রবিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৫

আমার ২৯ বছরের জীবনে যারা আমাকে আগলে রেখেছে

জীবনে চলতে গেলে কিছু মানুষের হাত ধরে এগিয়ে চলতে হয়। এগিয়ে চলা জীবনে যে হাতগুলো সারাজীবন শক্ত করে ধরে রাখে, সে হাতগুলো বাবা-মায়ের। তাই বাবা-মায়েরর্ ঋৃণ শোধ করার মানষিকতা পোষন জগতে সবচেয়ে হীন কর্মগুলোর মধ্যে অন্যতম।

বাবা-মা ছাড়াও আরো কিছু মানুষ আছে যাদের স্নেহ-সান্নিধ্য কিংবা নিঃস্বার্থ মমতা ছাড়া এগিয়ে চলা কঠিন। আমার জীবনে এগিয়ে চলা পথে যে মানুষগুলো স্নেহ-সহযোগিতা আমাকে আজীবন ঋৃণী করছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম মানুষগুলো-

১) মেজদিদিঃ ছোটবেলায় আমাদের যৌথ পরিবারের দায়িত্ববেড়িতে মা যখন ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তখন বড়দিদি মামার বাড়িতে, বাড়িতে আমার ভরসার আশ্রয় আমার মেজদিদি। মেজদিদির স্নেহ-সান্নিধ্য ছাড়া বেড়ে উঠা পথটা সত্যিই কঠিন ছিল। চাপা স্বভাবের হওয়ায় ছোটবেলায় থেকে আমার বাবা-মায়ের কাছে আবদারগুলো বেশিরভাগই পূর্ণ হত মেজদিদির মাধ্যমে। ছোটবেলায় পড়তে বসলেই আমার কেবল ঘুম পেত, পড়ালেখার ব্যাপারে মায়ের কড়াকড়ি বেশী থাকায় আমি ঘুমিয়ে পড়লে দিদি পাহারা দিয়ে রাখত মা কখন আসে? তাছাড়া একই শ্রেণীতে পড়ার সুবাদে প্রাইভেট পড়া থেকে শুরু করে আমার যে সোর্সগুলোতে টাকা-পয়সার প্রয়োজন পড়ত সেগুলোতে বাবাকে বলার মত সাহস আমার না থাকায় দিদিই আমার গুরুত্বপূর্ণ সহযোগি হিসেবে কাজ করত।

২) মন্টু স্যারঃ আমার জীবনে যে কয়জন লোককে কোন স্বার্থ ছাড়া কাজ করতে দেখেছি, তার মধ্যে মন্টু স্যার অন্যতম। বিদ্যালয়ের ১-২ বছর তাঁর এমন অকুন্ঠ ভালোবাসা পেয়েছি যা কখনোই ভূলবার নয়। তাছাড়া তাঁর দেয়া পন্ডিত নাম, শিক্ষকদের বন্ধুপ্রতিম হিসেবে তাঁর অগ্রসরতায় এতটাই আমি মুগ্ধ যে, তিনি নিজের চারিত্রিক গুণে আমার শ্রদ্ধার অনেক বড় একটা স্থান জুড়ে আছেন।

৩) মোর্শেদ স্যারঃ আমার বিদ্যালয়ের দিনগুলোতে সবচেয়ে বেশী যে শিক্ষকটির স্নেহ-পরশ সংযুক্ত ছিল, তিনি মোর্শেদ স্যার। তাঁর স্নেহ-সান্নিধ্য আমাকে এতটাই আপ্লুত করেছিল যে, আজো আমার জীবনের সীমারেখা কাটা ছায়াগুলোর মধ্যে তিনি অন্যতম হয়ে আছেন।

৪) লিটন‘দাঃ ছোটবেলা দু‘ই একবার তার সাথে ঝগড়ার কথাই কেবল মনে আছে, কিন্তু বিদ্যালয়ের জীবন সম্পন্ন হবার পর, যে আমাকে বড়ভাই আর বন্ধুর মতো আগলে রেখেছে, সে লিটন‘দা। সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত লিটন‘দার মমতার হাতের আশ্রয় আমার ভরশার অন্যতম স্থান।

৫) খগেন্দ্র স্যারঃ কিছু-কিছু মানুষের দেখানো পথ ধরে এগিয়ে চললে, কিছু‘টা কষ্টসাধ্য দূর্গমপথ হেঁটে নিজের গন্তব্যে পৌঁছা যায়। হ্যাঁ; আমি স্যারের দেখানো পথে হেঁটে আজ এই গন্তব্যে এসেছি। স্যারের সেদিনকার দেখানো পথে এগিয়ে না আসলে, আজ আমাকে হয়ত রাস্তায় পড়ে-পড়ে মরতে হত। স্যারের জন্যই আজ আমার কাছে প্রকৌশলী বলার মত মত একটা পদবী আছে। অথচ তাঁর দেখানো পথে হেঁটে আসতে-আসতে তাঁকে দেখার মত একটা সুযোগও আমার হাতে আমি রাখতে পারিনি। স্যার আজ বেঁচে আছেন কি না, সে খোঁজটুকুও রাখার সুযোগ আমার হয়নি, তবু আমার হাতরে চলা পথে তিনিই আমার প্রদীপ। যতদিন আমি বেঁচে থাকব, ততদিন সে প্রদীপ আমার চিত্তে প্রজ্জ্বলিত থাকবে।

৬) মেজ কাকাঃ ইন্টারমিডিয়েট সম্পন্ন করার পর বাবা যখন আমাকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানালেন, তখন যে ছায়াটি এসে আমার বাবার ছায়াকে ঘিরে ধরল তিনি আমার মেজ কাকা। জীবনের পথে হোঁছট খাওয়া যে পথগুলো ছিল, তার অনেকটাই আমি তাঁর পায়ে ভর করে পেরিয়ে এসেছি। আমি জানি আমার মত অক্ষম কখনোই কাকার উপর সন্তানের মত ছায়া ফেলতে সক্ষম নয়, তবুও পিতৃঋৃণের দায়ের মতোই এ‘দায় আমাকে আজীবন বয়ে বেড়াবে।

৭) নকুল কাকাঃ এন কে রাজ মানুষ জনবিশেষে ভিন্ন হয়, কারো কাছে যিনি হয়ত ভালো নয়, কারো কাছে তিনিই হয়ে দাঁড়ান শ্রদ্ধার বিমূর্তরূপ। আমার জীবনে চলে যাওয়া পাঁচটি বছর যার অদৃশ্য ছায়া দাঁড়িয়ে ছিল মমতার স্বরূপ রুপে, তিনি নকুলকাকা । জানি আমার পক্ষে তাঁর জন্য হয়ত কিছু করা সম্ভবপর হবে না, এও জানি আমার কাছে যে মমতা তিনি জমা রেখেছেন, সে ফিরিয়ে দেবার ক্ষমতা আমার নেই। তবুও সারাজীবন তাঁর আর্শিবাদের ছায়া আমার মাথার উপর আশ্রয় হয়ে থাকবে বলেই আমার আন্তরিক বিশ্বাস।

৮) লিটন‘দাঃ সম্পর্কে দিদির দেবর তিনি, কিন্তু হঠাৎ এক আশ্চার্য্য ছায়া ফেলে দিয়েছেন আমার জীবনে। জীবন সম্পর্কে আমার অনেক ধারনাই পাল্টে গিয়েছে তাঁর কাছ থেকে শেখা জীবনবোধ বিশ্লেষন। তাঁর থেকে অর্জিত শিক্ষার অনেক কিছুই আমাকে ঋৃণী করেছে তাঁর কাছে।

৯) জাহেদ ভাইয়াঃ কর্মজীবনে আমার হতাশাগ্রস্থ জীবনে আশা সঞ্চারের ক্ষেত্রে যে ভাইয়া আমাকে মমতার সম্পূর্ণ দুয়ার খুলে টেনে নিয়েছিল, তিনি জাহেদ ভাইয়া। আমার এগিয়ে চলার পথে, আমার ভয় পাওয়া দিনগুলোতে তিনিই আমাকে মমতার আশ্রয়ে এগিয়ে নিয়েছেন। তাঁর প্রতি আকুন্ঠ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

১০) সুমন, সোহেল কানু ও সুব্রতঃ সময়ের সাথে-সাথে ভাই ও বন্ধুত্বের রুপও পরিবর্তিত হয়। তারপরও কিছু-কিছু ভাই-বন্ধু জীবনের অনেকাংশে দাগ কেটে যায়। আমার জীবনেও দাগ কাটা বন্ধু- সুমন ও সোহেল আর ভাই- কানু ও সুব্রত।

এছাড়া কিছু-কিছু ছায়া হঠাৎ হঠাৎ এসে দাগ কেটে যায় হৃদয়ের গভীরে। কৃতজ্ঞতা ভরে তাঁদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা ও স্নেহ-সৌহার্দ্য আজীবন বয়ে যাবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন