মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৩

অন্যায্যনীতি ও দূর্ণীতি

শরীরের কোনস্থানে পচন ধরলে তার চিকিৎসা করা সম্ভব অতি সহজে। কিন্তু যখন সারা শরীরে পচন ধরে, তখন তার চিকিৎসা করা এতটা সহজতর হয় না। আর অনেক সময় এই পচন থেকে হাজারো চেষ্টাতেও মুক্তি মেলে না। আমাদের দেশের নষ্ট রাজনীতি (নষ্ট রাজনীতি এই জন্য বলছি যে, আমি দেখেছি, যারা নিলজ্জ-বেহায়ার মতো লুঙ্গি তুলে পথ চলাচল করে, পথে-ঘাটে কারণহীন অসভ্যতামি করে, তারাই রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়।)‘র কোপানলে যেভাবে সর্বত্র পচন ধরেছে, তার চিকিৎসাও এত সহজ নয় এবং আমার কেন জানি মনে হচ্ছে কখনো এই পচন থেকে আমরা মুক্তি পাব না। আর যদি কখনো মুক্তি মেলে, তবে বলব সে আমাদের পরম সৌভাগ্য!

আমাদের রাষ্ট্রনীতিতে কতটা পচন ধরেছে এবং তার পার্দূভাব কোথায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে তা আজ কল্পনাতীত। বলাবাহুল্য; সৎ, নিষ্ঠাবান ব্যাক্তিকেও দেখী বড়-বড় লেকচার ঝেড়ে জায়গায় গিয়ে ঠিকই খেই হারিয়ে ফেলছে। হয় চাপে, না হয় তাপে অথবা জীবনের মায়ায় তারাও হচ্ছে বলির পাঠা! আমার নাম দেখে আশা করি সকলে বুঝতে পেরেছেন আমি সনাতন ধর্মালম্বী। রোযার দিন এলেই সংখ্যালঘুতার সুযোগ নিয়ে নাকি ক্ষমতার জোরে সব খাবারের দোকান বন্ধ করে দেবার প্রচেষ্টা থাকে আমাদের সংখ্যাগুরুদের। তারা খাবারের স্থানগুলো বন্ধ রেখে বে-রোযাদারদের রোযা করতে বাধ্য করবেন? একটা বদ্ধমূল ধারনা এখনো আমার আছে, তা‘হল কুকুরের লেজ হাজার না, সহস্র বছর ধরে চেষ্টা করেও সোজা করা সম্ভব না। কারণ প্রকৃতির ইচ্ছাই তাই। তাহলে বে-রোজাদারদের কি চেষ্টা করে রোযাদার করা সম্ভব! যা হোক, সকলের চিন্তাক্রমে যা কিছু সঠিক তাই পালন করুক সবাই আর কষ্ট হলেও আমি বা আমরা এসব কাজে সমর্থন দিয়ে যাব, কারণ আমরা চাই মানুষ সত্যি ভালো কিছু করুক। যেহেতু এখন রোযার দিন, তাই আমাকে আমার দুপুরের আহারের জন্য কষ্ট করে হোটেল খুঁজতে হচ্ছে আর এর সাথে মেনে নিতে হচ্ছে হোটেল ব্যবসায়ীদের অন্যায় আবদার। সবকিছুর দাম বাড়তি তাই খাবার খরচও বেড়েছে! এক টুকরো মাছের তরকারি সাথে দু‘প্লেট ভাত =১৩৫ টাকা? হায়রে জীবন; এতদিন জানতাম আমার নিজের দাম নেই, এখন দেখী টাকাও মূল্যহীন। হিসেব কষি মনে-মনে, যদি হোটেলে আমাকে দু‘বেলা ভাত আর সকালে নাস্তা করতে হয়, তবে ৩০০টাকা তারা আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে বের করে নেবে। মাস শেষে রক্তাক্ত চিন্তা কর্ষে চলে যাবে ৯০০০টাকা। তাহলে আমি মাসে কতটাকা ইনকাম করব? যাতে করে মাসে বাসাবাড়া ৪০০০টাকা+খাবার ৯০০০টাকা = ১৩০০০টাকা একান্ত নিজের জন্য খরচ করতে পারি ? আমার ভাগ্য ভালো বলতে হবে, কারণ অফিস থেকে দুপুরের খাবারের খরচ পাচ্ছি আর মাসে ১০০০টাকায় রাতের একবেলার খাবার সম্পন্ন করতে পারছি যাদের সাথে থাকি তাদের সাহায্যকল্পে! তাই হয়তো এখনো খড়কুটো ধরে বেঁচে আছি। তো যে কথা বলতে চাইছিলাম। আজ দুপুরের খাবার খেতে আমি গেলাম পুরোনো পল্টনের একটা হোটেলে। খাবার শেষ করে আমি উঠতে যাব, ঠিক ওই মুহূর্তে আমাকে খাবার পরিবেশনকারী হোটেল স্টাফ বসতে বললেন। আমি বসলাম, সে কিছুটা ফ্রি হয়ে আমার কাছে এল। আমি কি খেয়েছি তা জেনে খাবারের মোট হিসেব দিল। আমি ক্যাশ কাউন্টারে টাকা দিতে উঠব, এসময় সে বলে উঠল ১০টাকা দেন আর ক্যাশ-কাউন্টারে আমার খাবারের বিলের চেয়ে কম টাকা দিতে বলল। একথা শুনে আমি বোকা বনে গেলাম। বোকাবনে গেলাম এই জন্য যে, আমি এধরনের পরিস্থিতিতে এই প্রথম মুখোমুখি হলাম। যাই হোক, ছোটবেলা থেকে নিজের বুদ্ধিতে যা কিছু অন্যায় কাজ তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি, শুধু মায়ের একটা কথা নিয়ে বড় হয়েছি, কখনো কারো একটাকাও ক্ষতি করবে না বা খাবে না, পারলে কাউকে সাহায্য করো বা খাওয়াও। আমি জানি না, সত্যি কারো উপকারে আসতে পেরেছি কি না, তবে কারো একটাকা খাওয়ার মানষিকতা কখনো জন্মায় নি। তাই এই কাজ আমার জন্য দূরহ। কিছুক্ষন ভেবে আমি পকেট থেকে টাকা বের করে স্টাফটির হাতে ৬টাকা ধরিয়ে দিলাম, আর বললাম আমার বিল যেটা এসেছে তা ক্যাশ-কাউন্টারে জানাতে। ছেলেটি কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও, তাই করল। আমি বেরিয়ে এসে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে লাগলাম। কিছুক্ষন ভেবে আমি দেখলাম এটা ছেলেটার দোষ নয়। এই দোষ আমাদের নষ্ট সমাজ ব্যবস্থার, নষ্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার। এই দোষ আমাদের অন্যায্য কর্মনীতির। যে কর্মনীতি শ্রমিককে তার প্রাপ্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের মানষিকতাকে দূর্ণীতির পথে ধাবিত করছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন