রবিবার, ৯ আগস্ট, ২০১৫

তুলির ছোপে আঁকছি

যেমন করে দেখছ তুমি তেমন করেই ভাবছি
তোমার মুখের কাব্যকলা তুলির ছোপে আঁকছি।

কেন করছ গরল পান

এ জীবন খ্যাঁত স্বভাবে বদ নসিবের দান
তুমি আপনা সুখ উপড়ে কেন করছ গরল পান?

চিঠি

গতির সীমানা কেউ জানে না, জানে না কোথায় কে থামে
উড়াল পথে এলো কার চিঠি, দেখ ঐ রঙ্গিন খামে।

শ্বশুরকুলটা পালাল কোথায়

আমার আজকের রাশিফলে লিখেছে- “শ্বশুরকুল থেকে অর্থসম্পত্তি প্রাপ্তির যোগ”।
বলি এমন একটা সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু শ্বশুরকুলটা পালাল কোথায়?

কারও জীবনের দহনের মধ্যেই কারও মনের অভিলাষ পূর্ণ হয়

কারও জীবনের দহনের মধ্যেই কারও মনের অভিলাষ পূর্ণ হয়। তাই আধখানা আনন্দ অভিলাষে শিশু বায়না ধরে প্রকৃতির মুগ্ধ রুপে মজে যাওয়া প্রজাপতি কে হাতে নিয়ে খেলা করার বাসনায়, কোন উড়ন্ত ফড়িংয়ের চকচকে ডানার আলো খেলা দেখে তাকে অধিকারে নেওয়ার ইচ্ছেয়।

জগৎ জুড়ে যে করুণ সুরের সুধায় জাগ্রত মন আটকা পড়ে মোহাছন্ন ইন্দ্রজালের জালিকায়, তখনও হয়ত কারও শরীর কেটে-কেটে বিবশ হয়। আর রঙ্গমঞ্চে অভিনয় পারদর্শী কোন মহতি জীবনমঞ্চে অকারণ হেরে বসে।

ভ্রান্ত অভিলাষ নিয়ে কে কাকে কখন কিভাবে ছেড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় - হিসেবের খাতায় তার যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগের ফলাফল মিলালে যে ফল পাওয়া যায়, চোখ বুজে সে ফলকে শূণ্য বলে ধরেই জীবনের আদ্যপ্রান্ত টানতে হয়।

জ্বি; এটাই জীবনের বাস্তবতা, এটাই কেবল জীবন। আর বাদবাকী সবই ঘোর!

কত মানুষজন কত সহজ কৌশলে মহান হয়ে গেল...

না, বলছি ব্যাপার‘টা ভাবতে কিংবা দেখতে মন্দ না, কি বলেন?

মাসের পর মাস শ্রমিকের দিয়ে রাত-দিন হাঁড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটাবেন
উৎপাদন বাড়াতে বোনাস, ওভারটাইম, ভাতা ঘোষনা করে শ্রমিকের মন তাজা করবেন
এরপর কাজ হাসিল করে রক্তঝরা ঘামের মজুরী নিতে ঝড়-বৃষ্টি উতরে, রাত জেগে, রোদে ছেকে মিছিল-মিটিং এর জন্য মাঠে নামাবেন। আর শ্রমিকের রক্তের হাজার-কোটি টাকা লোপাট করে যৎসামান্য দান-খয়রাত-যাকাত-সদকা দিয়ে মহান বনে যাবেন, দেশের কর্ণ্বধার হবেন, দেশের মাতা-পিতা হবেন।

আহা! কত মানুষজন কত সহজ কৌশলে মহান হয়ে গেল...

শুক্রবার, ২৪ জুলাই, ২০১৫

এর নামই জীবন!!

এইযে বলছি চলে যাচ্ছে-
এর নামই জীবন!!
শত বাঁধা-বিপত্তি মান-অপমান ভেবে হাঁফিয়ে যেটুকু চলছি
এর নামই জীবন!!

কেউ ভুল বুঝে, কেউ ভুল খুঁজে
বোঝা-খোঁজার মাঝে যে ইচ্ছের অবদমন আড়ালে লুকাচ্ছি
এর নামই জীবন!!

চাইনি তবু পাচ্ছি, পাইনি তবু চাচ্ছি
দোটানাকে সঙ্গী করে এই যে, প্রতিদিন পথ ভুলে ঘুরছি
এর নামই জীবন!!

কখনও আশায় কাঁদি কখনও ভালোবাসায় হাসি
স্বপ্নবাঁধা খেলাঘর ছেড়ে যাব না বলেও, এইযে চলে যাচ্ছি
এর নামই জীবন!!

চাইছি বুঝুক আমিও বুঝি, চাইছি শিখুক আমিও শিখি
তবু অনিচ্ছার কাঁধ বেয়ে যে নিয়মের বলয় গড়ছে দেখছি
এর নামই জীবন!!

ভাবছি গোছব গোছাব, ভাবতে জানছি জানাব
অথচ অকারণ অনিয়ম শৃঙ্খলে প্রত্যয় হারানোয় এইযে হটছি
এর নামই জীবন!!

এইযে জীবন- এ জীবনই কেবল জীবনের জন্য থাকে
পিষে-পেষে আদ্যোপান্ত লেপ্টে সংযুক্তিগুলোই কেবল রাখে
এখানে ভারহীন ভরসার দুয়ারে পাবে ঠাঁই কোথায় সে কথা?
অথচ নিরন্তন পথচলার বাসনায়ই জানি জীবনের স্বার্থকতা!!

প্রকৃতি একদিন এর ভার বহতে না পেরে ঠিক বদলা নেবে

এই কিছুক্ষন আগেই পল্টনমোড়ে নেমে পাশে কাপড়ে ঘেরা দোকানে রং চা পান করছিলাম। আমার পাশেই চা পান করছে টিং-টিঙ্গে হেংলা পাতলা ফর্সা গোছের এক মেয়ে। চায়ের দোকানদার বোধ করি তার পুর্ব পরিচিত। দোকানি তাকে জিজ্ঞাসা করল- কিরে তোদের বেতন-বোনাস হয়নি? মেয়েটি কিছুটা জড়ানো গলায় জবাব দিল- বেতন-বোনাস? গত সাপ্তাতে মাত্র মে মাসের বেতন পেলাম। ১০-১৫ দিন আগে অফিসে দেখলাম ৪৫০০০ ফেবরিক্সের মাল এল গার্মেন্টেসে, মাইকে এলাউন্স করে জানানো হল আগামী ২ দিন কাজ করতে হবে। কাজ শেষে সবার সবার বেতন-বোনাস দিয়ে ছুটি দেয়া হবে। পরদিন গিয়ে দেখি সব মাল নিয়ে চলে যাচ্ছে। বসকে জিজ্ঞাসা করলে, বলল- এটা নাকি অন্য কোন বায়ারের সাথে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ ছিল। কাজের হিসেবে বনিবনা না হওয়ায় মালিক বলেছে সাব-কন্ট্রাকে কাজ করবে না। এরপরের দিন শুনি মালিক নাকি পালিয়ে যাচ্ছিল, এয়ারপোর্টে ধরা পড়ে আর যেতে পারল না, পরে জোর চেষ্টায় সকলের মে মাসের বেতন মিলল।

তোদের গার্মেন্টস কোথায়? এয়াপোর্টের কাছে, উত্তর খানে। ঈদে বাড়ি যাবি না?
একটু থেমে- সে আল্লাহ মালুম। একথা বলে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে মেয়েটি জানতে চাইল- তার কতটাকা হয়েছে। দোকানী জানাল ১২ টাকা। মেয়েটি দোকানিকে টাকা দিয়ে বেরিয়ে গেল।

মেয়েটি চলে গেলে চা দোকানির কাছ থেকে জানলাম- আজ ৫ ধরে ওরা কমিউনিস্ট পার্টির অফিস মুক্তিভবনের সামনে জড়ো হয়েছে। পার্টির নেতাদের নির্দেশনায় তারা আন্দোলন করছে নিজেদের প্রাপ্য মজুরী আদায়ে।

অফিসে আসতে কিছুক্ষন মুক্তিভবনের সামনে দাঁড়ালাম। দেখলাম ১৫০-২০০ নারী-পুরুষের অবস্থান, যাদের শতকরা ৮০ জনই নারী। সকলের চোখ-মুখ অন্যায় আর ঘৃণার চাপ বয়ে বেড়াচ্ছে। দূরাশা, হতাশা কিংবা মেনে নেয়া না নেয়ার দ্বিধা-দ্বন্ধে তারা সকলে দ্যোদুলমান। আর ৩-৪ দিন পর ঈদ, সকলের ঈদের আয়োজনে ব্যস্ত থাকবার কথা। অথচ তারা রক্তঝরা ঘাম ঝেরে হাত পেতে বেড়াচ্ছে ঘোরহীন আচ্ছন্ন বলয়ে।

না কোন আশ্রয়ী-অনাশ্রয়ী পেতাত্মা, সাধু-সন্ন্যাসী কিংবা তেঁতুল হুজুরদের অভিশাপ কিংবা অভিসম্পাতে আমাদের এই দেশ কখনো তলিয়ে যাবে না। ধ্বংস হবে না কোন ক্ষমতালোভীদের স্বার্থসিদ্ধ অভিপ্রায়ে। কিন্তু আমি নিঃশ্চিত করে বলতে পারি- এই দেশের অবহেলিত, অনাহত, অতিদরিদ্র মানুষের রক্তঝরা ঘামের মূল্য পরিশোধের যে হীণমন্যতার প্রভাব, যা শ্রমিক, কৃষক কিংবা মেহনতি মানুষের দম আটকিয়ে রাখা রূদ্ধ নিঃশ্বাসে বাতাস ভারী করে তুলছে, প্রকৃতি একদিন এর ভার বহতে না পেরে ঠিক বদলা নেবে।

বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৫

বড়দিদি

পরীক্ষার রেজাল্ট হাতে দাঁড়িয়ে বড়দিদি, অমনি বুকটা ধড়পড়-ধড়পড় করতে লাগল। বড়দিদি বলতে থাকলেন তাঁর কথাগুলো আর তা বুকের মাঝে চেল হয়ে ক্রমাগত বিঁধতে থাকল। মাঝে-মাঝে শ্রেনীকক্ষে প্রবেশ করেও দিদি তাঁর বাক্যবানে স্তব্ধ করে দিতেন আমাদের।

সময়ের পরিক্রমায় আজ বুঝি, শাসনের যে বাক্যবান আমাদের হৃদয়কে একদিন ক্ষত-বিক্ষত করত। সে বাক্যবান সময়ে বুঝলে হয়ত আজকে আমরা সকলে ধারণ করতে পারতাম এক একটা গৌরবময় মুকুট।

বুধবার, ২২ জুলাই, ২০১৫

ঈদ শুভেচ্ছা

বাঁধভাঙ্গা জোয়ারে এল প্রান উচ্ছল দিন
গলায় গলায় বুকে বুকে দিন হল রঙ্গিন
ধনী-দরিদ্র জাত-গোত্র ভেদ নাইকো কারও মনে
রমজানের ঐ রোজার শেষে আজকে খুশির দিনে

ঈদ মোবারক
সবাইকে রইল ঈদের প্রানঢালা শুভেচ্ছা...

লগনের অন্বেষণ

অনাশ্রিত এই আমাকে করলে জিম্মি কি সে কারণ
প্রেমপ্রয়াসী মন ভাবুকের কোন লগনের অন্বেষণ?

জীবনের আবহসংগীত

দৃশ্যপট-০১ঃ

পুরনো পল্টন মোড়- মোড়ের পাশের পুলিশ বক্স। যেকোন অনাকাক্ষিত ঘটনা সহজে পুলিশের পক্ষে দেখার কিংবা নিয়ন্ত্রন সম্ভব। অথচ কি দেখলাম?

আমি গাড়িতে করে পল্টন থেকে ফার্মগেইট ফিরছিলাম। পল্টন মোড়ে গাড়ি একটু থামিয়ে লোক ভরছে। আমি সিটে বসে লোকজন উঠছে সে দিকে খেয়াল রাখলাম। মোটামুটি ভদ্রগোছের একটা ছেলে গাড়ির পাশ ঘেষে আসছে। দেখে মনে হচ্ছে গাড়িতে উঠবে। কিন্তু হঠাৎ সে গাড়ির জানালা দিয়ে হাত ঢুকিয়েই ছোঁ মারল আমার সামনের এক ভদ্রলোকের মোবাইলে। ভদ্রলোক তখন মোবাইলে ভিডিও গান দেখতে ব্যস্ত ছিলেন। গাড়ির জানালার ফাঁকটা কম থাকায় ছেলেটি সুবিধে করতে পারে নি। আমরা আকস্মিক এমন ছোঁ মারাতে যখন ছেলেটিকে ধরতে বলছিলাম। তখন দুইজন পুলিশ গাড়ির ভিতরকার আমাদের মত নির্বাক দাড়িয়ে।

দৃশ্যপট-০২ঃ নাখালপাড়া আমার বাসার গলির মুখে হাঁটছি বাসায় পৌঁছতে। পাশে একজন মহিলা হাঁটতে-হাঁটতে কথা বলছে। মহিলাটি পুরো ঘেমে একাকার, ব্যতিব্যস্ত কেউ যখন তাড়াহুড়ো করে চলে তখন ক্রমশ দম ভারী হয়ে আসে। মহিলাটিও সেরকম দম ফেলতে-ফেলতে দ্রুত চলছে আর মোবাইলে কাকে যেন বলছে- রোজার সময়টাতে একটা বাসায় কাজ জোগাড় করতে পেরেছি, কিন্তু রোজার পর আমি কি করব?

এভাবে, ঠিক এভাবেই চলছে আমাদের দেশ, দেশের মানুষ আর বদ্ধ নিঃশ্বাসে বয়ে বেড়ানো আমাদের জীবনের আবহসংগীত।

কি চমৎকার

কত বিচার প্রতিক্ষায় দাঁড়িয়ে
কত কাঁদে সে নিরবে আড়ালে
কত বিচার দরজায় কড়া নাড়ে
বিবেক দাঁড়িয়ে অচেতন খেয়ালে।

রাত পুরোয় নতুন বিচার জমে
পুরনো বিচার ঢেঁকে যায় স্তুপে
বিচার নামের লুকোচুরি খেলায়
চলছে দেখ জীবন মেপে-মেপে।

হীরকরাজের দেশ প্রতিশ্রুতি বেশ
চারিদিকে প্রতিশ্রুতির জয়-জয়কার
বিচার হবে!!! বিচার হবে!!!
ভাবছি ভীষণ কি চমৎকার।

রাজনদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ

কি বলব? কাকে বলব? কেন বলব বুঝছি না,
যেখানে রাষ্ট্রযন্ত্র আহম্মকের মতো তাকিয়ে থাকে,
যেখানে দায়-দায়িত্ব, ন্যায়-নীতি সব পর্যবসিত স্বার্থের করতালে,
যেখানে বিবেক দায় সারতে নিয়ত ব্যস্ত,

সেখানে রাজনদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ক্রমাগত চলবে, হায়েনারা লিকলিকে জিহ্বায় রক্তের স্বাদ নিতে উন্মাদ হবে, এ নিয়ে আর ভাববার কি আছে?

মেনে নেয়া

মেনে নেয়া মানে হেরে যাওয়া নয়, বরং সময়ের আবর্তে বোধহীন কাউকে তার নিজের কাছে হারিয়ে দেয়া।