বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৬

আমার প্রচেষ্টার ছিহ্নটুকু রেখে যাব একদিন

ছোটবেলায় লিখতাম কিনা জানি না, তবে ২০০২ সালের একটা ঝাপ্টা এসে এতটাই বিষন্ন করে তোলে যে, লেখালেখিটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সঙ্গী হয়ে যায়। তারপর থেকে এলোমেলো মনের কথাগুলো, ভাষাগুলো, ব্যাথাগুলো নিয়মিতই মগজ ছেড়ে ছুটতে থাকল। শিরা ছিড়ে কালির যোগান দিতে থাকে।

২০০৪ সালে কাকুর হাত ধরে ঢাকায় আসি, তখন নিজেকে তুলে ধরার একটা আবছা বাসনা পেয়ে বসে। ছুটোছুটি করি একটা বই বের করার। কিন্তু মধ্যবিত্ত বলয় আটকে দেয়। যেখানে জীবনের দায়টাই বড়, সেখানে আমার মতো মানুষগুলোর কাছে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টাটুকু অনেকটা অতিরঞ্জিত করে জাহির করার মতো। বাংলাবাজারের একতা প্রকাশনী তে- ২০০৫ সালেই আমার বই “কামনা” প্রকাশিত হবার কথা থাকলেও, প্রকাশনীর সাথে চুক্তিবদ্ধ সম্পূর্ণ টাকার অর্ধেকটাও দেয়া হয়নি আর বইয়ের প্রকাশ সে আকাঙ্খার মধ্যে নিঃশেষ হয়ে গেল। এরপর আর ইচ্ছেও হয়নি, চেষ্টাও করিনি।

২০০৮ কি ২০০৯ থেকে ফেবুতে মোটামুটি নিয়মিত আছি। ফেবুতে থাকাকালে বন্ধুদের মাধ্যমে ২০১০ সালের দিকে ব্লগ জগতের সাথে পরিচয় মেলে। “শৈলীব্লগ” দিয়ে শুরু করি অনলাইনে লেখালেখি। তারপর গল্পকবিতা, সবারব্লগ, আমারব্লগ, শব্দনীড়, সামু, প্রথমআলো থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি ব্লগে লিখি। জানতে থাকি এপাড়-ওপাড় দুইবাংলার বিখ্যাতদের সাথে। ফলশ্রুতিতে নিজেকে বিশ্লেষন করার, নিজের লেখার মান যাচাই-বাছাই করার, নিজের ভূল-ভ্রান্তীগুলো সংশোধন করার সুযোগ আসে। বুঝতে পারি, যা লিখে যাচ্ছি সে কেবল বিক্ষিপ্ত মনের প্রকাশ মাত্র, এর বেশী কিছু না। ফলে একদিন টাকার অভাবে যে বাসনাটি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়েছে, এখন হাতে টাকা থাকলেও সে বাসনা দানাবেঁধে পীড়িত করে না।

প্রতিবছর বইমেলায় উপলক্ষ্যে অথবা বইমেলা ছাড়া অনেক শুভকাক্ষী আর প্রিয় লেখকদের বই আসে, কিছু প্রিয়জন-ভাই-বন্ধুরা উৎসাহ দিচ্ছে অন্তত একটা বই বের করার জন্য। কিন্তু আমি কেন জানি উৎসাহ পাই না। সত্যি বলতে কি- যতক্ষন পর্যন্ত নিজের লেখাটি নিয়ে নিজে সন্তুষ্ট হতে না পারছি ততক্ষন বই বের করার ইচ্ছে রাখছি না। কিন্তু এখনও একটা বাসনা জিইয়ে রাখছি, তাহল- সারাজীবনের তপস্যার সারাংশ নিয়েই না হয় আমার প্রচেষ্টার ছিহ্নটুকু রেখে যাব একদিন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন