সোমবার, ২২ জুন, ২০১৫

ভালো বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি ভালো ছাত্র-ছাত্রী তৈরীর গর্বিত অংশিদার?

আজকে একটা বিষয় জানতে চাই সকলের কাছে- সে হল ভালো বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো ছাত্র-ছাত্রী তৈরীর গর্বিত অংশিদার কিনা?
শিশুবেলা থেকেই শুরু করি।

একটি শিশুকে যখন বাবা-মা বিদ্যালয়ে পড়ার উপযুক্ত মনে করে তাকে নিয়ে যায় বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে, তখন আমরা দেখি যে সকল বিদ্যালয়গুলো মানের দিক থেকে ভালো তারা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা যাচাই-বাচাই করে তাদের বিদ্যালয়ে তাদের স্থান করে দেয়। এখন যদি বলি প্রথম দিককার যে শিশুটি তৈরী হয়ে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছে। সে অবশ্যই অন্য আর আট-দশজন থেকে ভালো বলেই ঐ বিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছে। অন্যদিকে যারা সুযোগ পায়নি, তারা তাদের মান অনুযায়ী অন্যান্য বিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছে। তার মানে কি এই দাঁড়ায় না; ভালো বিদ্যালয়গুলো ভালো ছাত্র-ছাত্রী বের করার প্রয়াসে প্রথম অঙ্কুরটি সুন্দরভাবে তাদের মাঠে লাগাতে সক্ষম হয়েছে? অথচ অঙ্কুরটি তাদের তৈরী নয়, ছিলো অন্যের তৈরী।

এরপর যাচাই-বাচাই করে নেয়া অঙ্কুরগুলোর মধ্যে বছর ধরে প্রতিযোগিতা চলে। প্রতিবছর ভালো বিদ্যালয়ের অঙ্কুরগুলোর বেশীভাগগুলোতেই পচন ধরে। ফলশ্রুতিতে সময়ের ব্যবধানে ছিটকে পড়ে তারা। আর ছিটকে পড়াগুলোকে তারা পরিষ্কার করে জাল বিছায় অন্যান্য বিদ্যালয়ে তৈরী হওয়া মেধাবীদের তাদের বিদ্যালয়ে নেবার। সময়ের ব্যবধানে নিন্ম মানধারী বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, বাবা-মা, শুভাকাক্ষী অথবা শিক্ষার্থীর নিজের প্রচেষ্টায় নিজেকে মেধাবী অবস্থানে দাঁড় করায় এবং ভালো বিদ্যালয়ের কৌশলগত জালে পড়ে খারাপ বিদ্যালয় ত্যাগ করে ভালো বিদ্যালয়ে ছুটে। প্রতি বছর এই কার্য্যক্রম অব্যহত থাকায় নিন্মমানের বিদ্যালয়গুলো ক্রমাগত প্রায় তলানিতে গিয়ে পৌঁছে। দীর্ঘ দশ বছরের ত্যাগ-তীথীক্ষা শেষ হয় বিদ্যালয়গুলোর। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়। মেধাবী বিদ্যালয়গুলো ভালো ফলাফলে আলোড়ন করেছে আর তলানীতে পৌঁছা খারাপ বিদ্যালয়গুলো নিজেদের বিদ্যালয়ের অবস্থান টিকাতে হিমশিম খাচ্ছে। এখানে আবার মজার একটা ঘটনা ঘটে। খারাপ বিদ্যালয়ে থাকাকালে যে মেধাবীটি তৈরী হয়, সে মেধাবীটি ভালো বিদ্যালয়ের মেধাবীদের দলে গিয়ে যে ফলাফল করার কথা থাকে, অনেক সময় তা থেকে বঞ্চিত হয়। অথচ খারাপ বিদ্যালয়ে থাকাকালে তার সে প্রত্যাশাটা মোটামুটি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত ছিলো।

তাহলে মূল বিষয় কি দাঁড়ায়? ভালো বিদ্যালয়গুলো ভালো ছাত্র-ছাত্রী পয়দা করছে? না তাদের শেষ করে দিচ্ছে?

এবার আসি মহাবিদ্যালয়গুলোতে। বাংলাদেশে নটরডেম কলেজ, হলিক্রস বেশ নামকরা মহাবিদ্যালয়। এছাড়া পর্যায়ক্রমিক আরো মহাবিদ্যালয়গুলো আছে যারা প্রতিবছর হাজার-লক্ষ এ+ গ্রেডের ছাত্র-ছাত্রী পয়দা করে। প্রথমে নটরডেমের কথায়ই আছি। এখানে যারা ভর্তি হয়, নিঃসকোচে বলা চলে- বিদ্যালয়ের সেরা মেধাগুলোকে মহাবিদ্যালয়টিতে সুযোগ করে দেয়। এভাবে শুরু করে, পর্যায়ক্রমিকভাবে সব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা সেরা মহাবিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হবার পর নিন্মমানের মহাবিদ্যালয়গুলোর জন্য বিবেচনায় ঝুট-আবর্জনাগুলো থাকে। এভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে শুরু হয় দু‘বছরের যুদ্ধ। যুদ্ধ শেষে ফলাফল কি?

আমার এক মেসো তাঁর সন্তানকে নিয়ে বেশ চিন্তিত। বিষয়টি হল- এত তাঁর গোল্ডেন এ+ গ্রেডের ছেলেটি মেধাবী হবার সত্ত্বেও নটরডেমে সুযোগ না পেয়ে যখন নোয়াখালী কলেজে ভর্তি হয় তখন তাঁর হতাশার মাত্রা আরও বাড়ে। ছেলেকে তিনি প্রতিনিয়ত বুঝাতে থাকেন যেন কোনক্রমেই তার গোল্ডেন এ+ থেকে ছিটকে না পড়ে। ছেলে তাকে ভরসা দেয়, তবু তিনি পান না। তিনি বলেন শুন তোদের মহাবিদ্যালয়ে ১০০ এর অধিক ছাত্র-ছাত্রী আছে যারা মানের দিক থেকে তোর কাছাকাছি। ফলাফল শেষে দেখা যায় নোয়াখালী কলেজের এই ১০০ জনের মধ্যে গোল্ডেন এ+ পাবে ১৫-২০ জন। তারমানে ৮০-৮৫ জনই ছিটকে যাবে। মেসোর কথাটি অযৌক্তিক নয় মোটেই। ফলাফল রসায়ন করলে আমরা তাই দেখছি। যে নটরডেম মহাবিদ্যালয় সব সুপার ট্যালেন্টকে নিচ্ছে তাদের আশ্রয়ে। দু‘বছরের সাধনা শেষে সেই সুপার ট্যালেন্টদের সবাইকে তাদের প্রাপ্য সন্মানটা ধরে রাখার ব্যবস্থা করে দিতে সক্ষম হচ্ছে কি? মোটেই তা নয়। প্রতিবছর মেধাবী তকমাধারী মহাবিদ্যালয়গুলো দিকে স্পষ্টত দৃষ্টি রাখলেই তা সকলের দৃষ্টিগোছর হবে। সে হিসেবে ফলাফল যাই হোক না কেন, সামগ্রিক বিবেচনায় নিন্মমানের মহাবিদ্যালয়গুলোই বেশী ভালো করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলায়ও প্রায় একই প্রক্রিয়া। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবীদের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হলে, অনেকটা টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট কিনতে ছুটে যুদ্ধ করতে-করতে চলা কিছুটা নিন্ম মেধাবীর শিক্ষার্থীরা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শেষে যদি কর্মক্ষেত্রকে বিবেচণায় আনা হয়, তবে ভর্তি প্রক্রিয়ায় সফল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই দেখা যায় যাদের বলা হয় টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট কিনেছে, তাদের পিছনে।

যদি সবকিছুকে ধারাবাহিকভাবে বিবেচনায় নেয়া হয়। তবে এ একটা সত্য সবাইকে মানতেই হবে। ভালো তকমাধারীরা ভালো ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে অনেকটা খামখেয়ালি তামশা খেলা খেলে তাদের মেধাটিকে শেষ করে দিচ্ছে। যদি তাই না হত, তবে পথে-ঘাটে ব্যাঙ্গচির ভাষার মতো এত কোচিং সেন্টারের জন্ম হত না। কোচিং সেন্টারের গায়ে লেখা থাকত না অমুক বিদ্যালয়, অমুক মহাবিদ্যালয়, অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ের, অমুক শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন