সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৬

সংখ্যালঘু

আমাদের পাশের গ্রাম বিনোদপুরের একটা প্রচারিত ঘটনা ছিল এমন-

প্রতিদিন গ্রামে কোন না কোন ঘরে কিংবা মাঠ-বাগানের ফল-ফসল চুরি হয়ে যাচ্ছিল, কোনভাবেই এই সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছিল না। এলাকার লোকজন জানত কার ইশারায় চুরি হচ্ছিল, কিন্তু উপযুক্ত প্রমান আর খর্বিত ক্ষমতার ধরুন প্রভাবশালী মদদ দাতাকে কেউ স্পর্শও করতে পারছিল না। তো নির্বাচন প্রাক্কালে সে মদদ দাতাও মেম্বার পদপ্রার্থী পদের জন্য দাঁড়ায়। এলাকার লোকজন মনে-মনে তার উপর চড়াও থাকায় সে বুঝতে পারে নির্বাচনে তার পরাজয় শতভাগ নিশ্চিত। তাই তিনি নির্বাচন প্রচারে এ‘কথা প্রচার করতে থাকেন যে, যদি তিনি নির্বাচিত হন, এলাকার লোকজন দরজা খুলে ঘুমোতে পারবে, কোন চুরি হবে না। যাই হোক- প্রতিদিন পাহারা দিতে থাকা অতিষ্ঠ লোকজন এর সমাধান চাইছিল খুব করে, তাই এই নিয়ে মুরুব্বিশ্রেনীর কয়েকজন বসল। বসে তারা সবাই দেখল মদদ দাতা মেম্বারের বিপরীতে যিনি দাঁড়িয়েছেন, তিনি চুরির মদদ দাতা থেকে কিছুটা ভালো হলেও তাকে দিয়ে এই সমস্যা আদৌ সমাধান সম্ভব নয়। তাই সকলের সম্মতিক্রমে চুরির মদদ দাতাকে নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং তিনি নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পরেরদিন থেকে এলাকায় সত্যিকারে চুরি বন্ধ হয় এবং এলাকার মানুষের স্বস্তি ফেলবার সুযোগ হয়।

উপরের গল্পটি এইদেশের সংখ্যালঘুদের জানার উদ্দেশ্যে দেয়া, এদেশে সংখ্যালঘুদের নিঃশেষ করার জন্য যারা উঠে-পড়ে লেগেছে, সংখ্যালঘু‘রা ভয়ে-আতঙ্গে তাদের কাছ থেকে দূরে সরে থাকবার চেষ্টা করছে। ফলশ্রুতিতে প্রতিনিয়ত তাদের ভাগ্যে নেমে আসছে নির্মম প্রহসন। একদিকে যারা তাদের নিঃশেষ করতে চাচ্ছে, তারা নির্বাচিত না হয়ে সংখ্যালঘুদের কারন হিসেবে দেখে ক্ষোভ-প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করছে আর অন্যদিকে ডর-ভয়ে আতঙ্কগ্রস্থ সংখ্যালঘু‘রা বাঁচতে গিয়ে যাদের আকড়ে ধরতে চাইছে তারা স্বার্থ উদ্ধার শেষে নিজেদের আখের গুছাতে এবং পরবর্তীতে ক্ষমতায় আহরণের আশায় নিজেদের ভাই-বন্ধু খুঁজে তোষামোদিতে সংযুক্ত হচ্ছে। যার খেসারত ১৯৪৭ থেকে ২০১৬ সংখ্যলঘুর সংখ্যা ৩০% থেকে নেমে ৮%।

পরিশেষ একটা কথা- আমার মেছের ছোটভাই শরীফ একদিন হেসে উঠে আমার বন্ধু মিথুনকে উদ্দেশ্য করে বলছে, মিথুন ভাই দাদা আপনাকে আর করিম ভাইকে যে পরিমান নির্যাতন করছে (প্রেক্ষিত- আমার স্বভাব বন্ধুদের অসম্ভব বিরক্ত করে নিজের এবং তাদের মন ভালো রাখার চেষ্টা করা) তাতে কে বলবে এদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন হয়! দাদা (আমাকে উদ্দেশ্য করে), কানু দাদা (ছোটভাই কানু) আর আমার বন্ধু সুব্রত (ছোটভাই) তো প্রতিদিন সংখ্যলঘু নির্যাতনের খবর পায়। যাই হোক, শরিফের সে কথা শুনে মনে-মনে হাসলাম আর বললাম- ভাইয়া, দোষ করেছে একজন আর তার খেসারত দিয়েছে ৩০০টি পরিবার। না এরবেশি বলার ইচ্ছে নেই, শুধু একটা কথাই ভাবছি ৬৯ বছরে সংখ্যলঘুদের ১০০% এর প্রায় ৭০% শেষ আর বাকীটা শেষ হতে বছর হিসেবে সময় নেবে ২৫ বছর। তারপর কি হবে? কি হবে না হবে সেটা বরং আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের দিকেই চোখ রেখে আমরা দেখি। যদি এখনও সকলের মনে বদ্ধমূল ধারনা থাকে মুসলিম-মুসলিম ভাই-ভাই, তবে বলি- ক্ষমতার লোভ আর রক্তের নেশা এই দুই পেয়ে বসলে শেষ ধ্বংস পর্যন্ত সে কাউকে নিস্তার দেয় না, উত্তর প্রজন্ম সে পথেই দ্রুত এগিয়ে চলছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন