সোমবার, ৩ মার্চ, ২০১৪

অনুগল্পঃ অনুরাগের প্রত্যয়!

দৈহিক কামসিদ্ধিরপর শিউলী যখন জানালো- আমাকে এখুনি বিয়ে করতে হবে, তা না হলে আমি বাঁচব না। তখন আমি না করলাম না। তাকে জবাব দিলাম, শিউলী আমি তোমাকে জান-প্রান দিয়ে ভালোবাসি, তুমিই বল তোমাকে ছাড়া আমি কি বাঁচব? তারচে চল আমরা এখুনী কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি। দু’জনের আগ্রহে আমরা বিয়ে করার উদ্দেশ্যে কাজীর অফিসের দিকে রওয়ানা হলাম।
মাত্র একমাসের চেনা-জানা আমাদের দু‘জনের। অথচ একমাসের মধ্যে আমাদের ভালোবাসার ঢেঁউয়ের জল স্থলবন্দরে এতটাই টইটম্বুর হয়ে উছলে পড়ছে যে, আমরা দু’জন দু‘জনার দৈহিক প্রনয়ে আবদ্ধ হয়ে গেলাম! ভালোবাসার সমাপ্তী টানতে আমরা তাই কাজী অফিসের দিকে যাচ্ছি! আমরা আজ ভালোবাসার পূর্ণরূপ দেব!
তখন আমরা কাজী অফিসের অর্ধেক পথে, আমার মাথায় নানান প্রশ্ন কেন জানী উঁকি-ঝুঁকি দিতে থাকল। তাই আমি তাকে বললাম শিউলী আমরা আজ ভালোবাসার পূর্ণতা দিতে যাচ্ছি, তোমার কেমন লাগছে? লজ্জায় শিউলীর মুখ লাল হয়ে উঠল। ভালোবাসার চুড়ান্তরূপের এই সময়টায় তার হৃদয় যেমন আবেগগ্রস্থ, তেমনী ভালোবাসার শিহরণে তার মন খুব বেশী ব্যাকুল। হয়ত অজানা কোন শীহরণ তার মনেও হানা দিচ্ছে।

যখন আমরা কাজী অফিসের কাছাকাছি পৌঁছলাম তখন তাকে বললাম- শোন শিউলী, কাজী অফিসে যাবার আগে আমাদের নিজেদের মধ্যে কিছু আলাপ-আলোচনা করা উচিত। শিউলী জিজ্ঞাসা করল- বল, কিসের আলাপ-আলোচনা? আমি বললাম দেখ- বিয়েটা আমাদের সারাজীবনের একটা প্রশ্ন। এখানে দু‘জনার মধ্যে লেনদেনের ব্যাপারটা যদি আমরা ভেঙ্গে না নেই, তাহলে আমাদের পরবর্তী জীবন অসুখীকর হতে পারে। আমি চাইনা, আমাদের আগামী জীবনগুলোতে কোন প্রকার ঝড় নেমে আসুক। শিউলী জবাব দিল- তুমি বল, আমাদের মধ্যে কেমন লেনদেন ভেঙ্গে নেবার প্রয়োজন? তখন আমি তাকে বললাম দেখ- আমরা দু’জন আজ প্রেমের মিলন ঘটাতে যাচ্ছি, আমাদের দু‘জনার মন এখন দু‘জনার জন্য ব্যাকুল। কিন্তু জীবন-যাপনের একটা পর্যায়ে যদি কোন ঝড় আমাদের মধ্যে ব্যাবধান ঘটাতে চায়, তখন তোমার নিরাপত্তার একটা ব্যাপারে প্রশ্ন দাঁড়াতে পারে। তাই তোমার নিরাপত্তা বিধানের জন্য, আমার মনে হয় আমাদের দেন-মোহরের ব্যাপারটা এখনই ভেঙ্গে নেয়া উচিত। তুমি হয়ত এখন এ’ব্যাপারে তেমন কিছু ভাবছ না। কিন্তু আমার মনে হয়, এসব ব্যাপারে আমাদের এখুনি আলাপ-আলোচনা হওয়া উচিত। কারণ আবেগ দিয়ে জীবন চলে না।আজ আমরা যেমনটি আছি, কাল আমরা সেরকম নাও থাকতে পারি।তাছাড়া কাজী সাহেব আমাদের দেনমোহরের ব্যাপারটা জিজ্ঞাসা করলে আমাদেরতো একটা জবাব দিতে হবে, তাই না? শিউলী মাথা নেড়ে আমার কথায় সায় দিল। আমি তাকে বললাম- বল আমরা আমাদের বিয়ের দেন-মোহর কতটাকা ধার্য্য করতে পারি? কিছুক্ষন সে ভেবে-চিন্তে শান্তস্বরে জবাব দিল, দশলক্ষ টাকার মোহরানা ধার্য্য করার। আমি বললাম- ঠিক আছে তাই হবে। খানিক সময় ভেবে আমি তাকে আবার বললাম- শিউলী দেখ, ধর আমাদের বিয়ের মোহরানা আমরা দশলক্ষ টাকা ধার্য্য করলাম, তাহলে কাজীকে তো বিয়ে পড়ানোর জন্য মোটামুটি ১০,০০০ টাকা নাজরানা দিতে হবে, তাই না? শিউলী জবাব দিল, সেতো দিতেই হবে। এখন সমস্যা হলো, আমরা তো কিছু না ভেবে, বিয়ের জন্য কাজী অফিসের পথে ছুটে চলছি। বিয়ের জন্য এই ১০,০০০ টাকা আমরা এখন কাজীকে কোথায় থেকে দেব? এবার শিউলী ভাবনার কিছুটা ছিড় ধরল। খানিক ভেবে সে বলল- তোমার বাড়ি থেকে আনার ব্যবস্থা কর। আমি নরম গলায় বললাম- তুমি কি বলছ শিউলী? তুমি কি ঠিক আছ? শিউলী বলল-কেন? আমি বললাম- আমরা দু‘জনে দু‘জনের সম্মতিতে বিয়ে করার জন্য কাজী অফিসে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত এবিষয়ে আমরা আমাদের পরিবারকে কিছু জানাই নি। তাই একথা এই মূহুর্তে যদি আমার পরিবারের লোকজন জানে, তবে ব্যাপারটা কোথায় গড়াবে বুঝেছ? আর আমাদের বিয়ের ব্যাপারে যদি আমার পরিবারের কারো অমত তৈরী হয়, তবে কি আমাদের বিয়ে করা আদ্যেও সম্ভবপর হবে?
শিউলী ভেবে দেখল আসলেই ব্যাপারটা তাই। তাই সে বলল- তাহলে তোমার বন্ধুদের কাছ থেকে ধার নাও। আমি কিছুক্ষন ভেবেচিন্তে যোগ-বিযোগ, গুন-ভাগ হিসেব করলাম। তারপর বললাম- দেখ শিউলী আমার জন্য কোন বন্ধু এইমূহূর্তে ১০,০০০ টাকা জমা রাখেনি। আর কারো কাছ থেকে পাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও আমি তাদের কাছ থেকে এইমূহুর্তে চাইতে পারি না। কারণ আমার বন্ধুদের সবাইকে আমার পরিবারের লোকজন চেনে এবং তারা আমার বাড়ীতেও সবসময় আসা-যাওয়া করে। আমি তাদের কাছ থেকে টাকা ধার নিলে, বিষয়টা আমার পরিবারের সকলের সামনে উঠে আসবে। আমি এইমূহুর্তে বিষয়টিকে আমার পরিবারের সামনে নিতে চাই না।
কথাগুলো শুনে শিউলীর আলোকজ্জ্বল মুখে মেঘের কালো ছায়া ফুটে উঠল। সে মন খারাপ করে জবাব দিল- তাহলে এখন কি করতে চাও? আমি বললাম, তুমি চেষ্টা করে দেখ না, ব্যবস্থা করতে পার কিনা? আমি না হয় পরে তোমাকে ব্যবস্থা করে দেব।শিউলী কিছুক্ষন ভাবল- তারপর বলল, দাঁড়াও দেখছি। আমি দেখলাম বিয়ের ব্যাপারে শিউলী মধ্যে আগ্রহটা প্রকট রূপ নিয়েছে। ওর দেখার কথা শুনে আমি বললাম, আর একটা ব্যাপার। আমাদের বিয়ের মধ্যে সাক্ষীরও তো প্রয়োজন- তার কি ব্যাবস্থা করবে। শিউলী জবাব দিল- আমার দিকের আমি দু‘জনের ব্যবস্থা করছি, তুমি তোমার দিকের ব্যবস্থা কর। আমি বললাম শিউলী এইমূহুর্তে আমার সাক্ষী ডাকতে হলেতো আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়। কারণ, আমি সাক্ষী হিসেবে ডাকতে গেলে আমার বন্ধুদের ডাকতে হবে। কিন্তু এইমূহুর্তে আমি তাদের ডাকাতে নিরাপদ বোধ করছি না। শিউলী একটু চড়া কন্ঠে বলল- তাহলে কি করতে চাও তুমি? শিউলীর এ কথায় আমি নিঁচু স্বরে বললাম- শিউলী, তুমি দেখ, সবকিছু না ঘুচিয়ে হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা এইমূহুর্তে আমার কাছে কেমন জানী ঠেকছে। তারপরও তুমি সবকিছুর ব্যবস্থা করতে পারলে আমি বিয়েতে দ্বিমত হব না। কারণ তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা আমার জন্যও কষ্টের ও দূর্বিসহ।শিউলী আমাকে পাশ কেটে আমার থেকে একটু আড়ালে থেকে কাকে যানি কল দিল, বেশ কিছুসময় ধরে কথা শেষে তার চেহারার ভাবে মনে হল সে আশাহত কোন খবর পেয়েছে। আমি তার কাছে জানতে চাইলাম শিউলী কি হল? শিউলী বলল- আমার এক বান্ধবিকে কল করেছিলাম। ও বলতেছে ও কালকে হলে দিতে পারবে। যদিও শিউলী আমার থেকে একটু আড়ালে সরে কথা বলেছিল, কিন্তু মোবিইলে কথা বলা বান্ধবীটাকে আমার পুরুষ-পুরুষ ঠেকল। কিন্তু আমি শিউলীকে এই ব্যাপারে কিছু বললাম না। আমি প্রসঙ্গটাকে এড়িয়ে বললাম তাহলে এককাজ কর, আমরা বরং কালই বিয়ের আয়োজন করি। তাহলে টাকারও ব্যবস্থা হবে, আমিও দু‘জন সাক্ষী বুঝিয়ে-সুজিয়ে ঠিক করতে পারব। অনেক ভেবে-চিন্তে শিউলী আমার সিদ্ধান্তেই রাজি হল। নিজেদের বিয়ের কার্য্যপ্রনালীর বিষয়বস্ত নিয়ে আমরা আরো কিছুক্ষন আলোচনা করলাম।
এরই মধ্যে রাতের আকাশের কালোরূপ ছড়িয়ে পড়ল। অনুরাগে আজকের আশাহত প্রত্যয়কে আগামীকালকের আশাপ্রদ প্রত্যয়ে রুপদান করার বাসনা নিয়ে আমরা দু‘জনে দু‘জনার পথের দিকে পা বাড়ালাম!!!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন