শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৩

কবিতাঃ পূর্বপ্রজন্মের ইতিহাসের ভগ্নস্বপ্ন উন্মোচণের ইতিকথা

এ মাটি এর আগে কখনো ভালোবাসিনি এত
এই আমাকে যেমন, আমার মাকে যেমন,
আমার পরিবার-পরিজনকে যেমন…


স্নিগ্ধতার বিথীকারতলে যেদিন মা আমার নিরবে শুয়ে রইল
সেদিন হতে এ মাটির তত্ত্ববেদনটুকু যেন
আমার ক্ষুদ্রপ্রাণের আজীবনের লালনের সুখ
যা মিছিলে-মিছিলে সায়ে তিনহাত মাটির সুখ খুঁজে বেড়ায়
১ লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার প্রান্ত ছুঁয়ে……



অনেক ঘৃনা জন্মেছিল মনে
চলতে পথে এই মাটির বুকে পেতে রাখা বিচিত্র কাঁটার যন্ত্রণায়
যখন, নিয়ত রক্তাক্ত হত দেহ, তখনই ভেবেছিলাম
না এ‘মাটির বিস্বাদ মমতা জন্মান্তের শত্রু।
এথায় বাঁচা হবে না, সুখ হবে না, যতটুকু সে অন্তরপীড়ণ……


আজও পথে-ঘাটে কাঁটার আঘাতে রক্তাক্ত হই…
তবে এ‘যন্ত্রণা আগের মতো আবেগী আহত হৃদয়ের নয়,
এই যন্ত্রণা বেঁচে থাকা পথে দৃড় আহ্বানের
যা, নিয়ত বজ্রকন্ঠে শব্দস্বর সৃষ্টি তুলে অবজ্ঞায়
আর তাপীত মনে বয়ে চলে মাটির অন্তর কথায়-
““আমি মাটি- শব্দ ঝঙ্কারে নদীরপানে কলকল ধ্বনির আবডালে
তোমাদের কানে পৌঁছুতে চেয়েছি আমার রক্ত প্রবাহিত ক্ষোভ
রাষ্ট্রদ্রোহিদের কন্ঠানলে স্তব্ধ হচ্ছে বার-বার,
তখনও তোমরা জেগে উঠলে না, চাইলে না এই আমার পাণে,
নিকটে নিজেকে ভালোবাসলে, অথচ যেচে দেখলে না,
রাষ্ট্রদ্র্যোহিদের উদরে জন্ম নেয়া, জারজদের দ্রুত বংশবৃদ্ধির চুড়ান্ত দ্বারে
আমি কতটা বেসামাল হয়ে পড়ছি।
–মমতা আমার অগ্রাহ্য অন্ধকারেই বুঝি পতিত হল?””


নিজের প্রতি ক্ষোভ আজ নিজের আড়ালেই স্পষ্ট হয়
সন্ধিহান হই, নিজের স্বার্থ কুক্ষিগত করার জন্য যখন মন অবিচল হতে চায়,
ভাবি; একি তবে সত্য; স্বাধীন দেশে মনে রাজাকারদের মতো সহবস্থান?
শুধু নিজের লিপ্সাপুরণের সুখ, যা চুড়ান্তে পৌঁছে দিচ্ছে দেশকে
পূণরায় রাষ্ট্রদ্র্যোহিদের নরকীর স্বার্থ পিপাসার তরে……


ঘুমের মধ্যে স্বপ্নের অবগাহনে তখন কানে বাজে,
স্বাধীনতার যুদ্ধ; মা-মাতৃকার মমতার পরশ আজ নিরর্থক ঠেকে?
মুক্তির সংগ্রামে যে মাটির বুকে ত্রিশলক্ষ দেহাবশেষ মিশে একাকার হয়েছে
তার যন্ত্রনায় বুকে কতটা ক্ষত হয়েছে, সে অনুভব করতে পারি না,
শুধু চেয়ে-চেয়ে ভাবান্তর হই,
এতগুলো রক্তেরদাগ এত তাড়াতাড়ি শুকালো কেমন করে?
নয় মাসে বাংলার আকাশ জুড়ে যে আহাজারী আর তিক্তক্ষোভের জন্ম হয়েছে
৪১‘বছরে তার শব্দধ্বনি বিস্মৃতি হয়ে গেল কেমন করে?
যে দর্ষিতা মা-বোনরা অভিশাপ দু‘হাত ভরে দিয়েছিল,
অসহায়ের অন্তরের অভিশাপ প্রতিনিয়ত বর্ষিত হয়েছিল
তার গজব এত তাড়াতাড়ি শেষ হল কেমন করে?
তবে কি মুক্তিকামীরাও সেদিন দ্বীধাগস্থ ছিল?
তাই স্বাধীনতার পরবর্তী সময়কালে
রাষ্ট্রদ্র্যোহিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিজেদের পাপের প্রায়চিত্ত করেছিল
আর প্রজন্মান্তরে তা ভূলিয়ে রাখার চেষ্টা অব্যহত রেখেছিল?


আমরা ভূলে যাচ্ছি; ভূলে যাব,
৪১‘বছরে যখন স্বাধীনকামী মানুষ তার নীপিড়নের কথা আমাদের স্পষ্ট করছে না
স্পষ্ট করতে পারছে না, এই স্বাধীন দেশে রাষ্ট্রদ্র্যোহিদের ক্ষমতা পূনঃগ্রহণের কথা
স্পষ্ট করতে পারছে না, কারা রাষ্ট্রদ্র্যোহি আর কারা মুক্তিকামী?
কেন রাষ্ট্রদ্র্যোহিদের এতটা প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় কাজে?
কেন অন্য আর সকল স্বাধীন রাষ্ট্রের মতো রাষ্ট্রদ্র্যোহিদের আজও
পাগলা কুকুরের মতো গুলি করে উন্মুক্ত প্রান্তরে মারা হচ্ছে না?
কেন স্বাধীনদেশে অবস্থান করেও আমরা পৃথিবীর ইতিহাসে সাক্ষ্য রাখছি
রাষ্ট্রদ্র্যোহিদের বিচার জনবিশেষে ভিন্নভাবে করার মনোভাব পোষন করছি?


এ‘মাটি আজ আবার বিপন্ন…..
বিশ্বাস পাইনা কোথাও এই মাটিকে বিপন্ন সময়ে বাঁচিয়ে রাখার
যেদিকে তাকাই শুধু চোখে পড়ে কুক্ষিগতস্বার্থসিদ্ধ করার জন
নিলজ্জ বেহায়ার মতো চারিদিকে হোলি আনন্দে মত্ত ছেটে খাওয়ারদল
কামনা পূরণ হলেই তারা শত্রুকে বন্ধুভাবাপন্ন করে
ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বেঁধে নিতে বলে যারা তাকে মতাদর্শ ভাবতে চায়, তাদের।


আমরা নিঃশব্দে এগিয়ে যাচ্ছি, মৌণতা সম্ভল হচ্ছে আমাদের
নিজেদেরকে দেশপ্রেমী বলিনা, দেশের মমতা প্রাণান্তচিত্তেও দেখাই না
শুধু ক্ষুদ্ধচোখের ভাষায় একটা ধৌঁয়াশার ভিতরকার পথে চলছি
দেখছি আর কতটা যন্ত্রণা সহ্য হয়, মানবিকচিত্তে
দেয়ালে পিঠ ঠেকলে আর‘তো পিছ‘পা হতে পারব না
তাই খুব শিঘ্রই ছুটে যাব ভাবী অপারগ কাঁটাঘেরা পথের সামনে দৃড়তায়
যেখানে নতুন রক্তের স্রোতধারায় সিক্ত মাটি
নব্য স্বাধীনতায় বলবে পূর্বপ্রজন্মের ইতিহাসের ভগ্নস্বপ্ন উন্মোচণের ইতিকথা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন