শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৩

কবিতাঃ অশ্রুহীন দৃঢ়তা

কেন এত হারানোর ভয় হয় আমার?
কি আছে এত যা ক্রমন্নয়ে আমাকে দাওয়া করে
ভয় দেখায় এই হারাবে বলে?

জীবন থেকে বড় চাওয়া, সে আমার মা
তিনি হারিয়ে গেছেন, ঐ ওখানে, ঠিক ওখানে

কবিতাঃ পৃথিবীর পাপ প্রায়শ্চিত্ত


আশ্রিত আমরা নরলোকে!
নোংরা নখ চিবুই,
বিশেষনে মিলাই ডানা
পালক পবন ভিবুই।

গদ্যশৈলীর শৃঙ্খল ভাঙ্গে
কাব্য কর্কশ প্রহসনে,
ঘন-সবুজ পল্লববিহার
পাংশু মেঘের আবরণে।

কবিতাঃ মা তোমার মমতার দাম কত?


[মাতৃবন্দনাঃ
মস্তক আজ নত মাগো তোমার শ্রীচরণে
তোমার মতো এমন মমতা কে দিয়েছে কোনখানে,
সহস্রযোজন স্বপ্নবিলাষ আমি সঁপিবো ভাবী চরণে
তবু কি কাটিবে ঋণ, মোহিত অজ্ঞজনে!
এইযে, আমার চরম অজ্ঞরূপ

কবিতাঃ ব্রতী


থাকতে পারে তব মনের মাঝে
ব্রত বাসনা
এই সমাজে ব্রতী হওয়া তবু
সহজ কথা না।
হিংসা, দ্বেষ আর ত্রাস
এই সমাজে বাস

কবিতাঃ বাসনার দু‘জোড়া চক্ষু

বর্ধিত পৃথিবীর সব চক্ষু স্বচ্ছতা হারিয়েছে
কাকচক্ষুর মতো স্বচ্ছ অক্ষিগোলকের
কৃষ্ণকালো কিংবা বিড়ালসবুজ মনি
অক্ষিগোলকের ধুম্র আচ্ছ্বাদনে মলিন হচ্ছে,
তাকিয়ে থাকা সজল চোখের আশায়
হৃদয় যেখানে দ্বীপ্তমান…
সে হৃদয় হয়তো ধূসর রঙ্গে, নতুবা টকটকে লালে
অক্ষিগোলকে উদীয়মান।

সহস্র-লক্ষ বছর ধরে আমি আকাঙ্খার ব্রত করে যাচ্ছি
দু’জোড়া সজল চক্ষু আমার খুব বেশী প্রয়োজন,
একজোড়া চক্ষু আমার নিকট বন্ধুর আর
অন্যজোড়া অন্তরঙ্গ প্রিয়ার,
তাদের প্রীতিময় আগ্রসন আমায় সইতে পারবে
পারবে আন্তরালে লুকিয়ে থাকা আমার ব্যথার ভার বুঝতে।

অনেক পথ হেঁটে চলছি আমি………
হয়তো স্বপ্নে, নয়তো অজানা ভাবাবেশে
তখন অজানা পথের পাড়ে ছুঁয়ে থাকা সৌন্দর্য্য দেখে
আমি বুক বেঁধেছি বহুবার
ভেবেছি; এই বুঝি দু‘জোড়া সজল চক্ষু আমার সামনে এসে দাঁড়ালো
আমি উচ্ছ্বাসে উন্মাদ হয়ে পড়লাম,
কিন্তু সে দু‘জোড়া চক্ষু
আমায় ভালোবাসার বাহুপাশে বেঁধে স্থির করল।

স্বপ্নের শৈল্পিক সৃষ্টি মনে যেমন, নীলেও তেমন
হঠাৎ কালোমেঘের ধুম্র আচ্ছাদনে ঢেকে পড়া
আবার উজ্জ্বল রোদ্রশিখায় হিরণ্যবর্ণে ছুঁয়ে দেয়া।
গোপনে নিয়ত আত্মদহন যখন প্রতিকুলতাকে ছেড়ে
অদূর বন্দরে ছুটে চলে
তখন মনে হয়…..
এই কালোমেঘ আর হিরণ্য আলোর দ্রুতিময় ব্যাপ্তীতে
আমি আশাহত হই
হারিয়ে যায় আমার মনের মাঝে এঁটে থাকা অস্পষ্ট বাসনার
সেই দু‘জোড়া চক্ষু,
অস্থির আর নেশাসক্ত চক্ষুগুলোতে তাই
আমি বিভাজনে বিভাজিত।

অধীর সমক্ষেপনে চলতে গিয়ে যখন ভাবনারাও ক্লান্ত হয়
তখন আভাস পাই, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ যন্ত্রনার
যা হঠাৎ বজ্রাঘাত হওয়া নতশীরে অস্পষ্ট দেখাটাকেও আরো কালো করে গভীরে
বলে চলে, বহুযুগব্যাপি তোমার অন্তরের জমানো ভাবাবেশ বিনষ্ট হল আজ
তুমি শুধু অতৃপ্ত বাসনায় সেই দু‘জোড়া চক্ষুর আশায়ই জীবন খোয়ালে।

কবিতাঃ কবিতায় আর কি লিখব?

কবিতায় আর কি লিখব?
যখন শতসহস্র শতাব্দীর আঘাতের ক্ষত হৃদয়ে নিয়ে আর্তচিৎকারে বলতে পারিনি
ঐ ক্ষমতাশালী হিংস্রজানোয়ারের দল, তোরা আমাদের অধিকার লুটে নিয়েছিস,
আমাদের ঠেলে দিয়েছিস অন্ধকারের অতল গহ্বরে
আমাদের হৃদয় ঘুনো পোকায় খাইয়ে করেছিস ক্ষত-বিক্ষত।

নিয়তিকে আমরা মেনেছি, সব আমাদের নিয়তি! হাঃ হাঃ হাঃ, সব আমাদের নিয়তি!
আমরা নিয়তি মানি, নিয়তির পদতলে উষ্ঠা খাওয়া যন্ত্রণার স্বরূপ মানি
ভাবী; আমরা সহায় সম্বলহীনরা প্রতিবাদে যাব? আমরা প্রতিবাদ করব গলা ফাটিয়ে?
দেখ; পাগল কুকুর বলে আমাদের ক্ষেপিয়ে সামনের দিকে তাড়িয়ে দৌড়াচ্ছে।
আমরা নাকি পাগল হয়ে গেছি, সবাই হাত উঁচু করে আঙ্গুল তুলে বলে যাচ্ছে,
অবিবেচকরা পাগল হয়ে গেছে! অবিবেচকরা পাগল।
সবার কথায় আমরা আজ বুঝেছি, সময়ের খরস্রোতে আমরা পাগলের প্রলাপ বকছি।

কেউ আমাদের বুঝলনা! কেউ আমাদের ভাষা বুঝেনা!
আমরা শুধু গলা ফাটিয়ে আমাদের অধিকার চাইছি, অথচ সবাই আমাদের পাগল ভাবছে।
আমরা শান্তনা নিতে ঘুরছি না? কারণ আমরা আজ জেনে গেছি শান্তনা আমাদের বার-বার স্তব্ধ করছে
শান্তনা আমাদের রক্তঝরা ঘামে সুবিধাভোগীদের জিহ্বা হতে লালসাতৃপ্ত স্বাদক্ষরণ করেছে
ওরা আমাদের সবকিছু চেটে খেয়েছে, আমাদের করেছে নিঃস্ব পদদলিত।

ওহে নির্বাক জাতি, তুমি আজ অবাক! আমরা হতবাক!
পথে-পথে অবিবেচকরা হুন্নি হয়ে ঘুরবে অধিকার স্থাপনে?
বল অধিকার কি তারা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে অজ্ঞতার প্রহসণে?

কিছুই হবেনা, হিংস্রনখরের থাবায় রক্তকনা ঝরে-ঝরে চারদিকে ছিটাবে
পথ-ঘাট রঞ্জিত হবে লালরঙ্গে, প্রাপ্যতা হবে লালরঙ্গে রঞ্জিত সিক্ত ভেজা মাটি।
শুধু একটা আশাই পুষি নীরব যতনে আমরা, যদি এই মাটি কখনো কথা বলে,
তবে বেঁচে থাকবে অবিবেচকরা, বেঁচে থাকবে অবিবেচকদের স্বপ্ন কবিতা
সে প্রত্যাশায় কবিতা লিখি নরদানবদের হাত থেকে অধিকার অর্জনের রক্তশিহরণে।

কবিতাঃ আগুন জ্বলবে ঘরে-ঘরে

ধর্ম পুড়ছে, ধর্ম পুড়বে কিছূ হবে না
মানবধর্ম উঠেছে যখন, ঘুছবে ধর্মের সাধনা?
বৌদ্ধমন্দির জ্বলেছে কাল, মসজিদও একদিন জ্বলবে
মন্দিরে যখন লেগেছে আগুন, প্যাগোডাও পুড়বে।
হাঃ হাঃ হাঃ, সব উপসনালয় পুড়বে
ধর্মসাধনা সব গুলবে……

কবিতাঃ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের রূপরেখা!

মুখে একদলা থু-থু ছাড়া এই আমাদের
ঘৃণা করার আর কোন ভাষা অবশিষ্ট নেই
বিশ্বব্যাপী মানবতা নিধনযজ্ঞে
যে ক্ষোভ কিংবা উৎসাহের জোয়ার ধারা
স্পষ্ট হচ্ছে দিনকে-দিন
তা প্রকাশে অশ্রুহীন অসহায় মনদগ্ধ হৃদয়
থু-থু ছিটানো ছাড়া কি বা আর করতে পারে?

কবিতাঃ প্রার্থনা- ওহে; প্রাণত্রাতা

সতত পুরাণের বানী,
কোরানের বানীতে জ্ঞাণী
লঙ্ঘিত যদি হয় মানবতার গান,
ওহে; প্রাণত্রাতা,
তুলে নাও মোর ত্রাণ, এই প্রাণ।


কবিতাঃ আমি এখন রাস্তায় পচে যাওয়া শেয়াল-শকুনের খাবার


শরীরের মাংস আমার পচেছে
কাকভক্ষকের নেশা ধরানো দূর্গন্ধে
মাতাম হয়েছে মাটি-আকাশ-বাতাস
এখনি কি তবে হানা দেবে শেয়াল-শকুনের দল?
আমার কোন ণীতি নেই, ছিল না
পতনের যাতনা যাকে নর্দমায় ছেড়ে গেছে
অম্লান বদনে তার নিঃশ্বাসও বড় কঠিন,

কবিতাঃ পূর্বপ্রজন্মের ইতিহাসের ভগ্নস্বপ্ন উন্মোচণের ইতিকথা

এ মাটি এর আগে কখনো ভালোবাসিনি এত
এই আমাকে যেমন, আমার মাকে যেমন,
আমার পরিবার-পরিজনকে যেমন…


স্নিগ্ধতার বিথীকারতলে যেদিন মা আমার নিরবে শুয়ে রইল
সেদিন হতে এ মাটির তত্ত্ববেদনটুকু যেন
আমার ক্ষুদ্রপ্রাণের আজীবনের লালনের সুখ
যা মিছিলে-মিছিলে সায়ে তিনহাত মাটির সুখ খুঁজে বেড়ায়
১ লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার প্রান্ত ছুঁয়ে……


কবিতাঃ ভালোবাসার সামনের দেয়ালটাই সত্য, স্মৃতিমন্থনে

তবুও আজ নিষিদ্ধ প্রান্তরে চোরাকাঁটায় হেঁটে যাব-দ্বিধাহীন
পিছনে সীমান্ত লঙ্ঘনে ছুটে আসুক আক্রোশ; বিক্ষত হোক দু‘পা বীষকাঁটায়
রাখব না তবু আশা জড়ানো স্বপ্ন, করব না কভু নবসুখে অন্তর রঙ্গিন ।
গীরিখাতে সুখ নেই, অদম্যতায় পীড়ণে জড়াই নিরবধি
দৃষ্টির সীমানা ভ্রুকুটি লঙ্ঘন করে নীলপ্রান্ত ছৌঁয় ঐ অদূর স্বপ্নলোকে
যেখানে পৌঁছে যায় ফিরিয়ে দেয়া অব্যর্থ ঘৃণার অন্তঃ; আদি।


কবিতাঃ জন্মান্তরের দায়


আমি শয়নে সঁপেছি দেহ-মন আমার
তোমার উষ্ণ ক্রোধে,
তুমি লবিলে সুখ তৃষিত বুকে
প্রগাঢ় নিঃশ্বাসে বেঁধে।
সেই বাঁধনের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারে
ভেঙ্গে গেছে অদূর তার

কবিতাঃ কে বলে ঠাঁই নাই তার?

নীড়হারা পাখি;
ভেবনা খুঁজে যাবে ফিরে
নীড়ে!
যাও উড়ে দূরে
ঐ‘দূর; বহুদূরে……
যাও পথভূলে ছড়িয়ে সীমানা
আছে কেউ ঐ‘পথে ভেব না।

কবিতাঃ ভালোবাসার কথা

নীশিতে নিমগ্নচিত্তে করি
কাহারে লালন?
কি লাজে মুখ রাঙ্গে, বুক ভাঙ্গে?
ডুরিয়া বুকে হয় গোপন।


কিসে বেষ্টিত মুখ তার?
এত-এত চাহিয়া ফিরি
গোপনে ফুলবাসরে
এত-এত যতন করি।