বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০১৪

প্রসঙ্গঃ ধর্মপ্রচার (বন্ধুদের আহত করার উদ্দেশ্য এ পোষ্ট নয়, এ শুধু ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ)

গতকাল শুক্রবার জুম্মা নামাজের ১০ কি ২০ মিনিট পূর্বে একজন লোক একজন সুন্দরী মহিলাকে নিয়ে আমাদের ম্যাচের দরজায় নক করল। আমাদের ম্যাচের তিনরুমের মাঝখানের রুমটিতে আমার বসবাস। দরজা নক করা হলে আমার পাশের রুমের একটা ছেলে- যাকে আমরা সবাই ভাগিনা সম্মোধন করে দুষ্টামি করি, সে বেরিয়ে এল। তাকে পেয়ে লোকটি জিজ্ঞাসা করল- এখানে কোন হিন্দু ছেলে-পুলে থাকে? ভাগিনা আমাকে ডেকে দিল- আমি কাছে আসলে লোকটি আমাকে দেখেই বলতে শুরু করল- আমি অমুক (লোকটির নাম বুলে গেছি), পাশের মহিলাকে দেখিয়ে বললেন- ও আমার বোন। আমি লোকটি আর তার বোনের দিকে তাকালাম। দেখেই মনে হল বোন পরিচিতি প্রদানকারিনী প্রকৃত অর্থে তার বোন নয়।

আমি লোকটির হাতে দিকে তাকালাম- দেখলাম তার হাতে যিশুখ্রীষ্টের বাণী সম্বলিত কিছু লিফলেট। আমি লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলাম- আপনি কি খ্রীষ্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে আমাকে ডেকেছেন? লোকটি জবাব দিল- হ্যাঁ; অনেকটা সেরকম।


তার কথা শুনে আমি তাকে কথা না বাড়াতে দিয়ে বললাম- আপনি ভূল করে আমাকে ডেকেছেন। আমি আমার ধর্মের প্রতি এখনও অটুট বিশ্বাস জ্ঞাপন করি। আর আপনার ধর্মসহ সব ধর্মের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। তাই আমি মনে করি, আপনি এখানে সময়জ্ঞাপন করাটা অমূলক। একথা বলতে লোকটি কিছু একটা বলতে চাইল- আমি আবার বললাম আপনার ধর্মের প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ আছে, আপনি আসতে পারেন। এবার লোকটি চলে গেল।

লোকটি চলে যাওয়ার পর নিজের সাথে নিজে কিছুক্ষন যুদ্ধ করলাম, মনে হলে লোকটিকে কিছুটা হেনস্থ করার প্রয়োজন ছিল কিন্তু করা হল না।

আমার বন্ধুদের মাঝে প্রশ্ন জাগতে পারে আমি লোকটিকে দেখেই কিভাবে বুঝলাম সে আমার নিকট তার ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এসেছে। ব্যাপারটি ঘটে আজ থেকে ১০ কি ১২ বছর আগে। আমাদের বাড়ির পাশেই খ্রীস্টানপাড়া আর আমি খ্রীস্টানপাড়ার মিশনারিজ স্কুলের ছাত্র। একদিন আমি স্কুল থেকে ফিরে জানলাম আমাদের বাড়িতে একদল লোক এসেছে। মা আমার হাতে কিছু বই তুলে দিয়ে বললেন; ওরা এই বইগুলো দিয়েছে আর খ্রীস্টান ধর্মের ব্যপারে সবাইকে বুঝিয়েছে। বইটা খুলে দেখালাম ওটা একটা বাইবেল ছিল। যা হোক এরপর থেকে আমি ওদের কর্মপরিধি সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান রাখি।

লোকটি চলে গেল, যাওয়ার পর থেকে যে বিষয়টি আমার মনকে খুব বেশী আহত করতে লাগল, তা হল- এভাবে ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্য বা অধিকার কি সত্যিকার অর্থে কারও থাকা উচিত কিনা? লোকটির সাথে যে মহিলাটি ছিলেন, তিনি অত্যাধিক সুন্দরী একজন মহিলা এবং দেখেই বুঝা যাচ্ছে হয় তিনি বাহিরের কোন মিশন থেকে আগত অথবা কোন আধিবাসী সুন্দরী। এমন একজন সুন্দরী মহিলাকে সাথে এনে ধর্ম প্রচারের ব্যাপারে কি কোন উদ্দেশ্য আছে নাকি?

আগেই বলেছি, আমার স্কুল শিক্ষাজীবন কাটে খ্রীস্টান মিশনারিজ স্কুলে। স্কুলে হিন্দুধর্মের ক্লাস নেওয়ার মতো যথেষ্ট হিন্দু শিক্ষক না থাকায় এবং ছাত্রদের ক্লাসে উপস্থিত থাকার নিশ্চিত করতে আমাদের হিন্দু ছাত্র‘দের খ্রীস্ট অথবা ইসলামধর্মের ক্লাস করতে হত। ফলশ্রুতিতে খ্রীস্ট আর ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে আমাদের জানা শুরু হয় ছোটবেলা থেকে। তাছাড়া ভার্সিটিতে পড়া অবস্থায়ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ডঃ সুকোমল বড়ুয়া বিশ্বধর্ম (World Religions) ক্লাসে এবং সবধর্ম সমন্ধে ছোটবেলা থেকে জানার আগ্রহ থেকে আমার ইসলাম, খ্রীস্ট, গুরু, শিখ, জৈন, বোদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে কিছুটা জানা আছে। 

যাক সেকথা, আমি এ‘পোষ্ট দেবার কারনে আমার খ্রীস্টান বন্ধু‘রা আহত হতে পারে। আর মিশন স্কুলে পড়ার ধরুন আমার খ্রীস্টান বন্ধুদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তাই যদি আমার কোন বন্ধু এ লেখায় কষ্ট পেয়ে থাকে, তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আর আমার আন্তরিক বিশ্বাস আছে আমার বন্ধুদের প্রতি, তারা আমার অনুভবটুকু বুঝতে পারবে।

[ঘটনাপ্রবাহ-২০ জুন-২০১৪]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন