সে পড়াটা স্যারের কাছে পরিবেশন করা। কিন্তু সমস্যা হলে গিয়ে- মিরাজের ত পড়া শেখা ছিল না, সে মনঞ্জুর কানেও বিড়-বিড় করে পড়া বলত আর মনঞ্জু তার মাইকে কি বলবে সে বুঝতে না পেরে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকত। অবশেষে দুজনের উপর একধাপ পড়ে পালা শেষ হত.....

শনিবার, ১১ জুলাই, ২০১৫

ক্ষত


নয়নজলে যে ক্ষত শুকায়
সে ক্ষত জমে কিঞ্চিৎকালে,
হৃদয়জুড়ে কত ক্ষত বাড়ে
শ্রাবণধারার বৃষ্টির জলে।

অলিখিত প্রণয়

যাকে দেখিনি চোখে
তারি জন্যে নিখাদ দৃষ্টিতে এঁকেছি ভালোবাসার পৃথিবী
কৃষ্ণপক্ষের নিকষ আলো ঢেলেছি তার মুখে-শরীরে
উদাসিন ভেবে যাওয়া কত রাতে একা-একা বেঁধে যাওয়া কত শত কবিতায়

সিঁথানের বালিশ কতবার বাহুবলয়ে এসেছে
তাকে প্রেমশরীরে বেঁধে রাখার সে কত অনুচ্চ ব্যাকুলতা...
তারপর কল্পনাভূক শরীর বেড়ে চোখ ধাঁধিঁয়ে যায় চৈতন্যহীন সবুজ বলয়
আর প্রজপতি ঘাসফড়িং ছুটে চলে অলিখিত প্রণয়ের মোহজালে।

যদিও আমরা

আপনাদের মত মানুষ আমরা, আপনাদের মতই মগজ আছে
মাথা-শরীর-চোখ-মুখ দেখুন, আপনাদের মতোই সব গজেছে

পা চালিয়ে চলেন যেমন, আমরাও চলছি পায়ের ভরে
মুখে তুলে যেমন করে খান, আমরাও খাই তেমন করে

দু‘কলমে জোর আছে ঢের, প্রভাব আছে কোর্ট-কাচারি
আপনারা তাই বড় মানুষ, আমরা আপনাদের কর্মচারী

প্রভুর ইচ্ছেয় চড়া কাঁধ পেলাম, গতর খাটতে কি আর মানা
সুদাসল কাগজ-কলমে কষুন, কত ঘামে মিলবে ষোলআনা

মাথার বোঝায় মগজ চেপে গেছে, বুদ্ধির খেলা খেলব কেমন করে?
আপনাদের সম্মানে, আপনাদের টাকায়, বিক্রি আমরাই নগদ ভারে।

শুধু বলি- যদিও আমরা মাঠের শ্রমিক পথের কুলি রাস্তারধারের কর্মচারী
দিনমজুরে যা খেটে পাই, তাতেই আমরা দুঃখ ঘুছাই, তাতেই পেট পুরি।

শুক্রবার, ১০ জুলাই, ২০১৫

আমার ব্রাদার আঁন্দ্রে উচ্চ বিদ্যালয়ের দিনগুলো-০৩ঃ

পঞ্চম শ্রেণীর আমার প্রথম ক্লাস। শ্রেণীতে আমাদের শ্রেণী শিক্ষক ছিলেন শ্রদ্ধেয় শ্রী অতুল চন্দ্র সূত্রধর যাকে আমরা অতুল স্যার বলে জানতাম। আমরা যখন পঞ্চম শ্রেণীতে, তখন তিনি বয়সের ভারে কিছুটা ন্যুজ। কৃষ্ণকালো পাতলা গড়নের শরীর, মাথায় টাক বর্তমান। শারীরীক বিবেচনায় নিয়ে যদি বয়সটাকে বলি তবে ৬০ বছর অতিক্রান্ত করেছেন সে নিঃসন্দেহে বলা চলে। যা হোক, স্যারকে পেয়ে মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেল। কারণ যার গানের চমৎকার গলা, তিনি মানুষটা যে চমৎকার হবেন তা নিজের বিবেচনায় বুঝতে পারলাম। স্যার হাজিরা খাতা নিয়ে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করলেন এবং সকলের হাজিরা সম্পন্ন করলেন। হাজিরা নেয়া সম্পন্ন হলে, স্যার আমাদের বিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন, লেখা-পড়া প্রভৃতি বিষয়ে বেশ কিছু মূল্যবান উপদেশ দেন। স্যার যখন হেঁটে-হেঁটে আমাদের জ্ঞাণের পরিধিকে বিস্তৃর্ণ করছেন, তখন আমরা অবাক চিত্তে তাঁর মুখ নিঃসৃত বাণী শ্রবণ করছিলাম। স্যার বললেন দেখ সন্মানের জায়গাটা সবসময় মনে রাখবে, যে তোমাকে জীবনে একটা শব্দও শিক্ষা দিয়েছে সে তোমার গুরু। তাই পথে-ঘাটে যেখানেই কোন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দেখবে তাঁদের সন্মান করবে। স্যারের হাতের লেখাটা বেশ চমৎকার ছিল। পঞ্চম শ্রেণীর আমার বার্ষিক পরিক্ষার ফলাফলের কাগজে স্যারের সেই আর্ট করা লেখা আজও বোধ করি আমাদের ঘরে রক্ষিত আছে। অতুল স্যার পঞ্চম শ্রেণীতে আমাদের দুটো ক্লাস নিতেন। প্রথম ঘন্টায় বাংলা এবং শেষ ঘন্টায় সমাজ।

প্রথম ঘন্টা শেষ হলে দ্বিতীয় ঘন্টায় এলেন শ্রদ্ধেয়া টেসি দিদি, পুরো নাম যতটুকু মনে পড়ছে তাতে মনে হয় টেসি গোনছালবেজ‘ই হবে। বিদ্যালয়ে আমরা শিক্ষকদের স্যার আর শিক্ষিকাদের দিদি ডাকতাম, সে হিসেবে তিনি টেসি দিদি। দিদি এসেও আমাদের বিভিন্ন উপদেশ দিলেন। দিদির যে উপদেশটি আমার আজও মনে গেঁথে আছে তা হল- “একটা সময় তোমরা অনেকে অনেক বড় হবে, কিন্তু একটা কথা সব সময় মনে রাখবে- কখনও মুরুব্বি বা শ্রদ্ধেয় জনদের সামনে পা তুলে বসবে না।” দিদির সে উপদেশটি আমি আজও রাখার চেষ্টা করছি। টেসি দিদি সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয়- তাঁর বয়স ৪০ ছুঁই-ছুঁই করছে। শারীরী গড়নটাকে মোটামুটি মোটা বলা চলে, গৌর বর্ণের। দিদি আমাদের গণিত আর ইংরেজী ক্লাস নিতেন। দিদির সংস্পর্শে থেকে আমরা যে গুণটিতে অভ্যস্ত হয়েছি, সে ছিল দ্রুত লেখার চর্চ্চা। তিনি বোর্ডে লেখার সময় এত দ্রুত লিখতেন যে, মাঝে-মাঝে আমরা হাঁফিয়ে উঠতাম।

অতুল স্যার, টেসি দিদি ছাড়াও আরও একজন আমাদের শ্রেণীতে পাঠদান করতেন, তিনি মমতাজ দিদি। ফর্সা স্লিম চেহারার এই দিদি ছিল আমার পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষাজীবনের আতঙ্ক। আসলে হল কি- দিদি আমাদের পঞ্চম ঘন্টার ক্লাসটি নিতেন। ক্লাসের মধ্য বিরতির ঠিক পর-পরই আমাদের শ্রেণীতে এলেন দিদি। মধ্য বিরতির পর দিদি শ্রেণীতে ডুকে পাঠদান শুরু করলেও আমি সুদেবের কাঁদে হাত রেখে কথায় মশগুল। দিদি শ্রেণীতে প্রবেশ করেছেন তাতে আমার নূন্যতম খেয়ালও নেই। হঠাৎ আমার মাথায় উপর ছুটে এল দিদির হাতের বুরুশ আর কানে দিদির কণ্ঠ, বেদপ ছেলে কোথাকার। বুরুশ মাথায় পড়লে আর দিদির চিৎকারে আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। স্তম্ভিত ফিরে যখন আমার ভূলটি বুঝতে পারলাম, ততক্ষণে আমাকে দিদি কান ধরিয়ে শ্রেণীর বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখলেন। সে দিন থেকে দিদির শ্রেণীতে আমার মতো ভদ্র ছেলে খুঁজে পাওয়া মুশকিল ছিল বটে।

বুধবার, ৮ জুলাই, ২০১৫

আমাদের মানষিকতাই সামগ্রিক অধঃপতন নিশ্চয়তার কারণ

দেশের বর্তমান হালচিত্র দেখে মনে হয়, দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে না ভাসিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সবকিছুর সঠিক তদারকির ব্যবস্থা নেয়াটা সবচেয়ে বেশী জরুরী। কেননা নামসর্বস্ব উন্নয়নের জোয়ার দেখাতে গিয়ে গতকাল যে কাজ করা হয়েছে আজ তা ভেঙ্গে পড়ছে, আজ যা করবে নিশ্চিত আগামীকাল তা ভেঙ্গে পড়বে, আগামীকাল যা করবে তা পরেরদিনই ভেঙ্গে যাবে। তাছাড়া অপরিকল্পিত চিন্তা-ধারায় কাজ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে একই কাজ (যেমন- ময়লা-আবর্জনা নিষ্কাশন বা ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ, গ্যাস সরবরাহ ইত্যাদি ) বার-বার ভেঙ্গে পুনরায় করতে হচ্ছে। বারবার একই কাজ করার ফলে প্রতিনিয়ত জনমানুষের যে অসহনীয় ভোগান্তি এবং দেশের টাকার যে পরিমান ক্ষতিসাধন হচ্ছে, শুধুমাত্র সুস্থ মানষিকতা নিয়ে কাজ করে সে টাকায় আমাদের মতো ছোট একটি দেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিনত করা কোন ব্যাপারই নয়।

দেশের সৃষ্টিলগ্ন থেকে দেখলে আমরা দেখছি শুধুমাত্র একশ্রেনী স্বার্থ কুক্ষিগত করতে এবং সরকারগুলো পরম্পরা দেখেও না দেখার ভান করে পড়ে থাকার মানষিকতায় কিংবা যথাযথ মনোযোগ দিয়ে কার্য্যকরি ব্যবস্থা না নেওয়ায় দেশ তথা নাগরিক কিংবা প্রশাসনিক ব্যবস্থার সমস্ত কার্য্যক্রম ক্রমান্বয়ে ভঙ্গুর অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

যখন কোন দেশের অর্থমন্ত্রী বলে উঠেন নিজদেহের কিছু বীষপোড়ার জন্য তিনি বা তারা কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের তীর ছুটে আসে, যদি তিনি বা তারা নিজদেহের বীষপোড়া উপড়ে ফেলতে অসমর্থ হন- তবে অন্যের দেহের বীষপোড়াগুলো তারা কি করে সারিয়ে তুলবেন? একজন দায়িত্ববান ব্যাক্তি যখন দায়িত্ব কাঁদে নিয়ে তা পালনে নিজের অযোগ্যতা, অক্ষমতা কিংবা অপারগতা প্রকাশ করেন এবং নিজ দূর্বলতা সত্ত্বেও অবস্থান ধরে থাকার মানষিকতা পোষন করেন, তখন কি প্রমান হয়? এরমানে কি এই নয় তিনি নিজ দূর্বলতায় অন্যকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন আবার কাউকে সুযোগ না দিয়ে নিজের ভেতরের দূর্বলতাগুলো ঢাঁকতে চেষ্টা চালাচ্ছেন? দায়িত্ব মানে কি বাঁধা পেয়ে থেমে যাওয়া নাকি সমস্ত বাঁধাকে উপড়ে ফেলে এগিয়ে যাবার প্রচেষ্টা করা? যদি সরকারই দেশ চালাতে গিয়ে অজুহাত তৈরী করে এবং নিজেদের দূর্বলতাগুলো জনমানুষের কাছে প্রচার করে জনমানুষের আবেগটাকে সঙ্গিন করে চলার মানষিকতা পোষন করে, তবে সে দেশ কিসের উপর ভিত্তি করে চলছে তা সহজেই অনুমেয়।

মানুষের মানষিক উন্নয়নের দিকে মনোযোগ না দিয়ে কিংবা টেকসই কার্য্যক্রমের প্রচেষ্টা না করে শুধু জনগনের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য যদি দেশটাকে লেংগুট পরিয়ে লজ্জাস্থান ঢেঁকে রাখার পয়তারা করা হয় প্রতিনিয়ত তবে নির্দিধায় বলা যায়, আমাদের মানষিকতাই সামগ্রিক অধঃপতন নিশ্চয়তার কারণ।

পরলোকে মতি

মাটি টেনে নিয়ে যায় দেহখানি যার
মাটির কোলে শয়ন পাতি, নির্ঘুম ঘুম তার
সায়ন্নে ছুটে ঘুমের দেশে, স্তব্ধ জীবনের গতি
মায়া-মোহ ত্যাগ করে সবের পরলোকে মতি।