বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০১৪

অব্যক্ত প্রতিশোধ

সে অনেকদিন আগেকার কথা, মানে আমার দাদার আমলের কথা। সেদিনকার সময়ে ফজর মিয়া নামে এক ব্যাক্তি ছিলেন বেশ জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন। তো একদিন ফজর মিয়া বাড়ি যাচ্ছেন, বাড়ির রাস্তায় পৌঁছতেই দেখেন ফজর মিয়ার ছোটভাই মোহন মিয়া হনহন করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। ভাইকে এভাবে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে ফজর মিয়া তাকে থামালেন, আর জিজ্ঞাসা করলেন কিরে কই যাচ্ছিস? জবাবে মোহন মিয়া বলল- বাড়ি যাচ্ছি। ফজর মিয়া বললেন- বাড়ি যাচ্ছিস মানে? খাওয়া-দাওয়া করে যা। বলে রাখা ভালো ফজর মিয়া আর মোহন মিয়ার বাড়ি হতে দেড়ক্রোশ দূরে ছিল।
আর মোহন মিয়ার অবস্থাও বেশ খারাপ ছিল। মোহন মিয়া জবাব দিল- যে বাড়িতে কেউ বসার জন্যও বলছে না, সেখানে খাওয়া-দাওয়া করে যাব? কথাটা শুনে ফজর মিয়া বেশ কষ্ট পেল, তারপরও সত্য জানতে ফজর মিয়া আবার জিজ্ঞাসা করল- তোর ভাবী তোকে বসতে বা খেতে বলে নি? মোহন মিয়া জানাল না। ফজর মিয়া মোহন মিয়াকে বলল- ঠিক আছে তুই বাড়ি চলে যা বলে বাড়ির দিকে রওয়ানা হল। ফজর মিয়া নিজের মধ্যে একটু রূক্ষভাব নিয়ে বাড়ি গেল। গিয়ে তার স্ত্রীকে বলল- নাসিমা তোমাকে কি করে বলি, বলে আমতা-আমতা করতে লাগল। নাসিমা বেগম বলল- কি হল তুমি এমন করছ কেন? কি বলতে চাও বল। ফজর মিয়া বলতে লাগলেন- তোমাদের বাবার বাড়ির পাশের যে খড়ের মাচান ছিলো না, ওটায় কোন বাচ্চায় জানি আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। ওটা থেকে আগুন তোমাদের রান্নাঘর আর থাকার ঘরে লেগে সব পুড়ে গেছে। এখন বাড়ির সবাই বাহিরে হায়-হুতাশ করছে। একথা শুনেই নাসিমা বেগম বিলাপ করে কাঁদতে শুরু করলেন। ফজর মিয়া বললেন, শোনো কেঁদেতো কিছু হবে না, তুমি বরং বাড়ি থেকে যা কিছু প্রয়োজন তাদের থাকা খাবার জন্য তা নিয়ে রওয়ানা হও।
তখনকার দিনে যানবাহনের জন্য কোন গাড়ি ছিল না, গরুর গাড়ীই ছিল তখন মালামাল বহনের একমাত্র বাহন। নাসিমা বেগম বাবার বাড়ির সবার কয়েকদিনের খাবারের মতো ব্যবস্থা করে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিলেন। ফজর মিয়া বললেন, তোমার জন্য পালকি ধরিয়ে দিচ্ছি তুমি আগে আগে রওয়ানা হয়ে যাও। গরুরগাড়ী মালামাল নিয়ে তোমার পরই পৌঁছে যাবে। নাসিমা বেগম সায় দিয়ে পালকিতে করে রওয়ানা হয়ে গেলেন। নাসিমা বেগম চলে যেতেই ফজর মিয়া গরুরগাড়ীর চলককে বললেন মালামালগুলো তার ছোটভাই মোহন মিয়ার বাড়িতে পৌঁছে দিতে। গরুরগাড়ী চালক তাই করল।
পরদিন নাসিমা বেগম খুব সকাল-সকাল বাড়ী চলে আসল, এসেই ফজর মিয়াকে বললেন তুমি আমার সাথে মিথ্যা বলেছ কেন? ফজর মিয়া বললেন মিথ্যা বলব কেন? বাজারে শুনলাম, পরে তুমি পালকিতে চলে যাবার পর শুনি, ওটা মিথ্যা ছিল। তাই গরুরগাড়ী ফিরিয়ে না এনে ওটা মোহনের বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়েছি।
নাসিমা বেগম বলল- তুমি এটা কি বলছ। আমি মুটের পাতিলে মুগ ডালের ভিতর ১৯টাকা রেখেছিলাম। ফজর মিয়া বললেন কি? ১৯ টাকা রেখেছিলে? নাসিমা বেগম বলল- হ্যাঁ গো, হ্যাঁ। ফরজ মিয়া বললেন- ঠিক আছে আমি মোহনকে খবর পাঠিয়ে জানিয়ে দেব, মুটের ভিতর ১৯ টাকা আছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন