মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৩

নিদ্রিত হোক বেঁচে থাকার সুপ্ত বাসনাটুকুও

নিয়নের আবছা আলো ছড়ানো। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঐ আলোয় পথ দেখে চলতে হয়। রেললাইনের স্লিপার ধরে তেজতুরি বাজারের মোড় দিয়ে বাসায় ফিরছি। হঠাৎ একটা ব্যাপার চোখে পড়তেই আমি থমকে দাঁড়ালাম। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে যে আবছা আলো পড়ছে তাতে আমি প্রথমে কিছু না দেখতে পেলেও ভালোভাবে খেয়াল করতেই যে দৃশ্য দেখলাম তাতে হতবাক না হয়ে উপায় ছিলনা। আমি দেখলাম ঘুটঘুটে ঐ অন্ধকারে একটা লোক জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে। তার দেহের গড়ন চিকন ছিপছিপে, কালো। পরনে একটা লুঙ্গি যা কিনা বুক হতে হাঁটু অবধি জড়িয়ে আছে।
ঢাকা শহরের অলিতে-গলিতে এরকম পাগল, ভবঘুরে লোকের অহরহ দেখা মেলে। যারা বাস্তুভিটে হারা, জীবনের তাগিদে তারা পথেই নিজেদের বসত পেতেছে। কিন্তু এত পথহারা লোকের মধ্যেও এই লোকটিকে আমার আলাদা লাগল। কারণ এই লোকের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি আমাকে আহত করল তা হল-
লোকটি যে স্থানে শুয়ে আছে সে স্থানটির সন্নিকটেই তেঁজগাঁও ষ্টেশনের ময়লা জমানো, যা বর্ষার বাদলধারায় ভিজে স্যাঁত-স্যাঁতে হয়ে আছে। ময়লার দূর্গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে যাচ্ছে জমানো স্তুপ হতে। আমার যেখান দিয়ে চলতে খারাপ লাগছে ও ঘৃনা হচ্ছে, সেখানে লোকটি শুয়ে আছে। আমি অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকলাম আর ভাবতে লাগলাম কুকুরও আরো সুন্দর-শুষ্ক জায়গা খুঁজে ঘুমায়। তাহলে সৃষ্টির সেরা জীবের এহেন দূর্দশা কেন? একি মনুষ্যত্বের অবলুপ্তী? নাকি মানবজাতির উপর চাপা অভিমানের খেদ প্রকাশ? আমি সব গুলিয়ে পেলছি। কেন জীবনবোধের এই কটাক্ষ অভিশাপ? এই দেখব বলেই কি আমরা বেঁচে আছি? নিজেদের অপরিণামদর্শিতার ফল আর তার কটাক্ষের নির্মমরূপ দেখে আজ বেঁচে থাকার স্বাদ জাগেনা। কি লাভ বেঁচে থেকে? এই হীন বঞ্চণা বুকে ধরেই কি আমরা বেঁচে থাকব? আমরা কি আজ সবাই জড় বিবেকবোধ সম্পন্ন, অথর্ব? আমাদের কি কিছুই করার নেই? ধিক্কার দেই আর থু-থু ছিটাই উপর দিকে মাথা তুলে তাকিয়ে। কারণ চাইছি এই থু-থু নিজের গাঁয়ে পড়ুক আর ঝড় তুলুক মনে ঘৃনার, সাথে নিদ্রিত হোক বেঁচে থাকার সুপ্ত বাসনাটুকুও।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন