বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৪

বান্ধবসহ লক্ষ-লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীকে কি সরকার, দেশ, দিনকে-দিন আত্মহণনের পথ বেচে নেবার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে!

২০০৯ সালে প্রি-গ্র্যাজুয়েট (B. Sc) শেষ করার পর লেখাপড়া আর কন্টিনিউ করা হয় নি। কারণ‘টা যে শুধু মধ্যবিত্তিয় আর্থিক টান-পৌঁড়ন তা নয়, লেখাপড়ার নিয়ে ভবিষ্যত ভাবনাও লেখাপড়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে কার্য্যত ভূমিকা রেখেছে। সত্য বলতে কি; যে লেখাপড়া জীবনের ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করতে সক্ষম নয় তা কন্টিনিউ করে কি হবে? এমন ভাবনা অহরহ নিজেকে বিচলিত করে তোলে।

প্রায় অর্ধযুগের শিক্ষবসানের এ‘সময়টা বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরী করে কাটাচ্ছি। দু‘একবার সরকারি চাকুরীর ব্যাপারে আগ্রহী হলেও নানাবিধ কারণে তা পাংশুরুপ নেয়, কারণ যে নৈতিক চেতনা মনের মাঝে কাজ করে তা টাকা-পয়সা লেন-দেনে চাকুরীর ব্যাপারে আগ্রহী করে না আর মামা-খালু‘রা জন্ম থেকেই জরাগ্রস্থ। যা হোক; সরকারি চাকুরীর ব্যাপারে আর ঘুরি না, ইফাত্তা টেনে তা লুটেরাদের ভাগবাটোয়ারার জন্য দিয়ে দিয়েছি। এখন লুটেরারা সেখানে ভাগবাটোয়ারা করে খায়, টাকা দিয়ে চাকুরী নিয়ে টাকা কামাতে উণ্মত্ত হয়ে গরীবের গলায় পা রাখে (ব্যাতিক্রমও আছে কেহ-কেহ)। তবে ঘুষ দিয়ে চাকুরী নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুষ খায় না, এমন বদ্ধ উম্মাদ বা পাগলশ্রেনীর লোক আমার বঙ্গজননী‘তে পাওয়া বোধহয় দুষ্করই বটে।

সরকারি চাকুরীর পর যে চাকুরী সকলের মতো আমার কাছে আগ্রহপূর্ণ, তা ব্যাংকের চাকুরী। কারণ হিসেবে আমার কাছে যেটা সত্য বলে বোধহয় তা হল সরকারি চাকুরীর পর ব্যাংকের চাকুরী জীবনকে ঘুছিয়ে নেবার ব্যাপারে কিছুটা নিশ্চয়তা প্রদান করে। প্রাইভেট চাকুরী করতে গিয়ে দেখেছি এখানে কর্তৃপক্ষ নিজেদের কার্য্য হাসিলের উদ্দেশ্যে একজনকে অন্যজনের পিছনে এমনভাবে লেলিয়ে দেয় যে, ১-২ বছর চাকুরীর পর মানষিক অবস্থার এতটা নিন্মাবস্থা তৈরী হয়, মনে হয় এই আর কয়টা দিন পরেই বোধহয় মারা পড়ব আর প্রথমদিকটায় কোম্পানীকে যে রকম আউটপুট দেয়া সম্ভব হয়, দীর্ঘদিন একই কাজের একঘেয়েমি আর বয়সের উন্নতি এতে প্রভাব ফেলে। তখন কর্তৃপক্ষের মুখে শোনা যায়, আপনার কাছে কিছু না পেলে কোম্পানি আপনাকে রাখব কোন যুক্তিতে, ব্যাপারটা এমন হয় যে, কোম্পানিতে প্রথম দিককার রাতদিনের পরিশ্রম সবমূল্যহীন হয় বর্তমানে দাঁড়িয়ে। এটা যে আমি নিজেকে দিয়ে বিশ্লেষন করছি তা কিন্তু মোটেই নয়, চলতে পথে অনেককে দেখেই এ‘সত্য আমার অনুধাবন। যা হোক; প্রসঙ্গে ফিরে আসি- বলছিলাম সরকারি চাকুরীর পর পছন্দের তালিকায় আসে ব্যাংকের চাকুরীর ব্যাপারে। আমাদের মতো মধ্যমমানের ছাত্র-ছাত্রী যারা ব্যাংকের চাকুরীর ব্যাপারে তাদের আগ্রহ অনেক বেশী থাকে। কিন্তু বুর্জোয়া শিক্ষানীতির করালগ্রাসে পড়ে তাও আজ ক্ষমতাসিনদের দখলে। সরকারি চাকুরীর পর এখন ব্যাংকের চাকুরীও ঘুষের দৌরাত্মে। যাদের স্বপ্ন সরকারি চাকুরিতে সুযোগ না হলেও অন্তত ব্যাংকের একটা চাকুরী জুটবে, যা তার পরিবার পরিজনের জন্য একটা আশ্রয় তৈরী করবে।

কিন্তু হায়; দিনকে-দিন সে আশায়ও বালি-ছাই। কিভাবে? আরে ভাই দেথেন কিভাবে-

গতপরশু আমার চারবন্ধু নোয়াখালী থেকে পরীক্ষা দিতে এসেছিল ঢাকায়, শুক্রবার তাদের বিডিবিএল ব্যাংকে পরীক্ষা ছিল, তাদের একজনের ফেবু স্ট্যাটাস নিচে দিলাম-

“আজকের বিডিবিএল পরীক্ষার প্রশ্ন যে হালায় করছে, হেরে 30 মিনিট সময় দিলে ক্যালকুলেটার ছারা 15 টা অংক কইরা দেখাইতে পারবো। আর বাকি গুলাতো বাদই দিলাম, আর কম্পিউটার থেকে কি প্রশ্ন করছে, মনডায় চায় কম্পিউটার ভাংয়া হালাই। এতদিন ধইরা কি কম্পিউটার শিখলাম। @Ziaur Shimul "
আরেক বন্ধু নাজিম- @আবু ওবায়েদ নাজিম “ও এসে জানাল- দোস্ত এমসিকিউর উত্তরপত্র জমা দেওয়ার সময় হল পরিদর্শককে বললাম ৬০ টা এমসিকিউর জন্য সময় ৩০ মিনিট? স্যার এটা কি ত্রিশ মিনিটের এমসিকিউর প্রশ্ন হল? জবাবে তিনি বললেন ৫২ হাজার ছাত্র-ছাত্রী নাকি অংশগ্রহন করেছে উক্ত পরীক্ষায়, যেখানে পদবি সংখ্যা মাত্র ৭৫।”

আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, ৭৫টি পদের জন্য ৫২ হাজারের পরীক্ষার আয়োজনের উদ্দেশ্য কি? মেধাবী নির্ণয় নাকি অন্য কোন পয়তারা? দুঃখিত অন্য পয়তারা বলতে বাধ্য হলাম, কেননা জনপ্রতি ৩০০টাকার ব্যাংক ড্রাফট ছিল যা ৫২ হাজারে দাঁড়ায় ১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকায়। আমার মতে যেহেতু মাত্র ৭৫ জনের পদ তাই শিক্ষাগত যোগ্যতা পিএসডি চাওয়ার প্রয়োজন ছিল, তাহলে এতজনের আবেদন করার প্রয়োজন পড়ত না আর অনৈতিক টাকা কামানোর ইচ্ছেও আমার কাছে মনে হত না। এখানে শুধু পরীক্ষা আয়োজনের জন্য এতটাকা লুটপাট, তাহলে ৭৫ টা পদবী নিয়োগে কতটাকা কামাই হবে? মানে ঘুষ কতটাকা খাওয়া হবে বা হচ্ছে? ঘুষ খাবার কথা কেন আসছে? আরে আসবে না কেন তাই বলেন-আমার বন্ধুদের স্ট্যাটাস দেখে বুঝতে কি পারছেন না? ৬০টি এমসিকিউর মধ্যে শুধু ১৫টি অংকের এমসিকিউ কষতেই শেষ হবে নির্ধারিত মিনিট, তাহলে বাকী ৪৫টা এমসিকিউ কে, কিভাবে দেবে? মানে যারা না পেরে উত্তরপত্র খালি রেখে এসেছে টাকার বিনিময়ে সেগুলো কি কালিতে পরিপূর্ণ হবে? সন্দেহ খুব বেশী থেকে যায়, তারপরও বিশ্বাস স্থাপনের চেষ্টা করি যেন মেধাবী‘রা নিয়োগ পায়।

না আমি কোন সরকারি চাকুরী কিংবা ব্যাংকে চাকুরীর আর চেষ্টা করছি না, উপরওয়ালার দয়ায় ওটুকুর ব্যবস্থা আমার আছে কিন্তু যেসব বন্ধুদের মন হতাশায় পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে দিনকে-দিন তাদের দেখে খুব কষ্ট পাই, ভাবী এই বন্ধু-বান্ধবসহ লক্ষ-লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীকে কি সরকার, দেশ, দিনকে-দিন আত্মহণনের পথ বেচে নেবার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন