বৃহস্পতিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৫

সামর্থ্য, ক্ষমতা ও নারীর পায়ে শেকল পড়াবার কারণ

পারঙ্গমতাই সামর্থ্য আর সামর্থ্য অনুযায়ী কার্য্য করা হল সামর্থ্যতার পরিচয়। অন্যদিকে ক্ষমতা হল- কোন বৈষয়িক বিষয়ে অর্জিত শক্তির অহমবোধ। 

হ্যাঁ; আমি সেসকল লোকদের কথা বলতে চাইছি যারা একাদিক বিয়ে করে থাকেন। আমার অনেক বন্ধু বলে থাকে তাদের সামর্থ্য আছে তাই তারা করে। আমি আমার বন্ধুদের উদ্দেশ্যেই বলছি, এতগুলো বিয়ে করা সে সামর্থ্য নয় বরং ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। এই পৃথিবীতে যতজন পুরুষ দুই বা ততোধিক স্ত্রী গ্রহণ করেছে, তাদের দুই একজনই কেবল সামর্থ্যের জন্য করেছে। আর বাদবাকী সবাই করেছে ক্ষমতার দাম্ভিকতায়। বিষয়টা এই জন্যই বললাম- ধরুন বিয়ের মূখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে জৈবিক চাহিদা পূরণ। একজন পুরুষের জন্য একজন নারীই যথেষ্ঠ এই চাহিদা পুরণে। যদি কোন কারণে স্ত্রী বা পুরুষ অসমর্থ্য হয় সেক্ষেত্রে তার দ্বিতীয় পক্ষীয় কাউকে প্রয়োজন হতে পারে (যদিও সমাজে নারীর প্রয়োজনটি অগ্রাহ্য)। এক্ষেত্রে বিষয়টির প্রাধান্য সামর্থ্যের ভিত্তিতে। কেননা সামর্থ্য না থাকলে নৈতিকভাবে সে কাউকে বঞ্চিত করবে। কিন্তু যদি ধন-সম্পদের মোহভাবনা দেখিয়ে অথবা ক্ষমতার বাহুল্যতা দেখিয়ে দুই বা ততোধিক বিয়ে করা হয়, তবে তা নিতান্তই বিবেকবর্জিত কাজ। একমাত্র মনুষ্যত্বহীনদের দ্বারাই এমন কার্য্য সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।
উদাহরণ হিসেবে টানা যায়- ধরুন সৌদির বাদশা আবদুল্লার পিতার ২২জন স্ত্রী এবং আরো অসংখ্য রক্ষিতা। এখন যদি তার সমস্ত স্ত্রী এবং রক্ষিতাগন সকলে তাদের জৈবিকপ্রবৃত্তি নিবৃতের আশায় একসাথে আহ্বান করে। সে কি সে আহ্বানে সাড়া দিতে সক্ষম হবে? যদি না হয়ে থাকে, তবে এক্ষেত্রে সে সকলকে তার লালসার রাঙ্গাচোখের স্বাদ মিটিয়েছেন শুধুমাত্র ক্ষমতার অপব্যবহারে। অতএব এখানে তার ক্ষমতাই এমন সিদ্ধান্তের প্রদান উৎস সামর্থ্য নয়।

অনেকে মনে করে থাকেন- নারী একটা বয়সে গিয়ে তার জৈবিক চাহিদা হারায়, কিন্তু পুরুষ কবরে পা রেখেও জৈবিক চাহিদাযুক্ত থাকে, তাই কিছু-কিছু ক্ষেত্রে এ যুক্তিযুক্তি। নারী সত্যিকারেই জৈবিক চাহিদা হারায় কিনা এর সত্য-মিথ্যা আমার জানা নেই, তবে আমি সত্যিকারের একটা গল্প জানি, তা থেকে এটা নিচক মিথ্যা বলেই আমার কাছে অনুমেয়। আচ্ছা গল্পটি বলি, তারপর প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আবার আসব-
আমি একবার আমার দিদিমার সাথে আমার মেজো মাসির বাড়িতে বেড়াতে যাই। তখন আমি সপ্তম শ্রেনীতে পড়ি। আমার মাসীর বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার কাপিলাতলিতে। এটি গ্রামের নাম নাকি ইউনিয়নের নাম, সেটা এইমুহূর্তে মনে করতে পারছি না। মাসির বাড়িতে বেড়বার প্রাক্কালে একদিন বিকেলে আমি, দিদিমা আর মাসির জা একসাথে মাসিদের গ্রামের পথে ঘুরতে যাই। মাসিদের বাড়ি থেকে মিনিট ১২ কি ১৫ মিনিটের পথ পেরিয়ে আমরা তখন। হঠাৎ একবাড়ি থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসতে লাগল। গালি, অভিশাপ আর হৃদয়হত কান্না শুনে দিদিমা মাসির জা এর কাছে ঘটনাটি জানতে চায়, তখন মাসির জা এর মুখে যে ঘটনাটি জানতে পারলাম তা অনেকটা এরূপ- “বাড়ির কর্ত্রী হিন্দু বিধবা মহিলা যার বয়স পঞ্চাশ উর্দ্ধ, তিনি পাশের বাড়ির প্রায় সমবয়েসি এক মুসলিম পুরুষের সাথে চলে গেছেন। বিধবার দুই ছেলে- একছেলে সদ্য বিয়ে করেছে, আরোক ছেলে বিয়ে করেছে বছর পাঁচেক হবে, তার আবার দুই ছেলে-মেয়ে। মায়ের এই বয়সে এমন একটি কার্য্য ছেলেরা কোনপ্রকারেই মেনে নিতে পারছিল না বিধায় তারা থানায় জিডি করে। কিন্তু যে লোকটির সাথে তাদের মা চলে গেছেন- তিনি ক্ষমতাবান থাকায় এবং ঐ লোকের ছেলেমেয়েরা বিষয়টি মেনে নেয়ায় পুলিশ ছেলেদের বিপক্ষে চলে যায়। তাছাড়া লোকটির দাপট বেশী হবার কারণে তিনি মহিলার ছেলেদের কে মেরে ফেলারও হুমকি দিতে থাকেন। ফলশ্রুতিতে ছেলে দুটোর জীবন কাটছে পালিয়ে-পালিয়ে, আর স্বামীদের পালিয়ে বয়ে যাওয়া জীবনে স্ত্রীদের জীবন কাটছে সংকীর্ণতায়, আতঙ্কে।”
দুঃখিত কথার চলে কথা বাড়িয়ে ফেললাম। কিন্তু আমি বলতে চেয়েছিলাম নারীদের জৈবনিক চাহিদা দ্রুত শেষ হয়ে যায়, এ মানতে আমি রাজি ছিলাম না সে প্রসঙ্গে।

এখন কথা হল- যেহেতু একজন লোকের পক্ষে এতজনের জৈবিক চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়, তাহলে লালসাতৃপ্ত পুরুষটি এমন জৈবিক আকাঙ্খার প্রাক্কালে কি কার্য্য সাধন করে? প্রশ্নটা আপনাদের সকলের কাছে। আমার নিকট একটা সত্যই সবচেয়ে বেশী প্রতীয়মান- নারীরের ভ্রষ্টাচারী হবার ক্ষেত্রে ক্ষমতাধারীদের রঙ্গিন লালসাভুক্ত জিহ্বাই প্রথম এবং প্রধান দায়ী। সে তার লালসা মেটাবার জন্য যখন অনেককে নিজের বাধ্যতে আটকে রাখতে চায়, তখন নারীরা অতৃপ্ত জৈবিক বাসনার তাড়নায় আড়ালে-আবডালে দিক-বিদিক ছুটতে চেষ্টা করে। সে হোক সেচ্ছ্বায় কিংবা অনিচ্ছায়। আর অসামর্থ্য ভাঁড়গুলো তখন নিজেদের অসামর্থ্যটাকে ঢাঁকতে ধর্মতত্ত্ব ও ভয় প্রয়োগ করে নারীকে শেকলে আবদ্ধ করে। যখন তাতেও ব্যর্থ হয়, তখন ধর্মের নাম করে কালিমা লেপন করে তাদের কে প্রতিহত করার চেষ্টা করে, অনেকক্ষেত্রে মেরে ফেলে। তাই খুব সহজ করেই বলা যায়, ক্ষমতার দাম্ভিকতা আর লালাগ্রস্থ জিহ্বার লালসা মেটাবার ইচ্ছাই নারীকে শেকল পড়াবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব বহন করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন