বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০১৪

প্রসঙ্গঃ যৌনকর্মীদের উচ্ছেদ

যৌন বিষয়ক লেখা লিখতে বিবেকে বাঁধে, কেননা আমার ফেবু ফ্রেন্ডলিষ্টে আমার অনেক ছোটভাই-বন্ধু আছে, আছে আমার থেকেও অনেক বয়োজ্যোষ্ঠ শ্রদ্ধেয়, তারপরও না লিখে পারছিনা। কারণ- নির্মম সত্যকে মিথ্যার প্রশ্রয়ে ঢেঁকে রাখা সম্ভব নয় বলে।

নারায়নগঞ্জের ন্যায় টাঙ্গাইলেও যৌনকর্মীদের উচ্ছেদ অভিযান চলছে। কিন্তু কি উদ্দেশ্যে? কাদের স্বার্থচরিতার্থ করার আশায় কোনপ্রকার পূর্ণবাসন ছাড়া যখন এভাবে উচ্ছেদ অভিযান চলে? আর এর উদ্দেশ্য কি দাঁড়ায়? আমি বলছি- এ‘যৌনকর্মীদের উচ্ছেদ করার পর এরা কি যৌন ব্যবসা ছেড়ে দেবে? যদি ছেড়ে না দেয়, তবে তাদের জীবন-যাপনের ব্যবস্থা কি? ঠিক কোন প্রকারে তাদের জীবন চলবে? সরকার, সরকারী প্রসাশন কিংবা ক্ষমতালিপ্সু নেতা‘রা কি এ‘ব্যপারে কোন পদক্ষেপ নিয়েছে? যদি না নিয়ে থাকে, তবে এর সুদূরপ্রসারী ক্ষতিটার হিসেব কি কেউ করছে?
আমাদের দেশ ভন্ডামীর উপর নির্ভর করে দিনকে-দিন টিকে থাকার চেষ্টা করছে, কিন্তু বাস্তবতার পক্ষ অবলম্বন করার মানষিকতা দু‘একজন ছাড়া খুব কমই চোখে পড়ছে। যৌনকর্মীদের তাদের স্খান ক্ষমতার মাধ্যমে ছাড়ানো হোক বা কোন মহতি চিন্তা থেকে হোক এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল খুবই খারাপ। এর বাস্তব চিত্র আমরা দেখছি নারায়নগঞ্জের যৌনপল্লী উচ্ছেদের পর। নারায়নগঞ্জের যৌনপল্লী উচ্ছেদের পর ঢাকা শহরে এর কিরূপ প্রভাব পড়েছে, তা কল্পনাতিত। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় ঢাকা শহরের অলিতে-গলিতে এখন যৌন ব্যবসা বেশ ছাড়ুর দিয়ে উঠেছে। ঢাকার আশপাশের বাসাগুলোয় একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, প্রায় ১০-২০ শতাংশের বাসায় নিভৃত্তে চলছে যৌন ব্যবসার রমরমা ব্যবসা। ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো স্থানে-স্থানেও পর্যন্ত এ‘ব্যবসা এখন চাঙ্গা। নেটে এ‘ব্যাপারে যথেষ্ঠ তথ্য-উপাত্ত আছে।

এবার আমার দেখা একটি বাস্তব ঘটনা বলি তাহলে বিষয়টি আর একটু পরিষ্কার হবে। আমি তখন বাড্ডা ছোলমাইদ এলাকায় থাকি, সময়কালঃ ২০০৭-২০০৮ এর মাঝামাঝি, হঠাৎ আমার শহরের এক আঙ্কেলের ফ্ল্যাটের পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়ার সাথে মালিক আর চারপাশের লোকজনের বেশ কড়া বাক-বিতন্ডা শোনা যায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল- ভাড়াটিয়া স্বামী-স্ত্রী থাকবে বলে ভাড়া নিলেও প্রতিদিন তার বাসা নিত্যনতুন নারী আর পুরূষের আনাগোনা চলে, মাঝরাতের দিকে এ‘ আনাগোনা বেশ বেড়ে চলে। রাত-শেষে দিনের দিকেও দুই-তিন জোড়ার অসংলঘ্ন আচারণ চোখে পড়ে, প্রথমে মাত্রা কম থাকায় আত্মীয়-স্বজন বলে চালালেও যথন বিষয়টি বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়, তখন চারপাশের প্রতিবাদের মুখে তারা বাসা ছেড়ে চলে যায়।

এক বন্ধুর কাছ থেকে শোনা আরোকটি ঘটনা বলি- বন্ধুটি তেঁজগাও‘তে একটা সাবলেট বাসায় গেছে একরুম ভাড়ার বিজ্ঞাপন দেখে, গিয়ে দেখে দুইরুম আর এক ডাইনিংরুমের একটা ফ্ল্যাটের ডাইনিংরুমে স্বামী-স্ত্রী থাকেন, বাকী দু‘রুম তারা ভাড়া দেন। এক রুম খালি, বাকীরুমে ভাড়াটিয়া আছে, কিন্তু ঠিক কতজন ঐ‘রুমে ভাড়া থাকে বোঝা গেল না, তবে বন্ধুটির ভাষ্য থেকে শুনি- সে ঐ‘রুমের সামনে কমচে ১০-১২ জোড়া জুতো ছিল আর ভাড়া দেবার ব্যাপারে স্ত্রী‘টির উক্তি ছিল আপনারা কতজন থাকবেন সে সমস্যা নয়, কিন্তু ভাড়া ....দিতে হবে। বন্ধুটি হিসেব করে দেখল, ঐ বাসায় এ ভাড়া একবারেই অস্বাভাবিক ছিল। আর দু‘রুমের লোকজনকে ডাইনিংরুম পার হয়ে টয়লেটে যেতে হয়, কারণ দু‘রুমের ফ্ল্যাটে একটাই বাথরুম। এ দেখে বন্ধুটি ফিরে এল।

তাই বলি যদি পূর্ণবাসন ব্যতীত যখন এভাবে উচ্ছেদ অভিযান চলে, তবে এর ফলশ্রুতি ভালো হবে না। এজন্য শিঘ্রই আমাদের এ‘বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত এবং কোনরূপ অভিবাসন ছাড়া এ ধরনের হীনপদক্ষেপের বিরূদ্ধে স্বোচ্ছার হওয়া জরুরী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন