রবিবার, ২৯ মার্চ, ২০১৫

দ্বিমুখীতা

ধন-সম্পদে আচ্ছাদনে থেকে ধৃতরঞ্জন বুঝতে পারে এ যতটা না সুখ দেয় তারচেয়ে বেশী পীড়িত করে। তাছাড়া একজীবনে মানুষের বিষয়-বাসনা-বৈভবের এত প্রয়োজন কি? এত আয়োজনযজ্ঞ, এত মোহসুখ, এত বালখিল্য বাৎসল্যে মজে বিন্দু-বিষর্জনের কি আর বাকী থাকে? বিবেকের তাড়নায় নিজের অনুভবে যখন নিজে বন্দি হতে থাকে, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, সকলের সামনে বিষয়টি সুন্দরভাবে তুলে ধরে সকলকে এর মোহমুগ্ধতা থেকে বের করে আনার প্রয়াস করবেন।

ধর্মীয় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন ধৃতরঞ্জন। নিজের আন্তরিক প্রচেষ্টায় যতটা সাবলিলতার সহিত তার ভাষাকে সকলের সামনে তুলে ধরা যায় তার সর্বোত্ত চেষ্টা তিনি করছেন।

সভা শেষ করে তিনি যখন দেখলেন তার বক্তব্যে মানুষের মধ্যে সাড়া পড়েছে, তখন তিনি খুশি হন। বুঝতে পারেন ধীরে-ধীরে মানুষ তা বুঝতে পারবে, নিজেদের বাসনার ভূল তাদের তাড়না করলে তারা মুক্তি চাইবে।

সভায় বিষয়-বৈভবের মোহ-বাসনা ত্যাগ করার প্রত্যয় নিয়ে সকলে বের হলেও প্রত্যহ জীবনের আরক্ত আত্মতুষ্টি যখন পীড়িত করতে থাকে, তখন প্রত্যয়গুলো প্রত্যাখ্যাত হতে থাকে। এমত অবস্থায় সবাই নিজেদের প্রত্যয় ভেঙ্গে ফেলবার কারণে অভিযোগ তুলে বলে- ধৃতরঞ্জন যে এত বড়-বড় আবেগ তাড়িত কথা বলে যাচ্ছেন তিনি কি নিজে মোহবাসনা ত্যাগ করেছেন?

মানুষের ভাষা সুস্পষ্ট হয়, এক কান দুই কান হয়ে কথাগুলো ধৃতরঞ্জনের কাছেও পৌঁছে। ধৃতরঞ্জন দেখে প্রশ্নগুলো উপেক্ষিত নয়, সত্যিই তো তিনি নিজেও এখনো মোহবাসনা মুক্ত নন। মুক্তির আশায় ধৃতরঞ্জন বৈরাগ্য বেশ ধারণের সিদ্ধান্ত নেন, আরও কঠোর সিদ্ধান্তে বদ্ধমূল ধারণ করেন- যতদিন তিনি সংশোধন না হতে পারছেন, ততদিন তিনি নির্লিপ্ত থাকবেন মানুষের সান্নিধ্য হতে।

সাধনার প্রাথমিক প্রদক্ষেপে পা রেখেছেন ধৃতরঞ্জন, নিজের আত্মশুদ্ধতার প্রশ্নে তিনি বিষয়-বৈভব থেকে মুক্তির চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু যখনই তার চেষ্টা শুরু হয় তখনই তিনি দেখেন- যদিও মানবজীবনের দুঃখ-দূর্দশার মূল কারণ বিষয়-বৈভব, তবুও এর থেকে মুক্তি এতটা সহজসাধ্য নয়। তিনি দেখেন যতই তিনি মুক্তির চেষ্টা করছেন, ততই যেন তার বন্ধনের তাড়না আরো পোক্ত হচ্ছে। স্থুল হেম আর মূখ্য কাম জাগতিক বাসনায় আরো প্রলুব্ধ করে চলছে।

ব্যর্থ ধৃতরঞ্জন!

ধৃতরঞ্জন বুঝলেন অঢেল সম্পদে আসক্তি কমে ঠিকই, কিন্তু জন্মস্থুল বাসনা দমে না। জীবনের প্রতিটি স্তর দ্বি-মুখী, এখানে মানুষের জীবনটাই দ্বি-মুখীতায় পরিপূর্ণ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন