সোমবার, ২২ জুন, ২০১৫

আমি কোনভাবেই কোন অস্বাভাবিকতাকে সহজ করে নিতে পারছি না

গতকাল সকালে অফিসে আসছিলাম। পুরোনো পল্টন মোড়ে গাড়ী থেকে নামতেই দেখী উৎসাহী লোকের ভীড় চারদিকে। যাদের মোবাইলে হাই ফিক্সেল ক্যামরা আছে, তাদের কেউ দৈনিক সকালের খবর পত্রিকার ছাদের উপরের ছবি তুলতে ব্যস্ত। আর অনেকে দল-দল হয়ে আলোচনায় মশগুল। সকলের এমন অবস্থা দেখে সকালের খবর পত্রিকার অফিসের ছাদে তাকালাম। দেখলাম কয়েকজন পুলিশের আনাগোনা। এমনটা দেখে- ভাবলাম বোধকরি পুলিশ কাউকে ক্রশফায়ার করেছে। ভেবে আরেকটু এগিয়ে এসে লোকমুখে জানলাম, ছাদে অবস্থিত টাওয়ার ঘেষে একজন লোক একদম সোজা দাঁড়িয়ে। যিনি আত্মহত্যা করেছেন অথবা টাওয়ারের শর্টসার্কিটে প্রাণ হারিয়েছেন। নিচ থেকে সকালের খবরের অফিসের ছাদটাকে ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করলাম। দেখে মনে হচ্ছে টাওয়ারের শীর্ষবিন্দু থেকে একটা দড়ি যেন ঝুলছে যার প্রান্তভাগ লোকটির গলায় ঝুলানো। কিন্তু নিচ থেকে এও বোঝা মুশকিল হচ্ছে যে, যদি টাওয়ারের সাথে লোকটি ঝুলে আত্মহত্যা করে থাকে তবে নিচ থেকে তাকে যে অবস্থানে দেখা যাচ্ছে, সে অবস্থানে দেখা যেত না।

যা হোক ঠিক বোঝা সম্ভব হচ্ছে না, আসল মৃত্যু রহস্য। দৃশ্যটি দেখে অফিসের পথে পা বাড়ালাম আর ভাবতে থাকলাম এধরনের অপমৃত্যু সম্পর্কে। দিনকে-দিন এমন পরিস্থিতি তৈরী হচ্ছে যে, স্বাভাবিক মৃত্যুর প্রত্যাশাই অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। মানুষ কত সহজে এধরণের মৃত্যুতে আলিঙ্গন করছে অথবা কেউ কত সহজে অন্যকে মেরে ফেলে যাচ্ছে। আমাকে ক্রমাণ্বয়ে চিন্তারা গ্রাস করতে থাকে। ভাবতে থাকি লোকটি কি খুব সমস্যায় জর্জরিত ছিল? কতটা অবসাদ তাকে এমন কাজে প্রলুব্ধ করল? তিনি ফাঁসের জন্য এমন একটা স্থান কেন বেছে নিলেন? তিনি কি কোন নির্দেশনা রেখে যেতে চাইছিলেন?

যদি কেউ তাকে মেরে রেখে যায়, তবে কেন? মানুষ কি করে এতটা পাষান চিত্তে অন্যকে শেষ করার প্রয়াস পায়?

যদি বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে মারা যায়, এ খুবই দুঃখজনক ব্যাপার...

আচ্ছা তার অনুপস্থিতিতে পরিবার-পরিজনের কি হবে?

ভাবতে গিয়ে সকালে আর নাস্তা খেতে ইচ্ছে করল না। না খেয়েই অফিসে ঢুকলাম। অফিসে ঢুকেও বিষয়টি নিয়ে ভাবতে থাকলাম। অফিস শেষ করে বাসায় পৌঁছেও বিষয়টিকে মাথা থেকে তাড়াতে পারলাম না।

আজ শুনলাম ওটা ফাঁসিতে আত্মহত্যা ছিল। বিষয়টি এখনও ভাবনা থেকে যাচ্ছে না। আমার যে ইদানিং কি হয়েছে আমি নিজেই ঠিক বুঝে পারছি না। আমি কোনভাবেই কোন অস্বাভাবিকতাকে সহজ করে নিতে পারছি না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন