শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৩

কবিতাঃ মা তোমার মমতার দাম কত?


[মাতৃবন্দনাঃ
মস্তক আজ নত মাগো তোমার শ্রীচরণে
তোমার মতো এমন মমতা কে দিয়েছে কোনখানে,
সহস্রযোজন স্বপ্নবিলাষ আমি সঁপিবো ভাবী চরণে
তবু কি কাটিবে ঋণ, মোহিত অজ্ঞজনে!
এইযে, আমার চরম অজ্ঞরূপ


মাতৃরূপে লালন করিলে, দেখিয়ে কোমল রূপ
সে রূপ আমি সময়ে হেলিলাম, অসময়ে করি রোধণ
জানি মাগো ঠাঁই কেথাও না হলেও, পাবো রাঙ্গা চরণ।
মাতৃভূমি মাতা আমার হৃদয় সু-শীতল
মাটি, জল, আলো আর বায়ু সু-নির্মল,
এমন মমতায় ভরে প্রাণ, করেছ যে জ্ঞান দান
যুগান্তকাল রাখিব বুকে, রচিব শ্রশদ্ধ সম্মান।
মাগো করো সে আর্শিবাদ,
যেন আমাতে আমি থাকি সদা, করিতে তোমার প্রণিপাত
মনের মাঝে ফুটুক সদা, কল্লোলিত সু-প্রভাত।]

****আমার এই কবিতাটি বিশ্ব মাতৃত্বের উদ্দেশ্যে……….

ওগো মা, জেনেছি তোমার মমতার অবদান শত
আজ বলে যাও মা তুমি, তোমার মমতার দাম কত?
একছেলে তোমার উপরে থাকবে, অন্যছেলে করবে মাথা নত
নিচুর মাথা নিচু থাকবে, উপর জনের অপরাধ মাপ শত!

এ কেমন বিহীত! এ কেমন দ্যোরাক্ত!
একজনের জীবনে পরম শান্তি, অন্যজন দহনে তপ্ত
এ কেমন দ্রোহিতা! এ কেমন মৌণতা!
একজনের চোখে সুখের স্বপ্ন, অন্যজনের অন্ধকারে দিনকাটা।
এ কেমন অস্পষ্টতা! এ কেমন দীণতা!
একজন হাসে চোখে-মুখে, অন্যজনের অশ্রুশূন্যতা
সহাসে আজ মর্ত্ত শক্ত, বহাসে সহে ব্যথা নিয়ত
হাসি-কান্নার কেন এমন প্রাতঃ!
তোমার মমতার দাম কত?
একছেলে থাকে তোমার আঁচল তলে,
অন্যছেলে কেঁদে যায় শূন্য অতলে
প্রহসিকায় এ কোন ভাবে ক্ষত!
তোমার মমতার দাম কত?

মা তোমার;
একছেলে বসে রাজস্থলে, অন্যজন তার পায়ের তলে
প্রিয়হীন খেয়ে লাথি, পড়ে আজ ভুমি তলে!
এ বাসনা কেন লালন! করেছ মা হৃদয়ে ধারণ!
কি হাসিতে তুমি ছিলে মোহিত!
তোমার মমতার দাম কত?

মা;
একছেলে তোমার হয় ধনী, অন্য ছেলে খায় কনি
কনির ছোটে প্রান মরে, জোর গলায় ধ্বনি কিসের শনি!
এ কেমন হীনতা! এ কেমন অজ্ঞতা!
একজনের ভাগ্যে কাঁঠালের কোঁসা, অন্যজনের ভাগ্যে ভোঁতা
এ কেমন কঠোরতা! এ কেমন নির্মমতা!
একজনে খায় চুরা ডাল, অন্যজনের মাথায় যাঁতা।
এ কেমন রূঢ়তা! এ কেমন কঠিন্যতা!
একজনের মুখে সুখের প্রয়ান, অন্যজনের ভগ্ন বুকের পাটা।
দীণবেশে আজ শ্রিহীন শীত, এ আবার কেমন গীত!
কেন দিন-রাত্রি এত পালাবদলে রত!
তোমার মমতার দাম কত?
একছেলে তোমার চোখে-চোখে,
অন্যছেলেকে পথে রেখে
অহমিকতার এ কোন ভাবে রত!
তোমার মমতার দাম কত?

মা তোমার;
একছেলে থাকে দালান-কৌঠা বানিয়ে, অন্যজন থাকে ছনচাচিয়ে
উচ্ছেদ করে তাকে সন্ত্রাস দিয়ে, যে থাকে ছনের ঘরে পড়ে
এ‘বাসনা কেন অন্তর-মন! গড়েছ মা সহস্র যোজন!
কি কারণে হয়েছ তুমি যুত!
তোমার মমতার দাম কত?

মা;
একছেলে তোমার ভন্ড দরদী, অন্যছেলে বজ্রকন্ঠে প্রতিবাদী
সত্যস্বর মুছে মিথ্যে প্রহসণে মা, অসভ্যতার জয় নিরবধী
এ কেমন ভূল-ভ্রমতা! এ কেমন ভাবলেশহীনতা!
একজনের মিথ্যায় অগ্রযাত্রা, অন্যজনের ভাগ্যে অস্থিরতা
এ কেমন বীষযন্ত্রণা! এ কেমন নির্মম যাতনা!
এজনের খাওয়া ঘুম, অন্যজনের সকল ভাবনা!
এ কেমন প্রীতিহীনতা! এ কেমন সহ্যশীলতা!
একজন যাবে স্বর্গপানে, অন্যজন নরকঘৃণীতা!
হীনতার ঘৃনীত ফাঁদে বসে, কেন হৃদয় বারংবার ক্ষত!
শুক্ল-কৃষ্ণ কেন এত ধৃত!
তোমার মমতার দাম কত?
একছেলে তোমার ছায়ায়-ছায়ায়,
অন্যছেলে ত্যাগে মায়া
বিদ্র্যৌহিতায় তুমি মা কেন হও নন্দিত!
তোমার মমতার দাম কত?

মা তোমার;
একছেলে থাকে মন পাটনে, অন্যছেলে দীণজনে
তৃষ্ণার্থ একছেলে তোমার, চেয়ে আছে মুখের পানে
প্রিয় সুদন অন্যছেলে তা এসে দেখে
অসহনীয় সব ব্যথা, যন্ত্রনা পলকে।
মা তুমি, কোন আলো আজ দেখতে চাও?
তৃষ্ণার্থ শিশুকে তৃষ্ণায় মেরে, তুমি প্রকৃতই কি পাও?
একছেলেকে সব মমতা দিয়ে,
কি মুগ্ধে তুমি হয়েছ রত
ঘৃণায়, আক্রোশে অশ্রু ঝেড়ে বলি
তোমার মমতার দাম কত?

একছেলে তোমার হয় বাতাস, অন্যছেলে পায় পাতার আঁশ
একছেলের চলার পথে দেখী, অন্যছেলের নেই আশপাশ।
এ কেমন আগ্রহ চাঞ্চল্যতা! এ কেমন দূরদর্শিতা!
একজনে চলবে শূন্য মোহিতে, অন্যজনের সরব চিতা।
এ কেমন রৌদ্রের তপ্ততা! এ কেমন পবনক্রোধক্ততা!
একজন অক্ষরহীন দত্ত্বা হয়ে শুনবে, অন্যজনের চেতা।
এ কেমন নিস্পোশিতা! এ কেমন ক্ষনদহতা!
একজনের প্রাপ্যফলে, অন্যজনের জোর খাটা।
প্রিয়তার এ কেমন অপ্রিয় বাসনা,
আলো-কালোর যুদ্ধ দ্যৌদনা।
কি কারনে চিরপ্রতিদ্বন্ধিতা এত!
তোমার মমতার দাম কত?

মা তোমার,
একছেলে থাকে মরূরদেশে, অন্যছেলে থাকে শৈত্যরসে
জ্বলে-পুড়ে মরে একছেলে, চেয়ে আছে শৈত্যদেশে
অন্যছেলে তা শুনে, হয়েছে হত-বিব্রত
তাইতো দহণ শরীরে নুন হয়েছে যুত।
মা তুমি আজ কোন প্রিয়তা পেতে চাও!
আগুনের দহনে দগ্ধ করে ছেলে, কি সুখে মন গড়াও!
এক তনয়ের শৈত্য গড়িয়ে,
কোন আলোয় সব কর ব্যক্ত
প্রিতীভাষ্য বহালে বলি
তোমার মমতার দাম কত?

মাগো; ও মা
কেন আজো এমনতরো আদি বাসনা।
যদি আজো এমনতর হয় শৃঙ্খল
জন্মান্তের ঋণ কি হবে মূখ্য মা বল!
ভাবি; দুই ভাইয়ের একভাই গড়ায় শিকল, অন্যভাইকে করতে বিকল!

মাগো; ও আমার মা
সন্তানতো তোমারই দু‘জনা
তবে, সম-শাসন, মমতায়
তুমি কি গড়তে পার না?
কেনই বা থাকে উপরে, সন্তান তোমার একজনা
ভাইয়ের মৃত্যুতে ভাই কেন, পায়না এতটুকু যন্ত্রণা।

ও মা, বলি আজ অন্তরের কথা
সন্তান তাই, জান মানি তার মনের কথা,
একজনের জন্য যখন বুনেছ কাঁথা, অন্যটা হলেই টিপ গলাটা
তাহলে আর তার লাগবেনা কাঁথা।
যদি দুই সন্তাই চাও, কাঁথা গড়াও বড় করে
ভাগ করে দাও সমান করে, বড় হলে দু‘জনাতে পরে।
দিও দু‘জনাতে সমান কঠোরতা, দু‘জনা যেন পায় সমান শিক্ষা
বালুচরে কেঁদে কেউ যেন, চায় না কেহ অন্যত্র ভিক্ষা।
এমন সমান আধল গড়তে পারলে, তাতে মা তুমি হইও রত
এর ব্যতীত হলে সন্তান, জিজ্ঞাসিবে মমতার দাম কত?
তখন মা তোমার আহত হবে হৃদয়
ব্যাথায় ব্যথিবে অন্তরমনা
মমতার দাম বিস্রাবে সবে
যাবে অমূল্যে মমতা ষোল আনা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন