বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০১৫

না আমরা মানুষ নই

না আমরা মানুষ নই, আমরা কোনক্রমেই মানুষ হতে পারি না।
মানুষ হতে গেলে তার মগজ থাকবে। মগজে উদ্দিপনা থাকবে। সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, অনুভব, অনুভূতি সব থাকবে। সে নিজের পীড়ণ বুঝবে। নিজের পীড়ণগুলো বুঝে অন্যকেও বুঝতে চাইবে। বোধগম্যতায় সে অন্যের অনুভব-অনুভূতির ভাগিদার হতে চাইবে। আপন সদিচ্ছায় সে তার আপন ভাগিদারিত্বের সাক্ষর প্রতিনিয়ত প্রমাণ করবে।


এর ব্যতীত যারা, তাদের কি করে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া যায়? বলি মানুষের মতো হাত-পা-চোখ-কান-মুখ থাকলেই যদি মানুষ হিসেবে গন্য করতে হয়, তবে বুনো জানোয়ারদের মানুষ বলতে মানুষের দ্বিধা হবে কেন? বলি শুধু দৈহিক অয়বব থাকলেই কি সকলে মানুষ হয়ে যাবে? তবে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ জীবের ভূষণ কেবল মানবের হবে কেন?


উপরের কথাগুলো প্রতিনিয়ত হৃদয়ে আর্তচিৎকারে বেজে উঠে। সত্যি আর সহ্য হয় না। প্রতিটা সহ্যের একটা পরিসীমা থাকা উচিত, কিন্তু বারংবার যখন সে সীমা অতিক্রান্ত হয়ে যায়, তখন নিজের জাত-কুল সব ঘৃণায় পর্যবসিত হয়। আর একটা বিষয় কত বলা যায়? ঠিক কি করলে মানুষের ভিতরে এই কথাগুলো পৌঁছে? ভাই হাজার-কোটি মানুষের প্রতিদিনকার যে তপ্ত নিঃশ্বাস অভিশাপের উপর থেকে হাজার-কোটি টাকা উপার্জন করা, একজন মানুষ হিসেবে কি এ টাকায় সত্যিকারের সুস্থ-সবল দিণাতিপাত করার বোধ থাকে?


তিব্বত থেকে মালিবাগ রুটে ফ্লাইওভারের নাম করে আজকে তিনটা বছর ধরে মানুষের উপর যে অমানুষিক নির্যাতন-পীড়ন শুরু হয়েছে, তা ভাষায় বর্ণনা অসম্ভব। একটা দেশের রাজধানীর এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ রুটে, যেখানে প্রতিদিন হাজার-লক্ষ মানুষের চলাচল, সে রুটটাকে যখন মানুষের উপকারের কথা বলে জীবনটাকে বিষিয়ে তিলে-তিলে শেষ করে দেয়ার পয়তারা করা হয়। যখন মানুষের এত-এত বেহাল দশা, এত-এত অভিশাপেও কারো টনক নড়ে না, তখন কি করে বলা যায় এসব কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজন মানুষ থাকে? বলি এমন একটা ফ্লাইওভারের কাজ সম্পন্ন করতে ঠিক কত সময় লাগে? একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কাজগুলো কেন অধিক গুরুত্ব দিয়ে সম্পন্ন করা হচ্ছে না? সরকার-প্রশাসন-কার্য্যকরী পরিষদ কে কোথায় আছে? দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের বিষয়ে যখন এদের কোন নুন্যতম তৎপরতার নেই তখন এদের বিবেকের দায়বদ্ধতা কোথায়? যারা নিজেদের দায়-দায়িত্বকে এভাবে অবহেলা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, এদের মনুষ্যত্ববোধ কতটুকু আর কার্য্যকর আছে?


সত্যি বলছি, তিনটা বছরে জীবন একবারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন ২০ মিনিটের রাস্তায় ২-৪ ঘন্টায় (দৈনিক ৪-৮ ঘন্টায় ৪০ মিনিটের পথ) আসা-যাওয়া করতে-করতে বিবেক শূণ্য হয়ে পড়েছি আমি এবং আমরা। প্রতিদিন অধৈর্য্য হয়ে ক্ষমতালোভী জানোয়ারগুলোকে হাতের কাছে না পেয়ে, অকথ্য ভাষায় ক্ষোভ ঝারছি ড্রাইভার, কন্ট্রাকটার আর হেলপারের উপর। আমাদের বিবেক এতটাই ক্ষয়ে গেছে যে, আমরা ভূলে যাচ্ছি ক্রমশ- যে বাসে চড়ে আমরা যাচ্ছি, আপাত দৃষ্টিতে দেখলে- বাস ড্রাইভারের হাতে আমাদের জান গচ্ছিত আছে। তার ক্ষোভের রুপ প্রকাশ করলে বাসের সকলের জীবন সংকটাপন্ন হতে পারে।


জীবন ক্রমবদ্ধমান কালে আমাদের মানুষগুলোর দেহ অয়ববের লোমগুলো ক্রমশ খাড়া হয়ে যাচ্ছে, গজ দাঁতগুলো বের হয়ে আসছে, মাথার মগজ পচে শিং হয়ে বেরিয়ে আসছে। আমাদের মনুষ্যত্বের অধঃগতি আমাদের ক্রমন্বয়ে পশুতে পরিণত করছে আর আমরা হয়ে উঠছি এক-একটা নরপশু, হিংস্র জানোয়ার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন